৪৬ শতাংশ মানুষ ধারেই সংসার চালাচ্ছেন, সমীক্ষায় চাঞ্চল্য
‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’। অর্থাৎ, ধার করে ঘি খাও। চার্বাক দর্শনের সুখী জীবনের এই তত্ত্বকথা উল্টেপাল্টে দিয়েছে করোনা। লকডাউন (Lockdown) ও ভাইরাস (Coronavirus) সংক্রমণের প্যাঁচে সামান্য রুটিরুজিটুকু জোগাতেই ঋণের রাস্তায় হেঁটেছেন সাধারণ মানুষ। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, করোনা পর্বে ভারতবর্ষে ৪৬ শতাংশ মানুষ টাকা ধার করে সংসার চালিয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, পরিবারের জন্য যেটুকু না হলেই নয়, তার জন্যও অপরের কাছে হাত পাততে হয়েছে। দেশের সাতটি শহরকে কেন্দ্র করে হওয়া এই সমীক্ষায় রয়েছে কলকাতাও (kolkata)। তবে হিসেব বলছে, ধারের টাকায় দিন গুজরানের নিরিখে আমাদের মহানগরের স্থান পিছনের সারিতে। তুলনামূলক ভালো জায়গায়।
গত এপ্রিল এবং মে মাসজুড়ে চলেছে লকডাউন। অর্থনৈতিক কাজকর্ম প্রায় কিছুই হয়নি। জুনে আনলক পর্বের শুরু। তত দিনে বহু লোকের চাকরি গিয়েছে। মাইনে কমেছে। বিভিন্ন পেশার মানুষের হাত প্রায় খালি। অথচ জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে সংসার চালাতে কুলকিনারা পাননি লক্ষ লক্ষ জনতা। অগত্যা ধার করা ছাড়া উপায় নেই। সমীক্ষায় ২৭ শতাংশ মানুষ এমনও জানিয়েছেন, টাকার অভাবে ইএমআই (EMI) দেওয়া যাচ্ছিল না। কিস্তি মেটাতে নতুন করে ঋণ করতে হয়েছে। ১৪ শতাংশের দাবি, তাঁরা চাকরি খুইয়েছেন। তাই ধার করা ছাড়া কোনও পথ খোলা ছিল না। সমীক্ষায় ১৩ ভাগ লোক আবার জানিয়েছেন, তাঁরা এখনই এসব ব্যাপারে চিন্তাই করছেন না। আগে পুরনো ধার শোধ করবেন। তারপর আসবে পরে নেওয়া ঋণ মেটানোর পালা।
এঁদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন বন্ধু বা পরিচিতদের থেকে টাকা নিয়েছেন। সমীক্ষার ইঙ্গিত, এব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন পুরুষরাই। মহিলারা ধার করার ক্ষেত্রে মূলত নির্ভর করেছেন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর। বন্ধুদের থেকে টাকা নিলেও, তা পরিশোধের ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা নেই প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের। তাঁদের দাবি, নতুন চাকরি অথবা হাতে যথেষ্ট পরিমাণ নগদ এলে শোধ করবেন টাকা।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ধার করার নিরিখে সবার আগে মুম্বই এবং ভোপাল। তারপর ঠাঁই হয়েছে যথাক্রমে পাটনা ও দিল্লির। জয়পুর ও হায়দারাবাদ রয়েছে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে। একদম শেষে কলকাতা। এ রাজ্যে মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ ধার করে সংসার চালিয়েছেন।
গত বছর আগস্ট মাসে এমনই একটি সমীক্ষা হয়েছিল ভারতে। সেখানে দেখা গিয়েছিল, ৩৩ শতাংশ মানুষ ধার করেছেন খুচরো খরচ মেটাতে। গাড়ি, বাড়ির মতো কোনও বড় সম্পত্তি কেনার জন্য নয়। কী সেই খরচ? সমীক্ষার দাবি ছিল, ল্যাপটপ, বড় মাপের টিভি কিংবা পেল্লাই সাইজের ফোন কেনার জন্য ধার করেছিলেন মানুষ। বছর ঘুরতেই একদম বদলে গিয়েছে ছবিটা। এখন অন্নের সংস্থান করতেই ঋণের ভার মাথা পেতে নিয়েছেন মানুষ।