দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

প্রাচীন শ্রীচৈতন্যের মন্দিরকে ঘিরে পর্যটনের পরিকল্পনা

November 17, 2020 | 2 min read

দীঘার কাছে পায়া মেদিনীপুর গ্রামে দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দিরকে (Chaitanya Mahaprabhu Temple) কেন্দ্র করে পর্যটনের পরিকল্পনা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতি। বর্তমানে পায়া মেদিনীপুর এলাকার বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাপ্রভুর বিশালাকার মন্দির গড়ে তোলার কাজ চলছে। মহাপ্রভুকে ঘিরে এলাকার বাসিন্দাদের আবেগ চোখে পড়ার মতো। পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের মতে, পায়া মেদিনীপুরে চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দিরকে কেন্দ্র করে পর্যটনের পরিকাঠামো তৈরি হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে যেমন এই এলাকার গুরুত্ব বাড়বে, তেমনি দীঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা এখানে এসে মন্দির দর্শনের পাশাপাশি দু’দণ্ড সময় কাটিয়ে যেতে পারবেন। সামগ্রিকভাবে প্রত্যন্ত এই এলাকার গুরুত্ব অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। ওল্ড দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের পাশাপাশি এই মহাপ্রভুর মন্দির তৈরি হলে তা পর্যটক সহ সকলের কাছে বিরাট আকর্ষণের বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারে।

প্রসঙ্গত, দীঘা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই পায়া মেদিনীপুর গ্রাম (Midnapur)। এলাকাটি পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে রয়েছে। অনেকে বলেন, শ্রীচৈতন্য নবদ্বীপ ধাম থেকে নীলাচল যাওয়ার পথে পায়া মেদিনীপুর গ্রামে বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং শাকান্ন গ্রহণ করেছিলেন। আবার অনেকে বলেন, গ্রামে এক ব্রাহ্মণের বিধবা মেয়ে বসবাস করতেন। তাঁকে একদিন মহাপ্রভু স্বপ্নাদেশ দেন, দীঘার সমুদ্রে একটি কাঠ ভেসে এসেছে। সেই কাঠ থেকে মূর্তি তৈরি করে তুই আমার পুজো কর। তিনি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সেই কাঠ সংগ্রহের পর মূর্তি তৈরি করে একটি কুঁড়েঘরে মহাপ্রভুর পুজো শুরু করেন। যা গ্রামবাসীদের চোখে পড়ে। পরে মাটির মন্দির এবং তার আরও পরে চৈতন্য মহাপ্রভুর পাকা মন্দির স্থাপন করে গ্রামবাসীরা পুজো করতে থাকেন। মহাপ্রভুর পুজো দেওয়ার জন্য দুই মেদিনীপুর জেলা তো বটেই, অন্যান্য জেলা থেকেও ভক্তরা আসেন। প্রতিদিন কম করে ২০-২৫ জন মহাপ্রভুর কাছে পায়েস বা অন্যান্য ভোগ নিবেদন করেন। বর্তমানে ছোট একটি মন্দিরে অধিষ্ঠান মহাপ্রভুর। তাই মন্দিরের উত্তর দিকে বিশালাকার মন্দির গড়ার কাজ জোরকদমে চলছে। প্রতি বছর দোলপূর্ণিমার সময় এখানে বিরাট মেলা বসে। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেলায় ধুনচি মাথায় দিয়ে ঘটোত্তোলন বিশেষ আকর্ষণ।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা চৈতন্য মহাপ্রভু মন্দির কমিটির সম্পাদক পবিত্র বেরা বলেন, আমাদের আরাধ্য দেবতা হলেন মহাপ্রভুই। তবে এই এলাকার আকর্ষণ বাড়াতে সরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। মন্দিরের কাছে বড় পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে খুব ভালো হবে। পাশাপাশি মন্দিরের জায়গায় পার্ক সহ অন্যান্য পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। তাহলে পর্যটকরা বেশি করে আসবেন। অবশ্য বাইরে থেকে আসা মানুষজনের জন্য মন্দির পরিচালন কমিটির পক্ষ থেকে আমরা নিজস্ব গেস্ট হাউস তৈরি করছি। আমাদের আর একটা দাবি হল, অলঙ্কারপুর থেকে বসন্তপুর যাওয়ার রাস্তায় পায়া মেদিনীপুর থেকে রামপুর পর্যন্ত ঢালাই রাস্তাটিকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় আনা হোক। পিচ রাস্তা তৈরি হলে খুব সহজেই দীঘায় আসা পর্যটকরা এই মন্দির দর্শন করতে বা পুজো দিতে আসতে পারবেন। আমরা সমস্ত দাবি প্রশাসনিক মহল এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরেছি।

রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিতাইচরণ সার বলেন, পরিকল্পনা তো রয়েছেই। আমরা সেখানে কিছু পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোচনা করছি। তবে বিষয়টি এখনও পরিকল্পনা এবং আলোচনার স্তরেই রয়েছে। মন্দির গড়ে তোলার কাজ শেষ হয়ে যাক। তারপর আমরা এব্যাপারে এগব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#midnapore, #Chaitanya Mahaprabhu Temple

আরো দেখুন