স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

ঈষদুষ্ণ জলের স্বাস্থ্যগুণ কী কী?

November 1, 2020 | 2 min read

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, আমাদের শরীরের সহনযোগ্য তাপমাত্রাতে জল গরম হলেই ঈষদুষ্ণ জলে পরিণত হয়। ঈষদুষ্ণ জলের কোনও নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সম্বন্ধে আয়ুর্বেদে কিছু বলা নেই। আয়ুর্বেদ মতে দুই রকমভাবে জলকে ঈষদুষ্ণ করে তোলা যায়। প্রথমত, জল ততটাই গরম করুন, যতটা সহ্য করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, জলকে ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিতে হবে। তারপর সেই জলকে শরীরের সহনযোগ্য  তাপমাত্রায় আসা পর্যন্ত ঠান্ডা হতে দিন।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ঈষদুষ্ণ জলের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে এই জলের ব্যবহার চলে। ঈষদুষ্ণ জল পান, গার্গল, অনুপান, স্নান সহ অন্যান্য উপায়ে ব্যবহার করা হয়। 

জল পান: আয়ুর্বেদ মতে, জ্বর হলে অগ্নিবল কমে যায়। সোজা ভাষায়, খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছা কমে। এই সমস্যা সমাধানে জ্বরের সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলের পরিবর্তে ঈষদুষ্ণ জল পানের কথা বলা হয়। এর মাধ্যমে রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য মেলে।

এছাড়া হজমজনিত সমস্যা থাকলে খাবার খাওয়ার পর এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল পান করলে উপকার মেলে। অপরদিকে প্রত্যেকদিন সকালে খালিপেটে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জল পানের অভ্যাস স্বাভাবিক মলত্যাগে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে।

অনেকেরই মাঝেমধ্যে হেঁচকি ওঠার সমস্যা থাকে। এক্ষেত্রেও ঈষদুষ্ণ জল পানে উপকার মিলতে পারে।

কাশির সমস্যা, শ্বাসকষ্ট রয়েছে— এমন রোগীদের ঈষদুষ্ণ জল পান করার কথা বলা হয়। এর মাধ্যমে জমে থাকা কফ বেরিয়ে আসে।

শরীরের মেদ ঝরাতেও সাহায্য করে ঈষদুষ্ণ জল। তাই স্থূলত্ব বা ওবেসিটির রোগীরা নিয়মিত এমন তাপমাত্রার জল পান করলে উপকার মেলে। 

গার্গল: গলা ব্যথা, গলা খুসখুস, গলা বসে যাওয়া সহ কন্ঠের যে কোনও সমস্যায় ঈষদুষ্ণ জলের গার্গল খুবই উপকারী। এই সমস্ত সমস্যায় দিনে দুই থেকে তিনবার প্রয়োজনমতো গার্গল করতে হয়।

দাঁতে ব্যথা এবং মুখে ঘায়ের অসুখেও দিনে এক থেকে দু’বার ঈষদুষ্ণ জলে গার্গল করলে সমস্যা অনেকটাই কমে। 

মূত্রথলি শোধন: ইউরিনারি ব্লাডারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— মূত্রনালীর জ্বালা, মূত্রত্যাগে জ্বালা, প্রস্রাব কম হওয়া ইত্যাদি। এই ধরনের সমস্যায় আয়ুর্বেদ মত অনুযায়ী মূত্রথলির শোধন করতে হয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে মূত্রনালীর মধ্য দিয়ে ঈষদুষ্ণ জল মূত্রথলিতে প্রবেশ করানো হয়। মূত্রথলির সমস্যাগুলি কমে।   

অনুপান: ‌আয়ুর্বেদ ওষুধ খাওয়ার জন্য ঘি, দুধ, গরম জলের মতো খাদ্য ও পানীয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। এগুলিকে বলে অনুপান। অনুপান ওষুধের শোষণে সাহায্য করে। শরীরের ঠিক যে অংশে ওষুধের প্রয়োজন, সেই নির্দিষ্ট জায়গায় ওষুধকে দ্রুত পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে অনুপান। 

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, অন্যসব অনুপানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অনুপান হল ঈষদুষ্ণ জল। 

এই পানীয় সবথেকে ভালোভাবে এবং দ্রুত আয়ুর্বেদিক ওষুধকে শরীরে কার্যক্ষম করে তোলে।

বাতের বিভিন্ন সমস্যার আয়ুর্বেদিক ওষুধ নির্দিষ্ট করে ঈষদুষ্ণ জলের সঙ্গেই পান করার কথা বলা হয়। তখনই ওষুধগুলি সবথেকে ভালো কাজ করে। 

স্নান: ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করলে শরীরের নিজস্ব তাপমাত্রা শরীর থেকে বেরতে পারে না। ফলে শরীর ঝরঝরে থাকে। তাই যে কোনও সুস্থ মানুষ চাইলে প্রায় গোটা বছরই ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করতে পারেন।   

বাতের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করলে সমস্যা বেশকিছুটা কমে। বিশেষত, বর্ষা এবং শীতে বাতের সমস্যা বাড়ে। তাই অন্তত এই দুই ঋতুতে বাতব্যাধিতে ভুক্তভোগী মানুষ রোজ নিয়ম করে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করতে পারেন। 

কখন ঈষদুষ্ণ জল নয়

ঈষদুষ্ণ জলের গুণ প্রশ্নাতীত হলেও কিছু ক্ষেত্রে এই জল ব্যবহার চলবে না। গ্রীষ্মের তীব্র দহনে ঈষদুষ্ণ জল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা দরকার। এছাড়া আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, পিত্তজ প্রকৃতির মানুষকে (গরম খাবার সহ্য হয় না এমন মানুষ) ঈষদুষ্ণ জল এড়িয়ে চলতে হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#lukewarm water, #Health Tips

আরো দেখুন