কালী পুজোয় ঘুরে আসতে পারেন তারাপীঠ থেকে
তারাপীঠ বীরভূম জেলার এক ধর্মীয় স্থান। রামপুরহাট শহরের কাছে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মন্দির নগরী। এই শহর তান্ত্রিক দেবী তারার মন্দির ও মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। হিন্দুদের বিশ্বাসে, এই মন্দির ও শ্মশান একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। এই মন্দির শাক্তধর্মের পবিত্র একান্ন সতীপীঠের অন্যতম। রামপুরহাট শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে তারাপীঠ অবস্থিত।
সতীর তৃতীয় নয়ন বা নয়নতারা তারাপুর বা তারাপীঠ গ্রামে পড়ে এবং প্রস্তরীভূত হয়ে যায়। ঋষি বশিষ্ঠ প্রথম এই রূপটি দেখতে পান এবং সতীকে তারা রূপে পূজা করেন। তারা মায়ের প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংস হওয়ার পর ১২২৫ বঙ্গাব্দে মল্লারপুরের বাসিন্দা জগন্নাথ রায় আটচালা ইট দিয়ে নতুন মন্দিরটি নির্মান করেন। মন্দিরটির টেরাকোটা শিল্প আজও পর্যটকদের নজর টানে।
সারা বছর দেবী এখানে মা তারা রূপে পুজিত হন। কালীপুজোয় তারাপীঠের সেই মা তারা কালী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন। সেবায়েতদের কাছে মা তারা এই দিনটায় তারা অঙ্গে কালী রূপে বিরাজ করেন। কালী পুজোর রাতে মা তারা স্বর্ণালঙ্কারে সজ্জিত হন। আর স্বর্ণালঙ্কার শোভিত রাজ রাজেশ্বরী বেশে মা তারার দর্শন পাওয়ার জন্য কালী পুজোর দু’দিন আগে থেকেই তারাপীঠে দর্শনার্থীরা ভিড় করতে শুরু করেন।
কালীপুজোর দিন গভীর রাতে সেবায়েতদের মতে নিশিপুজো হয় তারা মায়ের। নিশি পুজোর সময় মা তারাকে স্নান করিয়ে বেনারসী শাড়ির সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত করা হয়। কালীপুজোর দিন মা তারার জন্য দু’বেলা অন্নের ভোগ হয়। অন্নের ভোগে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, দু-তিন রকমের তরকারি, মাছ থাকে। একই সঙ্গে মন্দির চত্বরে ছাগ বলিদানের মাংস, পোড়ানো শোল মাছ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টির ভোগ নিবেদন করা হয়। এ ছাড়াও সন্ধ্যারতির সময় লুচি-মিষ্টির ভোগ নিবেদন করা হয়।
এইসব পরম অনুভূতির সাথে একাত্ম হতে কালীপুজোর রাতটি কাটাতেই পারেন তারাপীঠে।
এখানে কি কি দেখবেনঃ
তারাপীঠ মন্দির
একান্নটি পীঠস্থানগুলির মধ্যে তারাপীঠ একটি “সিদ্ধপীঠ”, .বামাক্ষেপা এই মন্দিরে পূজা করতেন। মন্দিরের ভিতরে, শিশু শিবকে স্তন্যপানরতা তারার মূল প্রস্তরমূর্তিটি একটি তিন ফুট উঁচু ধাতব মূর্তির মধ্যে রাখা আছে । মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীমূর্তি সংস্থাপিত। এই মূর্তিটি তারা দেবীর ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী মূর্তি। প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোলাকার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে।
মন্দিরের প্রবেশপথের মধ্য খিলানের ওপর দুর্গার প্রতিকৃতি রয়েছে। উত্তরদিকে বামপাশের খিলানের ওপর কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঘটনা, ভীষ্মের শরশয্যা, অশ্বত্থমা হত প্রভৃতি মহাভারতের কাহিনী উৎকীর্ণ রয়েছে। মন্দিরের উত্তর ভিতের পূর্বদিকে সীতাহরণ, অকালবোধন, রাম ও রাবণের যুদ্ধের দৃশ্য এবং পশ্চিমদিকে কৃষ্ণলীলার চিত্র খোদিত। মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীমূর্তি সংস্থাপিত। মন্দিরের শিল্প কার্য অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই মন্দিরের পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। .
চন্দ্রচুড় মন্দির
তারাপীঠে শিব চন্দ্রচূড় হিসেবে পূজিত হন। এই মন্দির নির্মাণ করেন জয়দত্ত বণিক নামক ত্রয়োদশ শতাব্দীর এক বণিক পরিবারের সন্তান। মন্দিরটি মাঝারি আকারের গম্বুজাকৃতি ও তারা মন্দিরের পূর্বদিকে অবস্থিত। মন্দিরের সম্মুখে ধ্যান যোগ এবং পুজার্চনায় মানসিক শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।
বামাক্ষ্যাপা আশ্রম
তারাপীঠের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ সাধক হলেন বামাক্ষ্যাপা। মন্দিরের অদূরেই তাঁর আশ্রম অবস্থিত। তিনি মন্দিরে পূজা করতেন এবং শ্মশানে সাধনা করতেন। তিনি সমগ্র তারাপীঠের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। ভক্তেরা তাঁর কাছে আশীর্বাদ বা আরোগ্য প্রার্থনা করতে আসত। কেউ কেউ আবার শুধুই তাঁকে দর্শন করতে আসত।
শ্মশানঘাট
তারা মন্দিরের পশ্চিম দিকে অদূরেই শ্মশানক্ষেত্রটি অবস্থিত। অনেক জটাধারী ভষ্মমাখা সাধুরা শ্মশানক্ষেত্রে নিজেদের কুটির বানিয়ে বাস করেন। তন্ত্রসাধকরা বিশ্বাস করেন নরকঙ্কাল ও শ্মশানক্ষেত্র তারা দেবীর বিশেষ প্রিয়। দেবীর যে সকল চিত্র আঁকা হয়ে থাকে, তাতে তাঁকে শ্মশানক্ষেত্রনিবাসিনী রূপেই দেখানো হয়। এই কারণে তন্ত্রসাধকেরা শ্মশানক্ষেত্রকেই তাঁদের সাধনস্থল হিসেবে বেছে নেন।
যাবেন কিভাবে
মহামারীকালে গণপরিবহন এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তারাপীঠ যাওয়ার বেশ কিছু ট্রেন শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে, আর বাসে যেতে চাইলে তা এসপ্ল্যানেড বাসস্ট্যান্ডে পেয়ে যাবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের গাড়ি বা ছোট গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই নিরাপদ।
থাকবেন কোথায়
তারাপীঠে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল ও রিসোর্ট আছে। হোটেল ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে শুরু। হোটে্লে এসি এবং নন এসি সবরকম ঘর পেয়ে যাবেন। অমাবস্যা ও শনিবারে বেশি ভিড় হয় এখানে।