রাজ্যের সাহায্যে জিরো ওয়েস্ট হবে ডাম্পিং গ্রাউন্ড
রাজ্যের দেওয়া ১৮ কোটি টাকা দিয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাহাড় সমান বর্জ্য চলতি বছরই প্রক্রিয়াকরণ শুরু হচ্ছে। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (KMDA) ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে শিলিগুড়ি পুরসভা এই কাজ করবে। কালীপুজো মিটলেই সংশ্লিষ্ট সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা আসবেন বলে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ ও সাফাই বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। ধাপে ধাপে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের (Dumping Ground) সমস্ত বর্জ্য ‘জিরো ওয়েস্ট’ (Zero Waste) করা হবে। সরকারি এই উদ্যোগ সফল হলে স্বস্তি মিলবে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের পরিবেশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মুকুল সেনগুপ্ত (Mukul Sengupta) বলেন, লিগ্যাসি ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প অন্যান্য বড় শহরের মতো আমাদের শহরেও শুরু হবে। কেএমডিএ’র ইঞ্জিনিয়াররা গোটা বিষয়টি দেখছেন। প্রথম ধাপে এজন্য ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। বর্তমানে যেখানে শহরের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেখানেই এই প্রকল্পটি গড়া হবে। এটা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড ফাঁকা হয়ে গেলে সেখানে বাগান গড়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বলরাম রায়, সমীর রাজভর প্রমুখ বলেন, সারা বছরই এলাকায় মাছির উপদ্রব রয়েছে। বৃষ্টির পর রোদ উঠলে দুর্গন্ধে টেকা যায় না। আমরা বহুবার পুরসভায় গিয়ে জানিয়েছি। অতীতে আন্দোলনও হয়েছে। এমন উদ্যোগ পুরসভা নিলে স্বস্তি মিলবে।
পুরসভা গঠনের প্রায় শুরু থেকেই শহরের বর্জ্য ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি জমিতে মজুত করা হচ্ছে। সেখানকার প্রায় ৫২ একর জমিতে বর্জ্যের পাহাড় হয়ে গিয়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ভিতরে কোথাও কোথাও চার-পাঁচ মিটার উঁচু জঞ্জালের স্তূপ হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ডাম্পিং গ্রাউন্ডটি অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। বছর কয়েক আগে তিনদিক ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এতে জঞ্জাল রাস্তায় আসা কিছুটা রোখা গেলেও দুর্গন্ধ আটকানো যায়নি। আবর্জনা জলে ভিজে রোদে শুকালে আশপাশের এলাকায় গন্ধে টেকা যায় না। ডাম্পিং গ্রাউন্ড চত্বরে নামীদামি একাধিক স্কুল, কলেজ, আবাসন রয়েছে। বেশ কয়েকটি জনবহুল পাড়াও আছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড স্থানান্তরের ব্যাপারে বহুবার এলাকার লোকজন আন্দোলন করেছেন। পুরসভা শহরের বাইরে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের পুঁটিমারিতে জমি কিনলেও এখনও স্থানান্তরিত হয়নি। এমন অবস্থায় জমে থাকা বর্জ্যের পাহাড়ের সমস্ত আবর্জনা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পর্যায়ক্রমে গুঁড়ো করে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। এক-দু’মাসে সমস্ত বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব নয়। তবে বছর খানেকের মধ্যে এর সুফল মিলতে শুরু করবে বলে আশাবাদী পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকরা। এজন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হবে। কেএমডিএ’র ইঞ্জিনিয়াররা সম্প্রতি একদফা ঘুরেও গিয়েছেন। কালীপুজোর পর সেখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারদের টিমের আসার কথা রয়েছে। এরপর নিয়ে আসা হবে যন্ত্রপাতি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে শহরের ৪৭টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়। উৎসবের মরশুমে অতিরিক্ত আরও ২০০ মেট্রিক টন বর্জ্য শহর থেকে তোলা হয়। এজন্য প্রায় ৯৫টি গাড়ি পুরসভা ব্যবহার করে। এরমধ্যে কিছু ভাড়ার গাড়িও আছে। এসব কাজের জন্য পুরসভায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ২২০০ জন কর্মী কাজ করেন।