পুজোতেও পাহাড়ে আসছে না পর্যটকরা, চিন্তিত ট্যুর অপারেটররা
এবার পুজোতেও পাহাড়মুখী হচ্ছেন না পর্যটকরা। এমন অবস্থায় সঙ্কটে ট্যুর অপারেটররা। অন্যান্য বছর এ সময় পর্যটকদের ভিড়ে পাহাড় গমগম করত। তাঁদের টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, চিড়িয়াখানা, রক গার্ডেন, সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক প্রভৃতি এলাকায় নিয়ে যেতে ট্যুর অপারেটরদের সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হতো। এবার বুকিং নেই। তাই অফিসে কিংবা পকেটে থাকা মোবাইল ফোনে ঘনঘন রিংও বাজছে না। এ সময়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও ভালো বিক্রিবাটা হতো। পর্যটক না আসায় হকার, গাড়িচালক সকলেরই হাত খালি।
পাহাড়ে পর্যটন মরশুম তিন দফার হয়। বছরের একটি মরশুম চলে গিয়েছে। পুজোর সময়ে দ্বিতীয় মরশুমেও পর্যটকের দেখা নেই। তৃতীয় মরশুম শুরু ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু ওই সময়েরও হোটেল, রিসর্ট, লজ ও হোম স্টে কোথাও কোনও বুকিং নেই। ট্যুর অপারেটরদের দাবি, করোনা ভাইরাস একেবারে শেষ করে দিয়েছে পর্যটন ব্যবসাকে।
কলকাতার বাসিন্দা সন্দীপ সিং এবারও পুজোর ঠিক আগে দার্জিলিংয়ে বেড়াতে এসেছেন। এবার তিনি দ্বিতীয়বার পাহাড়ে এলেন। সন্দীপবাবু বলেন, দার্জিলিং পাহাড়ে পর্যটকের ভিড় নেই। ম্যাল সহ রাস্তাঘাট ফাঁকা। দার্জিলিংয়ের এই শুনশান ছবি ভাবা যায় না।
দার্জিলিং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাসি ভুটিয়া বলেন, আনলক পর্ব চলছে। তারপরেও পাহাড়ে পর্যটক নেই। পাহাড়ের সর্বত্র হোটেল, লজ ও রিসর্ট খাঁ খাঁ করছে। ডিসেম্বরের আগাম বুকিংও নেই। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ট্যুরিজম বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সুরজ শর্মার গলাতেও হতাশার সুর। তিনিও বলেন, পাহাড়ে এর আগের মরশুমে কোনও পর্যটক আসেননি। দুর্গাপুজোতেও পাহাড় ফাঁকা।
সমতলের হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, হোটেল, রিসর্টে বুকিং নেই। তবে লামাহাটা, সিটং, তিনচুলের জনপ্রিয় এলাকার হোম স্টেগুলিতে অল্পস্বল্প বুকিং আছে। ট্রেন চলাচল স্বাভবিক হলে হয়তো কিছু বুকিং হবে। এই মরশুমে আমাদের ব্যবসায় বিপুল ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়ে আছি।
জুন মাসের ১ তারিখ থেকে আনলক পর্ব শুরু হয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। এখন কিছু সংখ্যক ট্রেন চলছে। তবে সড়ক পথ স্বাভাবিক হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু দার্জিলিং, মিরিক, কার্শিয়াং কিংবা কালিম্পং পাহাড়ের কোথাও পর্যটকদের দেখা নেই। পুজোর আগে প্রতিবছর গাড়িভাড়া পর্যটকদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যেত। এবার পেট চালাতে চালকরা সস্তায় গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন। তারপরেও পর্যটকদের দেখা নেই বলে পাহাড়জুড়ে হা-হুতাশ চলছে।
দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক সূত্রে খবর, প্রতিবছর অক্টোবর মাসে চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন গড়ে ৮০০০ পর্যটক আসেন। করোনার জেরে এবার অক্টোবর মাসে সেই সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ১৮০’তে ঠেকেছে। একই করুণ চিত্র পাহাড়ের অন্যতম দ্রষ্টব্য টাইগার হিলেও। বনদপ্তরের স্থানীয় ফরেস্ট রেঞ্জার উত্তম প্রধান বলেন, প্রতিবছর অক্টোবরে এখানে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ পর্যটক বোঝাই গাড়ির আনাগোনা হয়। ভোরে পর্যটকের ভিড়ে গমগম করত টাইগার হিল। করোনার কোপে এবার কার্যত ফাঁকাই থাকছে। সবমিলিয়ে করোনার জেরে পর্যটনের ভরা মরশুমেও পর্যটক না আসায় পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসার কোমর ভেঙে গিয়েছে। তীব্র আর্থিক মন্দায় ধুঁকছে এই ব্যবসা। পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসা কবে ঘুরে দাঁড়াবে কেউ জানেন না।