রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

সৌমিত্রর ছবির উপর জুতোর বিজ্ঞাপন! গণশক্তির শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে নিন্দার ঝড়

November 16, 2020 | 3 min read

বামপন্থী (Communist) যারা সবসময় নিজেদের শিক্ষা, রুচি, সৃজনশীলতা নিয়ে বড়াই করে। কিন্তু, ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) বিভিন্ন সময়ে মানুষ দেখেছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত রূপ। আজই তাদের দলের দৈনিক পত্রিকা গণশক্তিতে (Ganashakti) হেডলাইন করেছে গতকাল প্রয়াত বামপন্থী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) মৃত্যু নিয়ে। এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু, তার ফটো এবং নামের অপরেই আড়াআড়িভাবে পুরো পাতা জুড়ে আছে জুতোর বিজ্ঞাপন। এ কীরকম সম্মান? এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তবে এর থেকেও কুচ্ছিত আক্রমণের শিকার হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে নেতাজী থেকে উত্তম কুমার।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) প্রসঙ্গে বামপন্থীদের কেমন মনোভাব ছিল ?

২০১৩ সালের ২৫-বৈশাখে প্রকাশিত ” আনন্দবাজার পত্রিকা “-র সম্পাদকীয়র কিছুটা অংশ :
” উনিশশো চল্লিশের দশকের শেষে ভবানী সেন সুবিখ্যাত প্রবন্ধটি লেখেন, যাহাতে ঘোষিত হয় রবীন্দ্রনাথ এক জন পুরাদস্তুর ‘বুর্জোয়া’ সাহিত্যিক, তাঁহার রচনা বিপথদিশারী, ‘আবর্জনা’য় নিক্ষেপযোগ্য। বাস্তবিক, কমিউনিস্ট রবীন্দ্র-বীক্ষার এই ধারাটি এই প্রবন্ধেরই দান! তৎপরে গোপাল হালদার, সুশোভন সরকার প্রমুখ চিন্তকরা রবীন্দ্র-সাহিত্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করিয়াছেন, কিন্তু তদ্দ্বারা কমিউনিস্ট-রবীন্দ্রবিরোধিতার ধারাটির পরিবর্তন হয় নাই। আশির দশকে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়-স্তর হইতে ‘সহজ পাঠ’ উঠাইয়া দিবার সময়ও বিপ্লবী মতাদর্শের সহিত রবীন্দ্ররচনার ‘জমিদারি’ সংস্কৃতির দূরত্বের দোহাই দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। ২০১১ সালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিলাপ শোনা গিয়াছিল, হায়, দলের ‘বামন’-সুলভ নেতাদের দৌলতেই দলে রবীন্দ্র-হেনস্তার এই রমরমা। তবে গণতন্ত্রচারী ভূমিতে বিপ্লবী মতাদর্শই তো শেষ কথা নয়, সবার উপরে আছে ভোটের বালাই। তাই বড় নেতারা যাহাই বলুন না কেন, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রশতবর্ষেও চুপচাপ নানা অনুষ্ঠানে মাতিয়া উঠেন ছোট নেতারা। ১৯৭৭-পরবর্তী বাংলায় পাড়াতুতো কমিটিগুলি (র)বীন্দ্র-(সু)কান্ত-(ন)জরুল সন্ধ্যার আয়োজন শুরু করে। দুর্জনে বলিয়া থাকেন, বাম প্রতিপত্তি-সূর্য মধ্যগগনে থাকিবার সময় এমন স্লোগানও নাকি বাঙালি শুনিয়াছে, ‘রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবি করল কে/ সি পি এম, আবার কে!’ ”

http://archives.anandabazar.com/archive/1130509/9edit2.html

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর (Netaji Subhash Chandra Bose) সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিলো ?

কমিউনিস্টরা (যাঁদের একটা বড় অংশ ছিলেন বাঙালি) নেতাজিকে ‘তোজোর কুকুর’ বলেছিলেন। ১৯৪২-এ কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘পিপল’স ওয়র’-এ ছাপা হয় একের পর এক কার্টুন। কোথাও গাধারূপী সুভাষ বোসের পিঠে বসে সম্রাট তোজো। কোথাও ক্ষুদ্রকায় সুভাষচন্দ্রের হাত ধরে এগিয়ে আসছেন জাপানের বাহিনী। কোথাও কুকুররূপী সুভাষকে মাইক্রোফোনের সমানে তুলে ধরেছেন গোয়েব্ল্স।

http://archives.anandabazar.com/…/1121230/30rabipro1.html

মহানায়ক উত্তম কুমারকে (Uttam Kumar) কি চোখে দেখতেন বামপন্থীরা ?
লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লিখেছেন, উত্তমকুমারের শেষ যাত্রাতে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি এবং তার মরদেহ রবীন্দ্রসদনেও রাখতে দেওয়া হয়নি।

