দেশ বিভাগে ফিরে যান

মোদির বিজ্ঞাপনে নেই নীতীশের ছবি, বাড়চ্ছে দূরত্ব

October 27, 2020 | 2 min read

রাত পোহালেই বিহার বিধানসভার প্রথম দফার নির্বাচন। ঠিক তার আগেই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে বিজেপি-জেডিইউর দূরত্ব। জোট বেঁধে ভোটে লড়াই করলেও কখনও প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর আলাদা আলাদা বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হচ্ছে। তো আবার কখনও বিজেপির নির্বাচনী জনসভায় নীতীশ কুমারের নাম অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে। যা নিয়ে ইতমধ্যে বিরোধীরা দুই দলকেই বিঁধতে শুরু করেছে। যদিও বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি সাফ জানিয়েছেন, বিহারের সবচেয়ে সফল মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী একে অপরের পরিপূরক।

এবার সংযুক্ত জনতা দল বা জেডিইউ এবং বিজেপি একজোট হয়ে বিহার নির্বাচনে লড়াই করছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এনডিএ-র অংশ হয়েও স্রেফ নীতীশ কুমারের বিরোধিতা করে আলাদা ভাবে ভোটে লড়ছে চিরাগ পাসোয়ানের নেতৃত্বাধীন এলজেপি। ফলে প্রথম থেকেই বিজেপির আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দিহান রাজনীতিবিদরা। তাঁদের সেই জল্পনা উসকে দিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা।

এক, প্রধানমন্ত্রী ও নীতীশ কুমারের আলাদা-আলাদা বিজ্ঞাপন প্রকাশ। একটি বিজ্ঞাপনেও দুজনের একসঙ্গে ছবি না থাকা।
দুই, বিজেপির বিজ্ঞাপনে নীতীশ কুমারের প্রতিশ্রুতির কোনও উল্লেখ না থাকা।
তিন, প্রধানমন্ত্রীর প্রচারসভায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর নাম প্রায় অনুল্লেখিত থাকা।
চার, বিহারে বিজেপির একের পর এক হেভিওয়েট নেতারা প্রচারে এলেও তাঁদের জেডিইউ-র সঙ্গে সভা করতে দেখা যায়নি। নীতীশের সঙ্গে সভা করেছেন শুধুমাত্র বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ।

উল্লেখ্য, বিহারে মুদ্রিত সংবাদমাধ্যম বা সংবাদপত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাতাজোরা বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে নীতীশ কুমারের ছবি থাকা তো দূরে থাক, জেডিইউ-র কোনও প্রতিশ্রুতির উল্লেখ নেই। বরং কেন্দ্রের সকলের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন ও ১৯ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতির উল্লেখ রয়েছে। আবার নীতীশের বিজ্ঞাপন, কাটআউট, পোস্টার, ব্যানার কোথাও প্রধানমন্ত্রীর ছবি নেই। দেখে বোঝার উপায় নেই যে দুটি দল একজোট হয়েছে ভোটে লড়ছে! বিজেপি সূত্রে খবর, বিহারের মুখ্যমন্ত্রীই বিজ্ঞাপনে কারোর সঙ্গে নিজের ছবি ব্যবহার করতে চাননি। শুধু বিজ্ঞাপন নয়, প্রচার ব়্যালি হোক বা সভা সেখানেও নীতীশের নাম আসছে একেবারে শেষে। বরং বিজেপি ভোট চাইছে কেন্দ্রের উন্নয়নের খতিয়ান দেখিয়ে। বলছে বিহার ভোট দেবে এনডিএ-কে। কিন্তু এই দূরত্ব বৃদ্ধির কারণ কী?

একাধিক সমীক্ষা ও দলীয় রিপোর্ট বলছে, বিহারের অধিকাংশ মানুষই নীতীশ কুমারের উপর বিরক্ত। তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হলেও একাধিক প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। উপরন্ত পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে তাঁর ভূমিকা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলার ইঙ্গিত রয়েছে। অথচ, বিহারে মোদি ম্যাজিক এখনও সক্রিয়। বিহারবাসী পরিযায়ী ইস্যুতেও কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই বিষয়টাকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তাই ধরি মাছ না ছুঁই পানি-র মতো আচরণ করছেন তাঁরা।

এ নিয়ে অবশ্য দুই দলকেই বিঁধতে ছাড়েনি লালুপুত্র তেজস্বী যাদব নেতৃত্বাধীন আরজেডি ও রামবিলাস পাসোয়ান পুত্র চিরাগের এলজেপি। আরজেডি-র কটাক্ষ, নিজেদের বিজ্ঞাপনে নীতীশকে না রেখে বিজেপি প্রমাণ করে দিয়েছে তিনি আদৌ জনপ্রিয় নন। তবে বিহার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর জন্য ভোট দেবে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নয়। নীতীশের বিজ্ঞাপন তুলে ধরে এলজেপির খোঁচা, নীতীশজিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি, এটার জন্যই তাঁর কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। এই বিতর্কের মাঝেই বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদির বার্তা, নীতীশ কুমার বিহারের যা উন্নয়ন করছেন, অন্য কেউ তা ভাবতেও পারত না। উন্নয়ন যজ্ঞে নরেন্দ্র মোদি ও নীতীশ কুমার একে অপরের পরিপূরক। তবে মুখে তিনি যাই বলুক না কেন্, জেডিইউ-বিজেপির জোটের তাল যে কাটছে ঘটনার পরম্পরাই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bihar Assembly Elections 2020, #Bihar Election 2020, #CM Nitish Kumar, #JDU, #PM Narendra Modi

আরো দেখুন