৩ বছর পরে আচমকা প্রকাশ্যে বিমল গুরুং
গত তিন বছর ধরে পুলিশের খাতায় তিনি ফেরার। শুধু ফেরার বললে কম কথা বলা হবে, ইউএপিএ আইন সহ একাধিক মামলা তাঁকে এক সময়ে হন্যে হয়ে খুঁজে বেরিয়েছে পুলিশ। সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্তের তালিকায় নাম ছিল তাঁর।
সেই তিনি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুং বুধবার পঞ্চমীর দিন বিকেলে হঠাৎ এলেন সল্টলেকের গোর্খা ভবনে।
এদিন সকাল থেকেই রাজনৈতিক শিবিরের গুরুংকে ঘিরে নানান জল্পনা চলছিল। এও শোনা যাচ্ছিল, নবান্নে যেতে পারেন বিমল গুরুং ও রোশন গিরি। তার পরেই জানা যায়, সল্টলেকের গোর্খা ভবনে যেতে পারেন গুরুং। সেই তথ্য ভুল ছিল না। বিকেল পৌনে ৫ টা নাগাদ দেখা যায় একটি ধবধবে সাদা ল্যান্ডরোভার ডিসকভারি স্পোর্টস গাড়িতে চেপে গোর্খা ভবনের সামনে পৌঁছে গিয়েছেন গুরুং।
গাড়িটির নম্বর প্লেট অবশ্য ঝাড়খণ্ডের। পাশে বসে পিছনের সিটে তাঁর পাশে বসে রয়েছেন এক গেরুয়া বসনধারী। তাঁর গলায় বড় বড় সব রূদ্রাক্ষের লম্বা লম্বা মালা। মাথায় গেরুয়া পাগড়ি।
কিন্তু নাটক এখানেই শেষ নয়। দেখা যায়, গোর্খা ভবনের গেটের বাইরে গাড়িতে বসে রয়েছেন গুরুং। কিন্তু গোর্খা ভবনের গেট খুলছে না। এক পুলিশ কর্মী গোর্খা ভবনের গেট ধরে ঝাঁকালেও গেট খোলেনি। গুরুংকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি এখানে কেন? তাঁকে তো পুলিশ খুঁজছে। জবাবে গোর্খা নেতা বলেন, “যা বলার ভিতরে গিয়েই বলব”।
যদিও ভিতরে গিয়ে বলা হয়নি গুরুংয়ের। কারণ গেট খোলেনি। ফলে দেখা যায়, গুরুং গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য কোনও গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। কোথায় তিনি যাচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়।
বাংলায় তৃণমূল সরকারের সঙ্গে গুরুংয়ের সংঘাতের কথা অজানা নয়। সেই সংঘাতের তীব্রতা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে গুরুং দার্জিলিং ছাড়তে বাধ্য হন। লুকিয়ে থেকে গোপন আস্তানা থেকে স্রেফ অডিও মেসেজ পাঠাতেন এই গোর্খা নেতা। একদিকে যখন গুরুং গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন, তখন অন্যদিকে তখন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায় তাঁর স্থানে বিনয় তামাংকে উঠে আসতে সুবিধা করে দিয়েছিল বাংলায় শাসক দল।
সেই পরিস্থিতিতে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গুরুংয়ের পাশে ছিল বলেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু গত কিছুদিন যাবৎ জল্পনা চলছে যে গুরুংয়ের সঙ্গে বাংলায় শাসক দলের কিছু একটা বোঝাপড়ার চেষ্টা চলছে। সেই কথা অবশ্য অডিও মেসেজে খারিজও করেছিলেন গুরুং। তার পরই আজ বুধবার গুরুংয়ের আবির্ভাব ঘটেছে।
কৌতূহলের বিষয় হল, সত্যিই কি শাসক দলের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হয়েছে গুরুংয়ের? না হলে যে গুরুং এতোদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি সশরীরে সল্টলেকে কেন? কেনই বা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্রিয় নয়?