২৮ অক্টোবর নির্বাচন শুরু বিহারে, উত্তেজনা তুঙ্গে
মাঝে আর মাত্র একটা দিন। ২৮ অক্টোবর, বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার ভোটগ্রহণ। প্রথম দফায় ৭১ আসনে প্রার্থীদের ভাগ্য ইভিএমবন্দি হবে। করোনাবিধি মেনে সুষ্ঠু ভাবে ভোট করানোই নির্বাচন কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্য দিকে, আজ সোমবার শেষ হল প্রথম দফার ভোটপ্রচার। শেষ বেলায় প্রতিশ্রুতির বন্যা এবং একে অপরকে কাঠগড়ায় তুলে প্রচারে ঝড় তুলল শাসক-বিরোধী সব পক্ষই।
কোভিড সংক্রমণের মধ্যে ভোটগ্রহণ ঘিরে একাধিক বন্দোবস্ত করেছে কমিশন। বুথের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই মেয়াদ বেড়েছে ভোটগ্রহণের সময়সীমারও। সকাল ৭টা থেকে শুরু ভোট। মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা ছাড়া ভোটগ্রহণ নেওয়া হবে বিকেল ৫টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ও প্রবীণদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট নেওয়াও হবে এই প্রথম। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষের পথে। আগামিকাল মঙ্গলবার ক্যাম্প অফিস থেকে ইভিএম-সহ ভোটগ্রহণের অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে শুরু করবেন কমিশনের কর্মী-আধিকারিকরা।
সম্মুখসমরে এনডিএ-মহাজোট
বিহারে ভোটের লড়াই মূলত দ্বিমুখী। এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নীতীশ কুমার। বিজেপি-জেডিইউ ছাড়াও এই জোটে শামিল বিকাশশীল ইনসান পার্টি এবং হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা। প্রতিপক্ষে রয়েছে লালুপ্রসাদের আরজেডি, কংগ্রেস এবং বাম দলগুলির ‘মহাগঠবন্ধন’। লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব এই মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এনডিএ জোটে থাকলেও সদ্য প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের দল এলজেপি একা লড়ছে ভোটে।
শেষ প্রচার
প্রচার পর্বে নীতীশকে জেলের ঘানি টানানোর হুমকি দিয়েছেন রামবিলাসের ছেলে চিরাগ পাসোয়ান। কৃষক, বেকারদের শেষ করে দিয়েছেন নীতীশ কুমার— আক্রমণ শানিয়েছেন তেজস্বী। নীতীশের পাল্টা তোপ, ক্ষমতা দখল করতে জোট বেঁধেছে বিরোধীরা। শেষ দিনের প্রচারেও রণং দেহি মেজাজে সব পক্ষই। শেষ দিনে মাঠে নেমে প্রচার চালিয়েছেন সব দলের রথী-মহারথীরা।
তেজস্বীর তেজ
প্রথম দফার ভোটের আগে শেষ দিনের প্রচারে বেরিয়ে একের পর এক ইস্যুতে নীতীশকে নিশানা করেছেন আরজেডি প্রধান তথা মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী। ‘‘মুদ্রাস্ফীতি লাগামছাড়া, পেঁয়াজ ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই। রাজ্যের বেকাররা ভিন্ রাজ্যে ছুটছেন কাজের খোঁজে, বাড়ছে অনাহার। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শেষ হয়ে গিয়েছেন, দারিদ্র বাড়ছে, জিডিপি নিম্নমুখী, এক ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা,’’— আক্রমণ তেজস্বীর। নীতীশের বিরুদ্ধে জাতপাতের রাজনীতির অভিযোগেও সরব হয়েছেন লালুপুত্র।
নীতীশকে জেলে ঢোকাবই: চিরাগ
আগেও একই কথা বলেছেন। সোমবার চিরাগ ফের বললেন, ক্ষমতায় এলে নীতীশকে জেলের ভাত খাওয়াবেনই। তাঁর হুঙ্কার, ‘‘দুর্নীতিতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ বা যেই জড়িত থাকুন, জেলে পাঠাবই।’’ বিহারে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন নীতীশ কুমার। চিরাগের দাবি, সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন ছিল। মদ পাচারের অভিযোগেও সরব হয়েছেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রাজ্যে মদ পাচার হচ্ছে না? তা হলে সবাই মদ পাচ্ছেন কোথা থেকে? বিহার সরকারের এক জন মন্ত্রীর কাছেও এর কোনও উত্তর নেই।’’
বক্সারে নির্বাচনী জনসভায় চিরাগ পাসোয়ান। ছবি: পিটিআই
উন্নয়নই অস্ত্র নীতীশের
বিরোধীরা যখন মুদ্রাস্ফীতি, দুর্নীতির মতো ইস্যুতে সরব, জবাব দিতে নীতীশ কুমারের ভরসা কিন্তু উন্নয়ন। এ দিন সকরা বিধানসভা এলাকার মুজফ্ফরপুরে একটি জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘বিহারে অপরাধ কমেছে। বর্তমানে দেশের মধ্যে অপরাধের তালিকায় ২৩ নম্বরে। আমরা কাজে বিশ্বাসী, আত্মপ্রচারে নই।’’
চিরাগকে পাল্টা ত্যাগীর
বিহারে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে পর্যন্ত রামবিলাসের লোক জনশক্তি পার্টি (এলজিপি) ছিল এনডিএ-র শরিক। সেই দলের প্রধান চিরাগ ‘একলা চলো’ ঘোষণা করায় ভোট কাটাকাটির খেলায় রক্তচাপ বাড়তে পারে নীতীশের। সঙ্গে জেলে ভরার হুমকি তো রয়েছেই। তার জবাব দিতে আসরে নেমেছেন দলের নেতা কে সি ত্যাগী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চিরাগ যে এত নীচে নামতে পারেন, আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।’’ নীতীশ বিহারের সবচেয়ে সৎ মানুষ এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলে সাফাই দিয়েছেন ত্যাগী।