করোনা জের, এবার কালীপুজোয় বন্ধ উচ্চতার প্রতিযোগিতাও
কালীপুজোয় (kali Puja 2020) প্রতিমার উচ্চতায় টেক্কা দেওয়ার চিরাচরিত প্রতিযোগিতা এ বছরে দেখা যাবে না। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, বাজেট ছাঁটতেই প্রতিমার উচ্চতা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এ বার কালীর গড় উচ্চতা মেরেকেটে পাঁচ থেকে ছয় ফুট। এমনকি কোথাও আবার চার বা সাড়ে চার ফুটের প্রতিমাও হচ্ছে, জানাচ্ছেন শিল্পীরা। পাল্লা দিয়ে কমেছে ডাকিনী-যোগিনীর উচ্চতা। অনেকে আবার বাজেটের কথা ভেবে বাদ রাখছেন ডাকিনী-যোগিনী।
শহরের একাধিক জনপ্রিয় কালীপুজোর মহল্লা আমহার্স্ট স্ট্রিট। সেখানকারই পুজো বালক সঙ্ঘের উদ্যোক্তা জগন্নাথ রায় জানান, তাঁদের প্রতিমার উচ্চতা ১৮-১৯ ফুট হয়। সাজসজ্জা নিয়ে উচ্চতা দাঁড়ায় ২২-২৩ ফুটের মতো। জগন্নাথবাবু বলেন, “এ বার প্রতিমা আট ফুটের হচ্ছে। বাজেট অনেক কমেছে, ফলে এই আপস করতে হয়েছে। আমাদের প্রতিমা এতই উঁচু হয় যে বিসর্জনের সময়ে বিদ্যুৎস্তম্ভের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়।”
ওই চত্বরের আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপুজো কমিটির পুজো সোমেন মিত্রের কালীপুজো নামেই পরিচিত। প্রতিমার উচ্চতা কমেছে সেখানেও। এক উদ্যোক্তা বলেন, “এ বার ছোড়দা নেই। এমনিতেই পুজো আড়ম্বরহীন হবে। তবে করোনার (Coronavirus) জন্য ১২ ফুটের প্রতিমা ৮-৯ ফুটের হবে।” কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের নবযুবক সঙ্ঘের পুজো ফাটাকেষ্টর পুজো নামে পরিচিত। ওই পুজোর উদ্যোক্তা ধনঞ্জয় ধর বলেন, “আড়ম্বর অনেক কমেছে। তবে প্রতিমা প্রতিবার একই ছাঁচে হয় বলে উচ্চতা সে ভাবে কমেনি।” বাগুইআটির দেশবন্ধুনগর প্রতিবেশী সঙ্ঘ কালীপুজোর উদ্যোক্তা প্রিয়ব্রত বসু বলেন, “আমাদের মণ্ডপে পঞ্চকালীর পুজো হয়। পাশে থাকে মূল কালী প্রতিমাও। মূল কালী প্রতিমার উচ্চতা ১৪ ফুটের কম হয় না। এ বার কমে গিয়েছে অনেকটাই।”
কুমোরটুলির শিল্পী অর্পূব পাল জানাচ্ছেন, প্রতি বছর বেশ কিছু কালীপুজোর প্রতিমার বায়না পান, যার উচ্চতা অনেকটাই বেশি। এ বার সেই সব প্রতিমা হচ্ছে ১৫-১৬ ফুট। সাজসজ্জা নিয়ে প্রায় আঠারো ফুটের মতো দাঁড়াবে। অপূর্ববাবু বলেন, “এ বছর ৫-৬ ফুটের কালী বেশি বানাচ্ছি। এমনকি চার ফুটেরও বানিয়েছি। ৩৫ বছরে এমন অভিজ্ঞতা প্রথম।” কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক শিল্পী বাবু পাল জানাচ্ছেন, অন্যান্য বার তিনি ১৩০টির মতো কালী প্রতিমা বানান। ১৪ ফুট বা তার বেশি উচ্চতার থাকে কয়েকটি। এ বছর ১৪ ফুটের একটিও বায়না পাননি। তাঁর কথায়, “সবাই বলছেন, প্রতিমার উচ্চতা কম হবে। বাজার খারাপ। যা বরাত পেয়েছি তাই বানাচ্ছি।”
উচ্চতা কমেছে ডাকিনী-যোগিনী, ভূতপেত্নিরও। অনেকেই নিয়ে যাচ্ছেন শুধুই প্রতিমা। কুমোরটুলিতে এমন শিল্পী আছেন, যাঁরা শুধুই ডাকিনী-যোগিনী বা ভূতপ্রেত বানিয়ে থাকেন। এই মরসুমেই ওঁদের মূল রোজগার হয়ে থাকে। মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের।