সৌমিত্রের স্মৃতি বিহ্বল জলপাইগুড়ি
অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জলপাইগুড়ি শহর ছিল বেশ প্রিয়। তাই বাগডোগরা বিমানবন্দরে বিমান ধরতে না পেরে তিনি একবার শিলিগুড়িতে না থেকে জলপাইগুড়ি ফিরে এসেছিলেন। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহর থেকে অনুষ্ঠানের ডাক পেলে তিনি পারতপক্ষে ফেরাতেন না। তা সাদরে গ্রহণ করে চলে আসতেন। নাটক, আবৃত্তির অনুষ্ঠান করতে তিনি বহুবার এখানে এসেছেন। পাশাপাশি ডুয়ার্সের নানা জায়গায় তিনি বিভিন্ন সিনেমার শুটিং করতে এসেছেন। তাই তাঁর প্রয়াণের খবর আসার পর থেকেই মন ভালো নেই জলপাইগুড়ি তথা ডুয়ার্সের। ডুয়ার্সে বেশ কয়েকদিন থেকে তিনি ‘আবার অরণ্যে’ সিনেমার শুটিং করেছিলেন। কয়েক বছর আগে একটি আবৃত্তির অনুষ্ঠান করতে তিনি জলপাইগুড়ি এসেছিলেন। সেটাই ছিল তাঁর শেষবার আসা। কোচবিহারের রবীন্দ্রভবনেও তিনি নাটক করেছেন।
জলপাইগুড়ির সংস্কৃতি কর্মী জ্যোতিপ্রসাদ রায় বলেন, কয়েক বছর আগে আমাদের একটি অনুষ্ঠানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Soumitra Chatterjee) আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি এসেছিলেন। ফেরার সময়ে তাঁর বাগডোগরা থেকে বিমানে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু সময়ের হেরফেরে বাগডোগরা পৌঁছেও সেই বিমান ধরতে পারেননি। সেদিন তিনি অনায়াসেই শিলিগুড়িতে থেকে যেতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি জলপাইগুড়িতে ফিরে এসেছিলেন। এক রাত সার্কিট হাউসে কাটিয়ে পরদিন বিমান ধরেছিলেন। এর থেকেই প্রমাণ হয়, তিনি জলপাইগুড়িকে কতটা ভালোবাসতেন। সেসময় তিনি আমার বাড়িতেও এসেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি নিরহংকারী ছিলেন।
জলপাইগুড়ির অপর নাট্যকর্মী সন্তু চট্টোপাধ্যায় বলেন, সৌমিত্রবাবু জলপাইগুড়িতে এসে আর্যনাট্যের মাঠে নাটক করেছিলেন। ডুয়ার্সেও সিনেমার শুটিং করতে এসেছেন বহুবার। কলকাতায় বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, তিনি অমায়িক মানুষ ছিলেন। ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, ‘আবার অরণ্যে’ সিনেমার শুটিং করতে তিনি ডুয়ার্সে এসেছিলেন। মেটেলি ব্লকের চালসার টিয়াবন ফরেস্টে সেই শুটিং হয়। সেসময় তিনি একটানা বেশ কয়েকদিন চালসার একটি রিসর্টে ছিলেন। এছাড়াও চিলাপাতা ফরেস্টে ওই সিনেমার শুটিং হয়েছিল। সম্ভবত ২০০৮ সাল নাগাদ তিনি এখানে এসেছিলেন। তিনি আরও কিছু সিনেমার শুটিং করতে নানা সময়ে ডুয়ার্সে এসেছেন। ডুয়ার্সের প্রকৃতিতে শুটিং করা সম্পর্কে তাঁর ভালোলাগা ছিল। তা নিয়ে তিনি সেসময় ভালো মন্তব্যও করেছিলেন। তাঁর প্রয়াণের খবর আসার পর থেকে আমাদের মন ভালো নেই। জলপাইগুড়ি গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সম্পাদক সুশান্ত নিয়োগী বলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ২০০৭-০৮ সাল নাগাদ শেষবার জলপাইগুড়ি এসেছিলেন। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সরোজেন্দ্র দেব রায়কত কলাকেন্দ্রে আবৃত্তির অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। সেখানে তিনি আবৃত্তি করেছিলেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিলেন শ্রোতারা। তাঁর প্রয়াণে আমরা শোকস্তব্ধ। মালবাজারের নাট্য নির্দেশক সুধাংশু বিশ্বাস বলেন, ডুয়ার্স নাট্য উৎসব উপলক্ষে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কয়েক বছর আগেই ওদলাবাড়ির ইউনিয়ন ক্লাব মঞ্চে এসেছিলেন। সেখানে তিনি ‘তৃতীয় অংক অতএব’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। সালটা ১৯৯৮। জলপাইগুড়ির রবীন্দ্রভবনের গ্রিন রুমে নাটকের স্ক্রিপ্ট ঝালিয়ে নিচ্ছেন সৌমিত্র।