জ্বর মানেই কিন্তু করোনা নয়
কোভিড-১৯ সংক্রমণের কালে বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যের জ্বর হলে বাবা মা ও নিকটজনেরা ভয়ে আর উৎকণ্ঠায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকেই। তার উপর নিয়ম মেনে টানা ৫ দিন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও যখন লাভ হয় না, জ্বর থেকেই যায়, তখন আতঙ্ক বাড়ছে। জ্বরের সঙ্গে যদি সর্দি বা গলা ব্যথা না থাকে, খাবারে অরুচি আর বমি ভাব থাকে তাহলে প্রস্রাবের সংক্রমণের কথা ভাবতে হয়।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট অর্থাৎ মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে জ্বর, বমি ভাব বা বমি, তলপেটে ও কোমরের পিছন দিকে ব্যথা, বার বার শৌচাগারে যাওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালা, কখনও আবার ঘাম হওয়ার মত উপসর্গ থাকে।
অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের বিশেষ কোনও উপসর্গ ছাড়াও মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। জেনে রাখা ভাল যে প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত জ্বর হলে কাশি বা গলা ব্যথা থাকে না। তবে বমি ভাব ও বমি হলে সংক্রমণ সন্দেহ করতে হবে। তবে অনেক সময় সংক্রমণ হলে শীত করে, প্রস্রাব করার সময় ব্যাথা ও জ্বালা করে, তলপেটে ব্যথা করে, প্রস্রাবে কটূ গন্ধ হয়, প্রস্রাব ঘোলাটে বা লালচে হতে পারে। এ ছাড়া সামগ্রিক ভাবে দুর্বল লাগে। তাই, রুটিনমাফিক ইউরিন টেস্ট ও ইউরিন কালচার করিয়ে নেওয়া দরকার। প্রস্রাবে সংক্রমণ ধরা পড়লে কালচারের রিপোর্ট অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে খাওয়ার ব্যপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। বাড়িতে তৈরি সব খাবারই দেওয়া যায়। বেশি করে জল আর তরল খাবার খেতে হবে। ডাল, স্যুপ, ঝোল, ডাবের জল, সরবত (ঠান্ডা পানীয় নয়), টাটকা ফলের রস যা খেতে ভাল লাগে তাই দেবেন। তবে বেশি তেল-মশলা দেওয়া খাবার না খাওয়াই ভাল। পর্যাপ্ত জল ও তরল খাবার খেতে হবে ও বিশ্রামে থাকতে হবে।
কী কী খেয়াল রাখতে হবে
- বাচ্চা যেন বেশিক্ষণ প্রস্রাব চেপে না রাখে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। বিশেষ করে খাবার আগে আর ঘুমোতে যাবার আগে শৌচাগারে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করে দিতে হবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া উচিত।
- নাইলন বা সিন্থেটিক অন্তর্বাসের পরিবর্তে সুতির হালকা অন্তর্বাস পরতে হবে।
- আঁটোসাঁটো ট্রাউজার পরাবেন না।
- বাচ্চাদের নিয়ম করে স্নান করানো ও শুকনো করে মুছে নেওয়ার ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
- ছোট বাচ্চাদের একটানা ডায়াপার পরিয়ে রাখা ঠিক নয়।
- কৃমি থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে।
- সামনে থেকে পিছন দিকে প্রস্রাবের জায়গা পরিষ্কার করতে হবে।
- জল শুষে নেয় এ রকম নরম টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে হবে।
- বাড়ির শৌচাগার তো বটেই, স্কুলের শৌচাগারও পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি।
সংক্রমণ প্রতিরোধ করে বাচ্চাকে সুস্থ রাখুন, ভাল থাকুন।