২৫ টাকা দরে আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত বহাল রাজ্যের
বাজারে আলুর মূল্য নিয়ন্ত্রণে নীরব কেন্দ্র। উত্তর মেলেনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) চিঠিরও। তবে হাত গুটিয়ে বসে নেই রাজ্য সরকার। ক্রেতাদের সুরাহা দিতে ২৫ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এর জন্য ‘সুফল বাংলা’ সহ অন্যান্য সরকারি স্টলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। যাতে করে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে সুলভে আলু পেতে পারেন সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার শুক্রবার জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতির আগে সরকারি উদ্যোগে ১০ লক্ষ টন আলু মজুত করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দূরদর্শিতারই সুফল মিলছে এখন।
সম্প্রতি অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধনী এনে বাজারের নিয়ন্ত্রণ আলগা করে দিয়েছে কেন্দ্র। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ যত খুশি মজুত করা যাবে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও বাজারে রাশ টানার ক্ষেত্রে হাত-পা বাঁধা পড়েছে রাজ্যগুলির। আর তাতেই ‘মহার্ঘ’ হয়ে উঠছে আলু-পেঁয়াজ। এখানেই জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন মমতা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে বুধবার চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী এও দাবি ছিল, ‘যদি দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন, তাহলে রাজ্যের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন।’
সেই চিঠি পাঠানোর পর পেরিয়ে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। কেন্দ্রের তরফে কোনও উত্তর আসেনি। এদিকে, বাজারেও আলুর দর সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। জ্যোতি কিংবা চন্দ্রমুখীকে ছোঁয়া যাচ্ছে না। তাই ২৫ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রির প্রক্রিয়া চালু রেখে ক্রেতাকে সুরাহা দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। ‘সুফল বাংলা’ (Sufal Bangla) সহ সরকারের বিভিন্ন স্টল থেকে এই আলু বিক্রি করা হবে। রাজ্যে এই মুহূর্তে সুফল বাংলার স্টল রয়েছে ৬৩০টি। চাহিদা মেটাতে আরও কয়েকটি স্টল খোলা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
রাত পোহালেই কালীপুজো, দীপাবলি। তারপরেই ভাইফোঁটা ও ছটপুজো। উৎসব মরশুমে স্বভাবতই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহ শাক-সব্জির চাহিদা বাড়ে। অথচ, বাজার অগ্নিমূল্য। তাই সরকারি মূল্যে আলু (Potato) বিক্রির সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে বাধ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনটাই নবান্ন সূত্রে খবর। মমতার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। খুচরো বাজারে আলুর দর এখন ৪০-৪৫ টাকা। অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া মজুতে সরকারি বিধিনিষেধ নয়। বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছে, আলু-পেঁয়াজের দর আর কত বাড়লে ‘অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি’র গণ্ডি টপকাবে? এমনিতেই কোভিড পরিস্থিতিতে ‘দিন আনি, দিন খাই’ পরিবারে আর্থিক অনটন এখন চরমে। তার উপর বাজারে দামের দাপটে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। সেই জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ ফের প্রমাণ করে দিল—কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুধু মুখে নয়, কাজেও।