স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

হাইপক্সিয়া কী? কেন হয়?

November 18, 2020 | 2 min read

করোনাভাইরাসের (Novel Coronavirus) সংক্রমণ যত বেড়েছে, ঘরে ঘরে অক্সিমিটার (Oximeter) রাখার প্রবণতাও তত বেড়েছে। কোভিড-১৯ (Covid-19) এর অন্যতম উপসর্গ যেহেতু শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া, তাই সাধারণ মানুষ সচেতন হয়েছেন। রক্তে অক্সিজেন (Oxygen) কমে যাওয়াকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয়, হাইপক্সিয়া। শুধু কোভিড-১৯ নয়, অন্যান্য অসুখেও হাইপক্সিয়া (Hypoxia) হতে পারে। এটি কোনও রোগ নয়, উপসর্গ। তবে এই উপসর্গ এতটাই সিরিয়াস যে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর মস্তিষ্কে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

কাদের হাইপক্সিয়ার সম্ভাবনা বেশি?

একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০-১০০ শতাংশ থাকা উচিত। সেটা কম হয়ে গেলেই সমস্যা। ক্রনিক  (Chronic) অসুখের কারণে কারও হাইপক্সিয়া হতে পারে, আবার আচমকাই কারও মধ্যে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। সিওপিডি (COPD) (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডি‌জ়িজ়), অ্যাজ়মার (Asthma) রোগীদের ক্ষেত্রে হাইপক্সিয়া দেখা যায় বেশি। কারণ এঁদের শরীরে এমনিই অক্সিজেন কম জেনারেটেড হয়। তাই কোনও কারণে যদি রোগের প্রকোপ বাড়ে তখন শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়। সে ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, অক্সিজেনের লেভেল ৯০-এর নীচে নেমে গিয়েছে, তখন দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

অ্যানিমিয়ার (Anemia) রোগীদের মধ্যেও এই উপসর্গ দেখা যায়। আমাদের শরীরে রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন (Haemoglobin) অক্সিজেন বহন করে। অ্যানিমিয়ার রোগীদের শরীরে এমনিতেই অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। যে কারণে এঁদের নিয়মিত ব্লাড টেস্ট করানো গেলে ভাল। রক্তে হিমোগ্লোবিন খুব কমে গেলে, আগাম ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

এ ছাড়া দমবন্ধ করা জায়গায় থাকার ফলেও হাইপক্সিয়া হতে পারে। কোভিড বিপর্যস্ত এ সময়ে ভিড়ভাট্টায় এই সমস্যা বাড়তে পারে বলে মত চিকিৎসকদের।

কারও হার্টে ব্লকেজ (Heart Block) থাকলে উপসর্গ হিসেবে হাইপক্সিয়া দেখা যেতে পারে। তখন রোগীর বুকে ব্যথা হবে।

দুর্ঘটনাজনিত কারণেও এটি হতে পারে। যেমন, শ্বাসনালিতে কোনও খাবার আটকে গিয়ে হাইপক্সিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

নিয়মিত মনিটর (Monitor) করা জরুরি

হাইপক্সিয়ার কারণেই করোনা রোগীর ক্ষেত্রে নিয়মিত অক্সিজেন লেভেল (Level) মনিটর করা হচ্ছে এবং সেই মাত্রা ৯০-এর নীচে নেমে গেলে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাদের কথায়, ‘‘অধিকাংশ করোনা রোগীর কমন উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। এই রোগে ভাইরাসটি ফুসফুসে ঢুকে অ্যালভিওলাই ও ফুসফুসের থলিগুলির ক্ষতি করে। যে কারণে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করার কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে। অক্সিজেনের ঘাটতি যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তা মাথায় আঘাত পর্যন্ত করতে পারে।’’ 

প্রতিকারের উপায়

পরিস্থিতি এখন শাঁখের করাতের মতো। স্বাভাবিক নিয়মে রাস্তায় বেরোলে বা ভিড়ের মধ্যে গেলে মাস্ক পরা আবশ্যিক। কিন্তু ভিড় জায়গা মানে সেখানে অক্সিজেন কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের (Carbon Dioxide) মাত্রা বেশি। সে ক্ষেত্রে মাস্ক পরে থাকলে শ্বাসকষ্ট হবেই। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে কারও বুকে ব্যথা হতে পারে, কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। ‘‘ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরে থাকলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কম হবে। হাইপক্সিয়ার ফলে কারও ব্রেন ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু যথেষ্ট। এই উভয়সঙ্কট তখনই এড়ানো যাবে, যখন মানুষজন ভিড়ের মধ্যে যাবেন না,’’ বললেন ডা. সুবীর মণ্ডল।

যাঁরা নিজেরা গাড়ি চালান, তাঁদের গাড়ির মধ্যে সারাক্ষণ মাস্ক না পরে থাকলেও চলবে বলছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। তবে বাইরের কোনও ব্যক্তি থাকলে মাস্ক পরা উচিত। 

মর্নিংওয়াক এবং শারীরচর্চার সময়েও মাস্ক পরতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকেরা। এতেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Hypoxia

আরো দেখুন