বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

অর্থনীতির হাল ফেরাতে প্রয়োজন নগদের যোগান ও পরিকাঠামোয় লগ্নি, মত অর্থনীতিবিদদের

November 16, 2020 | 3 min read

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম আপাত মন্দা (Technical Recession) দেখা দিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দেশের জিডিপি ৮.৬ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। দেশের এই আপাত বা সাময়িক মন্দা নিয়ে একটি সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে ২৭ নভেম্বর। পরপর দুটি কোয়ার্টারে জিডিপি (GDP) সংকুচিত হলে অর্থনীতি মন্দার কবলে বলে ধরা হয়। আর যদি সেই মন্দা সাময়িক হয় অর্থাৎ তার রেশ কাটিয়ে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তবে তাকে টেকনিক্যাল রিসিশন বা আপাতমন্দা বলা হয়। চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় কোয়ার্টার থেকে অর্থনীতি বৃদ্ধির মুখ দেখতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) সমীক্ষা রিপোর্টে একে আপাতমন্দা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্র মে মাসে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ ১.০, অক্টোবরে ২.০ ঘোষণা করেছিল। এরপর গত বৃহস্পতিবার আত্মনির্ভর ভারত অভিযান ৩.০ ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এই ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করলে সরকার ভর্তুকি দেবে। এই ক্ষেত্রে সরকার কর্মী এবং সংস্থা উভয়েরই পিএফ খাতের ১২ শতাংশ টাকা ২ বছর পর্যন্ত সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। তবে মোট কর্মীসংখ্যা ১০০০ জন পর্যন্ত হলে তবেই এই সুবিধা মিলবে। এমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম ২০২১ (Emergency Credit Line Guarantee Scheme ) সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্প সংস্থাগুলি এর সুবিধা পাবে। ইতিমধ্যেই ২.০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই প্রকল্পে।

কিন্তু অর্থনীতির হাল ফেরাতে এই প্যাকেজ পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। অর্থনীতির অধ্যাপক শৈবাল কর বলেছেন, আত্মনির্ভর ভারত অভিযান তৃতীয় পর্বের ঘোষণায় সংগঠিত ক্ষেত্রের কোম্পানির কর্মীদের শর্তসাপেক্ষে প্রভিডেন্ড ফান্ডের জন্য একটা সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটা খানিকটা কপিবুক পদ্ধতি। এতে কোম্পানির খরচ কিছুটা কমবে। আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট, সামাজিক সুরক্ষা খাতে কোম্পানি কর্মীদের যে অর্থ দেয়, তা দু’ বছর বহন করবে সরকার। কিন্তু মনে রাখতে হবে পরিসংখ্যাণে যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে অতিমারীতে প্রায় ১২ কোটি চাকরি গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রফিডেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে এই আর্থিক সহায়তা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে কতটা কাজ দেবে, সে সম্পর্কে কোম্পানিগুলিই নিশ্চিত নয়। এর সুদূর প্রসারী কোনও প্রভাব হয়ত থাকবে, এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু এই মুহুর্তে যেটা প্রয়োজন ছিল, তা হল সাধারণ মানুষের কাছে সরাসরি কিছু আর্থিক প্যাকেজ পৌঁছে দেওয়া, যাতে তাঁরা সরাসরি বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

কপিবুক বলতে গেলে প্রথাগতভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে অন্য অনেক পদ্ধতি অনুসরণ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার। এ ধরনের পদ্ধতির মধ্যে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য সরাসরি কোম্পানিগুলিকে ইনসেনটিভ (Incentive) বা বেনিফিট দানের মতো পদক্ষেপ বাদ চলে গিয়েছে। এমনটা করলে কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হতে পারত। কারণ, এটা অনস্বীকার্য যে, বেকারত্ব ও চাকরি হারানোই এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

তিনি বলেছেন, মানুষের হাতে অর্থ এলে তাঁরা এই মুহুর্তে বাজারে খরচ করবেন। ফলে চাহিদা বাড়বে। উৎপাদনের চাকা গড়াবে। ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই হবে, কিন্তু এই মুহুর্তে যাঁর চাকরি নেই, তিনি সামাজিক সুরক্ষার থেকে অনেক বেশি ভাববেন সংসার চালানোর কথা। এমনও তথ্য সামনে আসছে যে, অনেকেই প্রভিডেন্ট ফান্ড (Provident Fund) থেকে টাকা তুলে খরচ চালাচ্ছেন। কারণ, তাঁর অন্য কোনও পুঁজি নেই। ব্যাঙ্কে সুদের হারও কমে গিয়েছে। তাই তার থেকে টাকা তুলে সংসার চালানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সরাসরি নগদ পৌঁছে দেওয়া গেলে তা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ত হতে পারত।

অর্থনীতিদবিদ অভিরূপ সরকার বলেছেন, মন্দার মধ্যে ঢুকে গেছি। এটা সত্যি কথা। এর থেকে বেরোতে গেলে বড় প্যাকেজ সরকার, কোনও সন্দেহ নেই। এই প্যাকেজের দুটি দিক রয়েছে। এরমধ্যে একটি হল অর্থনৈতিক পুণরুজ্জীবন (Revival), দ্বিতীয় হল সার্ভাইভাল। অর্থাৎ, অর্থনীতি বেহাল হয়ে পড়লে ফলে গরিবরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই তাঁদের সাহায্যের জন্য এই পদক্ষেপ। সার্ভাইভাল-এর ক্ষেত্রে একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গরিব যোজনার মতো প্রকল্প রয়েছে. কিন্তু এই প্রকল্পগুলিতে আরও বেশি টাকা দিলে ভালো হত। কারণ, এই সার্ভাইভাল তো আছেই, সেইসঙ্গে গরিবরা নোট বাতিলের সময় থেকেই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন. হাতে টাকা পেলে খরচা করতে পারতেন। তাতে অর্থনীতি একটু চাঙ্গা হতে পারত।

তিনি বলেছেন, পরিকাঠামোয় লগ্নি করলে দুটো সুবিধা। প্রথমত, সরাসরি কর্মসংস্থান হবে। দ্বিতীয়ত- বেসরসকারি লগ্নিকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। কারণ, উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এই মন্দার থেকে বেরোতে একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। পরিকাঠামোয় একটা বড় ধরনের ব্যয় দরকার ছিল। এটাই সঠিক দিকনির্দেশিকা হতে পারত। সেটা এখন অবধি দেখতে পারছি না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Indian Economy, #Govt Package

আরো দেখুন