বিক্ষোভ-অবরোধ বৈদ্যবাটিতে, চাপে রেল-রাজ্য
মার্চ থেকে নভেম্বর প্রায় ৮ মাস ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছেন আমজনতার জন্য লোকাল ট্রেনের (Local Train) দরজা। আর এই লোকাল ট্রেনই কার্যত দক্ষিনবঙ্গের ৪-৫টি জেলার লাইফলাইন। দ্র্যত যোগাযোগ থেকে স্বল্পমূল্যে যাতায়াতের জন্য যার জুড়ি মেলা ভার। লকডাউন পর্বে এমনিতেই বন্ধ ছিল সবকিছু। তাতেই ধাক্কা লেগেছে গৃহস্থের আয়ে। আনলক পর্বে আস্তে আস্তে সব কিছুই খুলে গিয়েছে, অথচ লোকাল ট্রেনের দরজা খোলেনি আমজনতার জন্য। এদিকে লোকাল ট্রেনে উঠতে না পারায় কয়েক লক্ষ মানুষ তাঁদের কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। ফলে ঘরে ঘরে চূড়ান্ত অভাব-অনটন নেমে এসেছে। ভেঙে পড়তে শুরু করেছে আর্থিক পরিকাঠামো। এই রকম আবহে আজ বিকালে রেলের সঙ্গে রাজ্যের বৈঠক হতে চলেছে লোকাল ট্রেনের দরজা কতটা আমজনতার জন্য খুলে দেওয়া যায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু সেই বৈঠকের আগেই হুগলি জেলার বৈদ্যবাটিতে সকাল থেকেই অশান্তি ছড়ালো লোকাল ট্রেনে আমজনতাকে উঠতে না দেওয়ায়।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ একটি স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেন বৈদ্যবাটি স্টেশনে (Baidabati Station) এসে দাঁড়ালে তাতে উঠতে চেয়ে আরপিএফের কাছে বাধা পান যাত্রীরা। আর তারপরই তাঁরা রেললাইনে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন। যার জেরে থমকে যায় স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেনের চাকা। রেলগেটও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ বৈদ্যবাটি স্টেশন সংলগ্ন জিটি রোডেও যানজট তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর রেলপুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। আসে শ্রীরামপুর থানার পুলিশও। তবে কোনও অবস্থাতেই অবরোধ তুলতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। ফলে পরিস্থিতি কিছুটা বেশ জটিল হয়ে উঠছে। চাপে পড়ে গিয়েছেন রেলের আধিকারিক থেকে রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। তবে এদিন আরপিএফকে মারমুখী ভূমিকায় দেখা যায়নি।
বস্তুত এদিনের অবরোধ এটা সবার কাছে পরিস্কার করে দিয়েছে নিজের রুটি রুজির জন্য আমজনতা এখন ঠিক কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঘরে বসে থাকলে যে পেট চলবে না আর পেট না চললে যে না খেয়ে মরতে হবে সেটা বুঝতে পেরেই এখন জনতা কার্যত নিরুপায় হইয়ে চূড়ান্ত রকমের মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সব থেকে খারাপ অবস্থা হুগলি জেলার। কারন এই জেলা থেকে কলকাতার দিকে যাওয়ার কোনও বাসরুটই নেই। চুঁচুড়া, চন্দননগর ও শ্রীরামপুর মহকুমার নানা এলাকা থেকে কলকাতার দিকে আসার একমাত্র মাধ্যম রেল। সেখানকার মানুষ লোকাল ট্রেনে করেই যতায়াত করতে অভ্যস্থ। এখন সেই লোকাল ট্রেনে তাঁরা উঠতে না পারায় বিক্ষোভ ক্রমশ বড় আকার ধারন করছে। এই অবস্থায় এদিন নবান্নের বৈঠকে রেলের তরফে রাজ্যের সামনে এই সমস্যা তুলে ধরা হবে। রাজ্যকে বোঝানো হবে কেন সকালে ও বিকালে গুটিকয়েক ট্রেন চালিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যার সমাধানের জন্য বেশি করে লোকাল ট্রেন চালাতে হবে আর সেখানে সামাজিক দূরত্ব যাতে বজায় থাকে তার জন্য যাত্রীসংখ্যা বেঁধে দিতে হবে। প্রয়োজনে মেট্রো রেলের মতো ই-পাস চালু করা যাতে পারে। যদিও এই পাস নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ রেলের আধিকারিকদের মধ্যেও। এখন দেখার বিষয় আদৌ কালিপুজোর আগে লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু হয় কিনা।