বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

১৪ নতুন প্রজাতির প্রাণী আবিষ্কার বাংলার শান্তনুর

November 9, 2020 | 2 min read

পৃথিবীতে প্রতিদিনই নতুন প্রজাতির প্রাণের সন্ধান করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রাণীবিদ শান্তনু মিত্র (Shantanu Mitra) গবেষণা করে ১৪টি নতুন প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান দিয়েছেন। স্বীকৃতি মিলেছে জু-ব্যাঙ্কের। ইতিমধ্যেই নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে তাঁর আবিষ্কারের কথা।

দীঘার সমুদ্র উপকূলে শান্তনুবাবু আবিষ্কার করেছেন নতুন প্রজাতির কাঁকড়া। বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন ডটিলা ফেটারনালিস। ল্যাটিন ভাষায় ফেটারনালিস কথার অর্থ আত্মীয়‌। ১৮৮৮ সালে দীঘার সমুদ্র উপকূলে ডটিলা ইন্টারমিডিয়া নামে ছোট কাঁকড়ার হদিশ দিয়েছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী ডি ম্যান‌। এই প্রজাতির কাঁকড়ার সঙ্গেই মিশে ছিল শান্তনুবাবুর আবিষ্কৃত নতুন প্রজাতির কাঁকড়া। চোখের সামনে থাকলেও এই নতুন প্রজাতিকে আবিষ্কার করতে সময় লেগেছে ১৩২ বছর। গত ৮ জুলাই জু ব্যাঙ্ক শান্তনুবাবুর আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তারকেশ্বর পুরসভার (Tarakeshwar Municipality) ১০ নং ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা শান্তনুবাবুর জন্ম ১৯৭১ সালে। তারকেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুলপাঠ শেষ করে কানপুর ইউনিভার্সিটি থেকে জুলজিতে এমএসসি করেন তিনি। তারপর যোগ দেন চাকরিতে। মা, সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে চারজনের সংসার। বাড়িতেই শান্তনুবাবু বানিয়ে ফেলেছেন ল্যাবরেটরি। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক অজানা প্রাণীর আবিষ্কার হয়েছে এই ল্যাবরেটরি থেকেই।

২০১৭ সালে মিজোরামে (Mizoram) নতুন প্রজাতির কাঁকড়া টেরেটামন ইন্ডিকম আবিষ্কার দিয়ে তাঁর পথচলা শুরু। গত ৯ সেপ্টেম্বর তিনি হিমালয়ের নতুন প্রজাতির কাঁকড়ার গণ ও প্রজাতি আবিষ্কার করেন। কাঁকড়ার গণ ও প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন যথাক্রমে অ্যাবর টেলফুসা ও নামডাফা এনসিস। মণিপুরে নতুন প্রজাতির কাঁকড়া সন্ধান দিয়েছেন শান্তনুবাবু। গত ২৪ আগস্ট তাঁর সেই আবিষ্কার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি এর বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন ব্যাডিস্টেমন ফালভাম। মিজোরামে নতুন ক্যাটফিশ প্রজাতির মাছও আবিষ্কার করেন তিনি। সেটির বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন গ্লিপটোথোরাক্স কৈলাসি। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এই কাজের স্বীকৃতি পান তিনি।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে তিনি সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা পিটার এন জি’র সঙ্গে বকখালিতে নতুন প্রজাতির কাঁকড়া আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন কার্সিনো প্লাক্স মিস্টিও। শান্তনু মিত্র বলেন, নতুন প্রজাতির প্রাণী শুধু দুর্গম জায়গায় থাকে, এমনটা নয়। আমাদের চোখের সামনেও অনেক প্রাণী রয়েছে, যা দেখতে একই রকম হলেও তার প্রজাতি আলাদা। ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে নতুন প্রাণী আবিষ্কার করা সম্ভব নয়।

১০-৫টা ডিউটির পর বাড়ি ফিরে আমার ল্যাবরেটরিতে কাজ করি। পৃথিবীর অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর সাহায্য পেয়েছি। সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট প্রাণীবিদ পিটার এন জি আমাকে বলেছেন, ভারতে অনেক নতুন প্রজাতির প্রাণী আছে, যা এখনও আবিষ্কার হয়নি।

শান্তনুবাবুর কথায়, ভারতের স্থলভাগে ১২৫ ধরনের কাঁকড়া রয়েছে। এরমধ্যে ১০টি আমার আবিষ্কৃত। আমি চাই নতুন প্রজন্ম এই কাজে এগিয়ে আসুক। ইতিমধ্যেই শান্তনুবাবু একটি গণ এবং ১৪টি প্রজাতির প্রাণী আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় তাঁর ১০৯টি নিবন্ধ বেরিয়েছে। প্রতিবেশীরা বলেন, বাংলা ও ভারতের নাম যে বিজ্ঞানী বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন, তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার সম্মান জানালে আগামী প্রজন্ম বিজ্ঞান বিষয়ে উৎসাহিত হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Shantanu Mitra, #Invention

আরো দেখুন