কালীপূজোতে বাজি না পোড়ানো মানে কার্যত আত্মহত্যা থেকে বাঁচা
সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি আ্যণ্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং আ্যণ্ড রিসার্চ (SAFAR) জানায় গত সপ্তাহে রাজধানী দিল্লির গাজিয়াবাদ এলাকায় বাতাসের গুণমানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স) ছিল ৫০৮। যার অর্থ দিল্লির বাতাস এই মুহূর্তে বিষময়। কলকাতার সর্বোচ্চ সূচক গত সপ্তাহে পাওয়া যায় হাওড়ার ঘুসুরিতে। যা যথেষ্ট আতঙ্কের। সেখানকার সূচক ৫৫৪। এইসঙ্গে শহরের অন্যান্য একাধিক জায়গায় সূচকের মান চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর।
কলকাতার বাতাস হয়ে উঠেছে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর। গত সেপ্টেম্বরে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক দেখিয়েছেন যে বাতাসে প্রতি ঘন মিটারে ২.৫ মাইক্রন বা তার বেশি আকারের ভাসমান কণা মাত্র ১ মাইক্রোগ্রাম বৃদ্ধি পেলে কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেতে পারে ৮ শতাংশ। ওই গবেষক দলের অন্যতম শিয়াও উর অভিমত, বর্তমান সময়ে এ বিষয়ে যেটুকু জানা সম্ভব হয়েছে, তাতে দিল্লির বাতাসে পি.এম ২.৫ এর বেলাগাম বৃদ্ধির কারনে রাজধানীতে কোভিড সংক্রমণ ভয়ঙ্কর হারে বাড়বে এমন আশঙ্কা করাই যায়। উল্লেখ দীর্ঘ মেয়াদী বায়ু দূষণের ফলে ভারতে গত বছর ১০.৬৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল এবং প্রতিমাসে ১.১৬ লক্ষ শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এ দেশে ফুসফুস ও হার্টের নানা রোগের জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। দীর্ঘ মেয়াদী বায়ুদূষণের শিকার যাঁরা, তাঁদের ফুসফুস এমনিতেই অত্যন্ত কমজোরি হয়ে পড়ায় করোনা ভাইরাস তাঁদের সহজেই আক্রমণ করার সুযোগ পায়। শীতে এমনিতেই ভারতের প্রায় সবকটি শহরেই বাতাসের গুনমানের সূচক যথেষ্ট বাড়ে। বাতাস হয়ে ওঠে অত্যন্ত দূষিত। এমতাবস্থায় দীপাবলী, কালীপূজা বা ছটপূজার নামে যথেচ্ছ বাজি পোড়ানো মানে কোভিডের লাগামছাড়া সংক্রমণের সুযোগ করে দেওয়া। যদিও এ রাজ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে বাজি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বাজির ধোঁয়া একজন সুস্থ মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা ন্যূনতম কয়েকটি পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
সব থেকে নিরাপদ মনে করা হয়ে থাকে যে সাপবাজিকে, সেই সাপবাজি মাত্র ৯ সেকেন্ড পোড়া মানে প্রতি ঘন মিটার বাতাসে পি.এম. ২.৫ এর মাত্রা ৬৪, ৫০০ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছে যাওয়া। অর্থাৎ ৯ সেকেন্ড সাপবাজির ধোঁয়ায় দাঁড়ানো মানে ৫০০ সিগারেটে যে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি ডেকে আনা। একই ভাবে ৪৮ সেকেন্ড কালিপটকা পোড়ানো মানে প্রতি ঘন মিটারে ৩৮৫৪০ মাইক্রোগ্রাম পি.এম. ২.৫ কণা ছড়িয়ে দেওয়া। যা ৩০০ সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর। বাজি ছাড়াই ভারতের বেশির ভাগ শহরের বাতাসে এমনিতেই পি.এম. ২.৫ এর স্বাভাবিক পরিমাণের থেকে অনেকগুণ বেশি। দেখা গেছে ফি বছর কালীপূজার রাতে বাতাসের গুণমানের সূচক কম করে ৫০ গুণ খারাপ হয়। ফলে কোভিড অতিমারির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাজি পোড়ানোর আয়োজন শুধুমাত্র চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই নয়, কার্যত নিশ্চিত আত্মহত্যার সামিল।