” তাঁর শেষ যাত্রার মিছিলটাও স্মরণে আছে। কত মানুষ যে সে-দিন নেমেছিল রাস্তায়। সবাই ভাবছে, পর্দার কোনও নায়ক নয়, তার এক আপনজন যেন চলে গেলেন। আমার ছোট ভাই বেণু, ওরফে মিলন তো কেঁদেকেটে একসা। খালি পায়ে হাঁটল মিছিলে, গেল শ্মশান অবধি। এবং পাক্কা এগারো দিন অশৌচ পালন করল। এখনও সে উত্তমকুমারের মৃত্যুদিনে নিরামিষ খায়। একত্রিশ বছর পরেও। ভাবতে খারাপ লাগে আমাদের সেই উত্তমকুমারের শবদেহ রবীন্দ্রসদন চত্বরে আনতে দেওয়া হয়নি। সরকারের তরফ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোরও কোনও বন্দোবস্ত ছিল না। অবশ্য তাতে কিছু আসে যায় না। তিনি আছেন। বাঙালির অন্তরে আছেন। থাকবেনও। ”

http://archives.anandabazar.com/archive/1110723/24rabipro.html

কিন্তু কেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের তরফ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি?
” বর্তমান’ ও ‘সংবাদ প্রতিদিনে’র প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক অশোক বসুর লেখা ‘মহানায়ক’ বই থেকে জানতে পারা যায় :

“টলিউডে চলচ্চিত্র শিল্পীদের জন্য অভিনেতৃ সংঘ গড়ে উঠেছিল মূলত ছবি বিশ্বাসের উদ্যোগে৷ কিন্তু সেই অভিনেতৃ সংঘ ভেঙে পৃথক সংগঠন গড়তে বাধ্য হয়েছিলেন উত্তমকুমার৷ তার কারণ, ক্রমে অভিনেতৃ সংঘ মূলত চলে গিয়েছিল বামপন্থীদের দখলে৷ তাতে কিছু অসুবিধা ছিল না৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই তথাকথিত বামপন্থী শিল্পীরা অনেকেই ঘোঁট পাকিয়ে উত্তমকুমারের পিছনে লেগেছিলেন৷ এমনকী, তাঁর ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে চোর বদনাম দিয়ে তাঁরা পোস্টারও সাঁটিয়ে দিয়েছিলেন৷ এতে উত্তমকুমার অত্যন্ত দুঃখ পান৷ তার কারণ, যে কারও বিপদে-আপদে তিনি অকাতরে সাহায্য করতেন, কে কী সেসব ছিল তাঁর হিসাবের বাইরে৷ এর পরে শিল্পীদেরই অনেকের পরামর্শে তিনি আলাদা সংগঠন গড়ার পদক্ষেপ নেন৷ ১৯৬৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতেই টালিগঞ্জের শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানান উত্তমকুমার৷ সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, শিল্পী সংসদ নামে একটি আলাদা সংগঠন গড়ে তোলা হবে৷ উদ্দেশ্য, মূলত বাংলার অসহায় এবং দুঃস্থ শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া৷ ১২৫ নং ধর্মতলা স্ট্রিটে (অধুনা লেনিন সরণি) অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের দফতরেই গড়া হয় শিল্পী সংসদের অফিস৷ উত্তমকুমার হন নতুন সংগঠনের সভাপতি৷ আমৃত্যু সেই পদে ছিলেন তিনি৷ আর তাঁর সেই উদ্যোগে তাঁর পাশে ছিলেন বিকাশ রায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারাও৷ যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে মার্কসবাদে বিশ্বাসী ছিলেন৷ অনিল চট্টোপাধ্যায় তো পরে বামফ্রন্টের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে একবার চৌরঙ্গির বিধায়কও হন৷
শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, এ রাজ্যের তথাকথিত মার্কামারা বামপন্থীদের কাছে যে উত্তমকুমার বরাবর ব্রাত্যই ছিলেন, ১৯৭৭ সালে সিপিএম পরিচালিত বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে৷ উত্তমকুমারের মৃত্যুর পরের শোকমিছিল কোনও মিছিল ছিল না৷ ছিল জনসমুদ্র৷ তবু মহানায়কের মরদেহ রবীন্দ্র সদনে (তখনও নন্দন হয়নি) ঠাঁই পায়নি৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী৷ তাঁর আশীর্বাদে তখনই গণ্ডায় গণ্ডায় বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ঢালাও অনুদান পাচ্ছেন৷ কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের চোখে উত্তমকুমার এমন কোনও ‘বিশিষ্ট’ মানুষ ছিলেন না যাঁর দেহ সাধারণ মানুষের দেখার জন্য রবীন্দ্র সদনে রাখা যেতে পারে৷ ”

Source : https://magazine.kolkata24x7.com/…/23-10-2016…/

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Soumitra Chatterjee, #Ganashakti, #Communist

আরো দেখুন