কোভিড অ্যান্টিবডিই মানব শরীরের শত্রু হয়ে উঠছে!
রোগের মোকাবিলায় তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ভুল করে ভাইরাস ভেবে শরীরেরই বিভিন্ন কোষের উপর হামলা চালাচ্ছে! পরিণতি হতে পারে গাঁটে গাঁটে প্রবল ব্যথা কিংবা স্নায়ুরোগের মতো সমস্যা। যা উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগীদের মধ্যে হামেশাই দেখা যাচ্ছে। অ্যান্টিবডির এই শত্রু না চেনার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকেরা বেজায় চিন্তিত। তাঁদের মত , দ্রুত এই সমস্যা ধরা গেলে ভালো স্টেরয়েড প্রয়োগ করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যাবে। কিন্তু তা না হলেই বিপদ।
ভাইরাসের মধ্যে যে প্রোটিন থাকে, তার সঙ্গে গঠনগত মিল থাকা প্রোটিন মানুষের দেহে পাওয়া যায়। একে বলে মলিকিউলার মিমিক্রি। অনেক সময় শরীর কোভিডের বিরুদ্ধে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে। যা ভাইরাসের উপর তো বটেই, শরীরে মজুত ফসফোলিপিড বা টাইপ ১ রিসেপটরের মতো অটো অ্যান্টিজেন বা প্রোটিনের উপরও হামলা চালাচ্ছে। যার ফলে রিওম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কোভিড রোগীদের শরীরে। আসলে আমাদের অস্থিসন্ধিতে মজুত অ্যান্টিজেনের উপরও হামলা চালাচ্ছে অ্যান্টিবডি। তৈরি করছে ‘টিস্যু প্যাথোলজি’। ফলে গাঁটে গাঁটে হচ্ছে অসহ্য ব্যথা।
কোভিড রোগীর অস্থিসন্ধির ব্যথা যে অ্যান্টিবডির কারণেই, তা ডাক্তাররা আগেই আন্দাজ করেছিলেন। এবার হাতেনাতে প্রমাণ মিলেছে। ৩১ জন সঙ্কটজনক কোভিড রোগীর উপর গবেষণা চালিয়ে অ্যান্টিবডির এই শত্রু না চেনার ক্ষমতার কথা জানা গিয়েছে।
আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটির মার্কিন গবেষক দল বিভিন্ন মার্কার ব্যবহার করে দেখিয়েছে, কীভাবে অ্যান্টিবডি হামলা চালাচ্ছে কোভিড আক্রান্ত শরীরে। ফলে ওই ৩১ জন রোগীর শরীরে সি রিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের (সিআরপি) পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। পরিমাণ বেড়েছে নিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডিরও। অটো ইমিউন রেসপন্সের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। শরীরে মজুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু করে। কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই এই অটো ইমিউন রেসপন্স দেখা যাচ্ছে অনেকের শরীরে।
সম্প্রতি এই গবেষণার বিষয়টি বায়ো আর্কাইভ জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রটি উল্লেখ করে ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, আমাদের শরীরে দু’রকম অ্যান্টিজেন দেখা যায়। শরীরের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিজেন বা অটো অ্যান্টিজেন। আর সার্স-কোভ-২-এর মতো শরীরের অনুপ্রবেশ করা জীবাণু বা অ্যান্টিজেন। কোভিড অ্যান্টিবডি এই অ্যান্টিজেন ও অটো-অ্যান্টিজেনের মধ্যে গুলিয়ে ফেলছে। তাতেই রোগীর ভোগান্তি চরমে উঠছে।