পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে তৎপর মমতার সরকার
পর্যটনকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে উদ্যোগ শুরু করল রাজ্য সরকার (Sate Govt)। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত জেলায় জেলায় শুরু হচ্ছে পর্যটন মেলা । প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হুগলি, নদীয়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং কলকাতায় এই মেলা হবে। কোন কোন জায়গায় পর্যটনের দরজা খোলা হয়েছে, তার সম্পূর্ণ তথ্য দিতেই এই উৎসবের আয়োজন। সঙ্গে থাকছে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিটি উৎসবই তিনদিন ধরে চলবে। অংশগ্রহণ করবেন নামী শিল্পীরা। পর্যটন শিল্প (Tourism Industry) সংস্থাগুলিকে অক্সিজেন জোগানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ফের বেড়ানোর জন্য প্রস্তুত করাই এই উৎসবের মূল লক্ষ্য, বলছেন দপ্তরের কর্তারা।
তিনদিনের পর্যটন উৎসব সফল করার জন্য ইতিমধ্যেই টেন্ডার ডাকা হয়েছে। মেলাগুলিতে যেমন সরকার রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের হয়ে প্রচার করবে, তেমনই হাজির থাকবে ট্যুর অপারেটর-সহ পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহল। রাজ্যের নিজস্ব পর্যটন আবাসগুলির বুকিংয়ের জন্য কয়েকটি এজেন্সি রয়েছে। তারাও থাকবে।
লকডাউন (Lock Down) এবং করোনা সংক্রমণের (Coronavirus) ফলে মারাত্মকভাবে মার খেয়েছে পর্যটন ব্যবসা। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি পর্যটনের প্রসারে উদ্যোগী হয়, তার চেয়ে ভালো কিছুই হয় না, বলছেন শিল্পকর্তারা। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর সার্ভিস প্রোভাইডার্স অব বেঙ্গলের সহ-সভাপতি সমর ঘোষের কথায়, এই মুহূর্তে পর্যটনের সবচেয়ে বড় সমস্যা করোনা। রাজ্যের প্রায় সব পর্যটনকেন্দ্রে তার প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়েছে। এখনও সেই ঝড় সামাল দিতে পারেননি কোনও পর্যটন ব্যবসায়ী, প্রত্যেকেরই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এক্ষেত্রে কোনও এক তরফে লাগাতার প্রচার দরকার। মানুষের মনোবল বাড়ানো দরকার। সেই উদ্যোগ সরকার নিলেই সবচেয়ে ভালো হয়।
ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন বসু বলেন, মানুষ বেড়াতে যেতে চাইছেন। কিন্তু সবাই যে বেরনোর জন্য মানসিক জোর বা সাহস পাচ্ছেন, তা নয়। আমরাও চাই না সরকার সব নিয়ন্ত্রণ তুলে সমস্ত খুলে দিক। তাতে যদি নতুন করে সংক্রমণ বিরাটভাবে মাথাচাড়া দেয়, তাহলে সবারই মুশকিল। কারণ যে পরিস্থিতি চলছে, করোনার ভ্যাকসিন আসা এবং তা সবাইকে দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও সাত থেকে আট মাস সময় লেগে যাবে। এক্ষেত্রে আমরা শুধু যে ব্যবসা দেখব, তা নয়। মানবিকতাও বড় ব্যাপার। তাই আমরা কিন্তু বিরাট মাপের ব্যবসা এখনই চাই না। অন্তত অফিস খোলা ও কর্মীদের বেতন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক, এটাই কাম্য। পশ্চিমবঙ্গের দরজায় কড়া নাড়ছে বিধানসভা ভোট। ফলে আমরা বুঝতে পারছি গ্রীষ্মকালীন পর্যটন অনেকটাই মার খাবে। তাই সরকার পর্যটনের প্রচারে জোর দিলে আখেরে আমাদের সবার লাভ।
হিমালয়ান হসপিট্যালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালের কথায়, পুজোর সময় পর্যটকরা পাহাড়ে গিয়েছিলেন ছুটির দিনগুলিতে। অফ বিট পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভিড় ছিল। হোমস্টেগুলিও ওই ক’দিন ভালো ব্যবসা পেয়েছে। ব্যবসা হয়েছে ডুয়ার্সেও। কিন্তু তারপর আবার সবকিছু থমকে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে পর্যটকরা গাড়িতে যেতে ভরসা পাচ্ছেন না। তাই দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দারা দিঘা বা মন্দারমণিতে যতটা ভিড় জমাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গে তার ছিটেফোঁটাও নেই। পরিস্থিতি এমনই, আমাদের মূলধনে হাত পড়ছে। এদিকে, শিল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পে যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তাতে পর্যটন শিল্পের জন্য কিছুই নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নিজেই পর্যটনের জন্য এগিয়ে এলে, সেটাই শিল্পকে চাঙ্গা করবে।