কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাশ ভোটের জোট
বাংলা-সহ তিন রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিত ভাবেই সিলমোহর পেল সিপিএমের (CPIM) কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তবে দলের এই লাইনের সঙ্গে সহমত পোষণ করলেন না কেন্দ্রীয় কমিটির ৮ নেতা। ডিজিটাল মাধ্যমেই তাঁরা দলের নির্বাচনী কৌশলগত প্রশ্নে মতদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। ভার্চুয়াল বৈঠকে এমন কার্যত ভোটাভুটি বিশেষ পরিস্থিতিতেও অভূতপূর্ব!
পলিটব্যুরো সায় দেওয়ার পরে শুক্র ও শনিবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ঠিক হয়েছে, তামিলনাড়ু, বাংলা ও অসমে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে লড়াই হবে। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র (DMK) নেতৃত্বে জোট, অসমেও কংগ্রেসের পাশাপাশি অন্য দলের সঙ্গে যাওয়া হবে। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি চলছে, সমমনোভাবাপন্ন অন্যান্য দলকেও এই ঐক্যে শামিল করার চেষ্টা হবে। কেরলে শুধু ব্যতিক্রম। সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের মুখোমুখি লড়াই, সমঝোতার কোনও বাতাবরণ নেই।
নিজেদের রাজ্যে না হলেও ভিন্ রাজ্যের আলাদা পরিস্থিতি বিচার করে কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে সমঝোতায় সায় দিয়েছেন কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। তবে সেই রাজ্য থেকেই রাজ্যসভার সাংসদ এলামারম করিম, তেলঙ্গানার জি নাগাইয়া এবং সিটুর এ আর সিন্ধু কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার কৌশলের বিরোধিতা করেছেন। যাঁরা সমঝোতার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত, তাঁদের তা জানাতে বলা হয়েছিল বৈঠকের শেষ পর্বে। দলীয় সূত্রের খবর, ৮ জন সদস্য জানিয়ে দেন, তাঁরা কোনও মত দেবেন না। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায়, কমিটির বাকি সদস্যেরা দলীয় লাইনের সঙ্গে সহমত।
বৈঠকের পরে শনিবার দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ( Sitaram Yechury ) ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতি আলাদা। তাই কেরল কেন ব্যতিক্রম, এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই! বাংলাতেও জ্যোতি বসুর আমলে সিপিএম ও কংগ্রেসের লড়াই হয়েছে। এখন বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় আমরা সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় করে চলছি।’’ সিপিএম জোটের পক্ষে পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটির সিলমোহর আদায় করে ফেললেও বাংলার কংগ্রেস অবশ্য এখনও যৌথ কর্মসূচির খসড়া তাদের পাঠায়নি। এই ক্ষেত্রে এআইসিসি কোনও ভূমিকা নিতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। সিপিএম জোটের পক্ষে যত নির্দিষ্ট ও দ্রুত পদক্ষেপ করছে, প্রদেশ কংগ্রেসের শ্লথতা ততই চোখে পড়ছে!
আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বরের কৃষক প্রতিবাদ এবং ২৬ তারিখের ধর্মঘটকে সমর্থনের পাশাপাশি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ঠিক করেছে, ইউএপিএ, এনএসএ, রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনে অভিযুক্তদের মুক্তি-সহ নানা দাবিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব ধরনের সংগঠন ও ব্যক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা হবে। এই লক্ষ্যে কর্মসূচি চলবে ২৬ নভেম্বর থেকে ২৬ জানুয়ারি, দু’মাস।