দর্শকশূন্য মণ্ডপ, তবু ভাটা পরেনি ঠাকুর দেখার উৎসাহে
মণ্ডপ দর্শকশূন্য হলেও ১০ মিটার দূরত্বে যেখানে দর্শনার্থীদের আটকানো হবে সেখানে ভিড় হবে না তো? গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া ‘ঐতিহাসিক’ রায়ের পর থেকেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। পুজো উদ্যোক্তাদের প্রশ্ন, ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ডের সামনে ভিড় হলে দায় নেবে কে? আদালত জানিয়েছিল, বাইরের ভিড় নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব পুলিশের। এ ক্ষেত্রে পুজোগুলিরও যে দায়িত্ব থাকে, নানা মহলের আলোচনায় সে কথা উঠেছিল।
বুধবার পঞ্চমীর দুপুর থেকে মণ্ডপের দশ মিটার দূরত্বে প্রতিমা দেখতে উৎসাহীদের দেখে অনেকেরই বক্তব্য, দায়সারা অবস্থান নিল পুজোগুলি। সেই দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণে দেখা গেল না পুলিশি তৎপরতাও। রাত যত গড়াল ততই বাড়ল উৎসাহীদের সংখ্যা! যদিও একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোকর্তা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ আর এমন কী! পঞ্চমীতে এত ক্ষণে ঢল নেমে যায়। আদালতের নির্দেশ মেনেই সব হচ্ছে।’’
তৃতীয়া এবং চতুর্থীর মতো এ দিনও দুপুর থেকেই শ্রীভূমির মণ্ডপের বাইরে দাঁড়িয়ে উৎসাহীরা। দূরত্ব-বিধি মানার কোনও সদিচ্ছা নেই সেখানে। পুজোর উদ্যোক্তা তথা মন্ত্রী সুজিত বসুকে ফোন করা হলে তিনি জানান, একটি বৈঠকে ব্যস্ত রয়েছেন। অন্য পুজোকর্তার মন্তব্য, ‘‘ভিড় করতে বলিনি! তা-ও যখন আমাদের নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে, তখন ভিড় না করতেই বা বলব কেন?’’ সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাসেরও বক্তব্য, ‘‘এই পুজো লাইভ হচ্ছে, ফলে ভিড়ের ব্যাপার নেই!’’
বালিগঞ্জ কালচারাল, সমাজসেবী, কুমোরটুলি সর্বজনীন, নলিন সরকার স্ট্রিটের মতো পুজোয় দেখা গেল, আদালতের নির্দেশ মানতে গিয়ে দর্শনার্থীরা প্রতিমার মুখই দেখতে পারছেন না। অন্য বার বালিগঞ্জ কালচারালের প্রতিমা দেখতে মানুষ রাসবিহারী অ্যাভিনিউ হয়ে লেক ভিউ রোড ধরেন। এ বার লেক ভিউ রোড গার্ডরেল দিয়ে বন্ধ। কিন্তু ফুটপাতের রাস্তা খোলা। সেখান থেকেই প্রতিমার মুখ দেখছেন দর্শনার্থীরা। একই অবস্থা সমাজসেবীর পুজোয়। বালিগঞ্জ কালচারালের পুজো উদ্যোক্তা অঞ্জন উকিলের বক্তব্য, ‘‘দ্রুত বড় পর্দার ব্যবস্থা করছি।’’
জগৎ মুখার্জি পার্ক বা কলেজ স্কোয়ারের পুজোর উদ্যোক্তাদের আবার অন্য অভিযোগ। জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোকর্তা দ্বৈপায়ন রায় বলেন, ‘‘মণ্ডপ থেকে পার্কের গেটের দূরত্ব প্রায় ১১০ ফুট। আদালত তো ১০ মিটার বা ৩৩ ফুটের দূরত্ব মানতে বলেছিল! অথচ পুলিশ পার্ক বন্ধ করে দিয়ে কর্মকর্তাদেরও ঢুকতে দিচ্ছে না!” কলেজ স্কোয়ারের পুজোকর্তা বিকাশ মজুমদারের দাবি, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকের গেট থেকে মণ্ডপের দূরত্ব ১১০ মিটারেরও বেশি। সব গেট বন্ধ করে আমাদের পুজোর সঙ্গে এমন করা হচ্ছে কেন জানি না।’’
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক তথা হাতিবাগানের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘এই সব বিভ্রান্তি হতে পারে ভেবেই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। পুজো যত এগোবে ততই এ সব বাড়বে।’’
বিভ্রান্তি কেন? কেন বাইরের উৎসাহী দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গা-ছাড়া? কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তা এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। উত্তর নেই পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার কাছেও। যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা শুধু বলেন, ‘‘কোর্টের চূড়ান্ত রায় এ দিনই এসেছে, তাই কিছুটা সময় লাগছে।’’