ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

টাকা দিলেই থাকা যায় সিদ্ধার্থশঙ্করের ‘লাল বাড়ি’-তে

November 6, 2020 | 2 min read

২ বেলতলা রোড। ভবানীপুর এলাকার যে ঠিকানা আজও লোকমুখে খ্যাত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের বাড়ি নামে। সেই বাড়িই আজ ‘গুগল’-সূত্রে, বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হচ্ছে ‘লালবাড়ি’ নামে। ‘দ্য হেরিটেজ রেড ব্রিক হাউস’ হিসেবে। দেশি-বিদেশি অতিথিরা থাকতে আসছেন কলকাতার বুকে স্টে হাউসের এই নতুন আস্তানায়। প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়িটি ব্যবহৃত হচ্ছে সিরিয়াল-সিনেমার শুটিং স্পট হিসেবে। বাংলার প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই বাড়িতে একসময় পা রেখেছেন ইন্দিরা গান্ধী, জ্যোতি বসু, পণ্ডিত রবিশঙ্করের মতো ব্যক্তিত্ব, বাংলার তাবড় গুণীজন। সেই বাড়ির আজ ‘অবারিত দ্বার’।

টাকা দিলেই আজ যে কেউ এখানে থাকতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন বাংলার খ্যাতনামা ব্যারিস্টার, এক সময়ের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, পাঞ্জাবের প্রাক্তন রাজ্যপাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত চিত্তরঞ্জন দাশের নাতি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের ব্যবহৃত খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, সোফা, আসবাব মায় অসংখ্য বই দিয়ে সাজানো তাঁর বড় প্রিয় লাইব্রেরি।

লাল দোতলা বাড়ির একতলায় রয়েছে ১টি ‘ভিন্টেজ রুম’। যার ভাড়া দিনপ্রতি ৩০০০ টাকা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে, দোতলায় রয়েছে ১টি ‘ভিন্টেজ রুম’ আর ১টি ‘ডিল্যাক্স ভিন্টেজ রুম’। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, স্ত্রী মায়া রায়ের শোওয়ার ঘরই ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ডিল্যাক্স রুম’ হিসেবে। যার ভাড়া দিনপ্রতি ৪০০০ টাকা। কার্পেট মোড়া ৩টি বিশাল ঘরেই রয়েছে ১টি করে বার্মা টিকের বড় খাট, ওয়ারড্রোব, রাইটিং ডেস্ক, ড্রেসিং টেবিল, রকিং চেয়ার। এ ছাড়া এসি, এলইডি টিভি, অ্যাটাচড বাথরুম। বাড়ির পুরোনো জনা তিনেক কর্মচারীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে অতিথিদের দুপুর-রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা। ভাত, মুগের ডাল, আলু ভাজা, তরকারি, চাটনি, মিষ্টি সহযোগে চিকেন, মটন, ফিশ, প্রন, ভেজ থালি। রয়েছে বিদেশি অতিথিদের বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে নিয়ে এসে কলকাতা শহর দেখানোর বন্দোবস্ত। দেখভালের দায়িত্বে নিঃসন্তান সিদ্ধার্থবাবুর ভাইঝি ইলিনা রায় ও তাঁর পুত্র অয়ন রায়।

আজ থেকে ১০ বছর আগে, ৬ নভেম্বর ২০১০ সালে সিদ্ধার্থবাবুর মৃত্যুর দিন পর্যন্তই শুধু নয়, পরের বছর তাঁর স্ত্রী মায়া রায়ের মৃত্যুর পরেও এই বাড়িতে সাধারণের এমন অবাধ বিচরণ ছিল কল্পনাতীত। কেয়ারি-করা সবুজ লন পেরিয়ে, একতলা থেকে দোতলায় যে বার্মা টিকের পলিশ করা সিঁড়ি উঠে গিয়েছে, সেই সিঁড়িতে বাইরের জুতো পরে পা রাখাও ছিল নাকি নিষিদ্ধ। প্রায় পঞ্চান্ন বছর সিদ্ধার্থবাবুর ছায়াসঙ্গী, আপ্ত-সহায়ক ছিলেন শান্তিকুমার মিত্র। 

শান্তিবাবুর কথায়, ‘আজও ওই বাড়ি, আমাদের কাছে ‘মানুদার বাড়ি’। মনে আছে, ‘মানুদা’ মানে সিদ্ধার্থবাবুর মা যেদিন মারা যান, সেদিন জ্যোতিবাবু এসেছিলেন। তিনিও কিন্তু জুতো খুলেই পা রেখেছিলেন ওই সিঁড়িতে। বাড়ি-বাগান-বই ছিল মানুদার প্রাণ। আজ যে সেটা স্টে হাউস ‘লাল বাড়ি’, আমি জানি না।’ ‘লালবাড়ি’-র নাম জানা নেই বেলতলার বহু বাসিন্দারও। ভবানীপুর থানার বিপরীতে এলাকার বহু পুরোনো দোকান ‘শ্রীহরি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। সেই দোকানের ২৮ বছরের কর্মী রবি গিরি হেসে বললেন, ‘আপনি ‘আলিবাবা হোটেল’ বলতে গিয়ে, ‘লালবাড়ি’ বলছেন না তো?’ 

এলাকাবাসী জানে না, কিন্তু বিশ্ববাসী আজ জানে কলকাতার এক নতুন হেরিটেজ স্টে হাউসের ঠিকানা। বেলতলা রোডের ‘লালবাড়ি’।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Lal Bari, #Siddhartha Shankar Roy

আরো দেখুন