ফেসবুকের সহযোগী তথ্যযাচাই সংস্থাগুলি বিজেপির প্রতি সহৃদয়? উঠছে প্রশ্ন
বিদ্বেষমূলক এবং ভুল তথ্য সম্প্রচারের জন্যে বৃহত্তম সামাজিক মাধ্যম ফেসবুককে বার বারই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। গত মাসে প্রকাশিত একটি বাজফিড রিপোর্টে দাবি হয়েছে যে ফেসবুকে রমরমিয়ে কার্যরত ভুয়ো অ্যাকাউন্টগুলি বিশ্বব্যপী নির্বাচন প্রভাবিত করছে, এমন প্রমাণ পাওয়ার পরেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপই নেয়নি বা নিলেও তা অনেক দেরিতে নেওয়া হয়েছে।
কিছুদিন আগেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদনে দাবি করেছিল ভারতে ফেসবুকের পলিসি হেড আঁখি দাসের সাথে বিজেপির আঁতাত রয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল কিভাবে বিজেপির বিদ্বেষমূলক পোস্টগুলি থেকে ব্লকিং অপশানটাই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও, অভিযোগ উঠেছে, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ফেসবুক অসংখ্য অবিজেপি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল কোন কারণ ছাড়াই।
ভুয়ো তথ্য অনেক সময়ই সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে ফেলে। মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ভুয়ো তথ্যের সম্প্রচার করা হয়। তবে সেই সময়ই এইসব তথ্য যাচাই করার প্রয়োজন ফেসবুক অনুভব করে না। যদিও সেটাই সবথেকে জরুরী।
এ বিষয়ে ফেসবুক মূলত বিশ্বের বিভিন্ন নিরপেক্ষ তথ্য যাচাই সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। ভারতে এরকম মোট ৮ টি সংস্থা আছে। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখা গেছে ২০১৯-এর আগস্ট মাস থেকে ২০২০-র আগস্ট মাস পর্যন্ত এক বা দুটি সংস্থা বাদ দিয়ে কোন সংস্থাই ত্রুটিহীনভাবে তথ্য যাচাই করতে পারেনি। সেটা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত তা তর্ক সাপেক্ষ।
ভারতে ফেসবুকের সত্য যাচাই সংস্থাগুলি হল এএফপি, বুমলাইভ, দ্য কুইন্ট, ইন্ডিয়া টুডে, ফ্যাক্টলি, ফ্যাক্ট ক্রিজেন্ডো, নিউজ মোবাইল এবং বিশ্বাস নিউজ।
এটি ঠিক যে কোন একটি ব্যক্তিই ভুয়ো তথ্য সম্প্রচার করে না। কিন্তু যদি একাধিক ব্যক্তি প্রায় একই পোস্ট বা স্ক্রিনশট ভাইরাল করে, তাই খতিয়ে দেখা যেতেই পারে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের দ্বারা শেয়ার করা তথ্য ফেসবুকের নীতি অনুসারে সহযোগী ফ্যাক্ট-চেকাররা পর্যালোচনা করতে পারে না।
যেমন, গত বছর বিজেপি আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য লখনউতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করেছিলেন যে সেই মিছিলে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলা হয়েছিল। এটা মিথ্যা ছিল। বিক্ষোভকারীরা এই সমাবেশে নেতৃত্ব প্রদানকারী এআইএমআইএম নেতা কাশীফ আহমদের জন্যে ‘কাশীফ সাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। একটিমাত্র ফেসবুক ফ্যাক্ট চেকিং সহযোগীই তাদের প্রতিবেদনে এই বিষয়টি সম্পর্কে লেখে কিন্তু সেখানেও তারা অমিত মালব্যর কথা উল্লেখ করেনি।
সম্বিত পাত্রকেও অন্যদের উক্তিকে পরিবর্তিত করে বলতে দেখা গেছে। তাঁকে লাল এবং সবুজ কোভিড জোন নিয়ে রাহুল গান্ধীকে বিদ্রূপ করে একটি অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও ব্যবহার করে শেয়ার করতে দেখা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ সত্য যাচাই সংস্থাই ভিডিওটি যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করেনি।
তাহলে কি এটাই ধরে নেওয়া হবে যে বিজেপির সাথে যোগ আছে এরকম যেকনো সংস্থা বা ব্যক্তিই অনায়াসে ফেসবুকে ভুয়ো তথ্য সম্প্রচার করতে পারবে এবং তা করে তারা পারও পেয়ে যাবে?