টিকা সংরক্ষণে তৈরি হচ্ছে কোল্ড চেইন এই শহরেও
ভ্যাকসিন সংরক্ষণ। এই লক্ষ্যেই আপাতত তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশীয় এবং বিদেশি, করোনা মোকাবিলায় যত প্রতিষেধক খুব কম সময়ের মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে, তার জন্য দরকার ব্যাপক আকারের পরিকাঠামো। তাই বিমান বন্দরগুলিতে তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ীভাবে ভ্যাকসিন রাখার কোল্ড চেইন ব্যবস্থা। যেখানে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ করা যাবে। পাশাপাশি টিকা আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, অসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিকেও তাদের কার্গো ব্যবস্থাকে ভ্যাকসিন বহনের উপযোগী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য নীতি আয়োগ ও কেন্দ্রের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভ্যাকসিন তৈরি, বিতরণ, কোল্ড চেইন নেটওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ট্যুইটে জানিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের যে সাতটি জায়গায় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অধীন মেডিক্যাল স্টোর ডিপো রয়েছে, সেখানেও ভ্যাকসিন রাখা হবে। প্রাথমিকভাবে কলকাতা, কার্নাল, চেন্নাই এবং মুম্বইয়ের কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোরে কোল্ড চেইন নেটওয়ার্ক তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় হল, কোল্ড চেইন যাতে না ভাঙে। তাহলে প্রতিষেধক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কোনওভাবেই ভ্যাকসিনের গুণমান নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
এখনও পর্যন্ত দেশে-বিদেশে করোনার যে ক’টি ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে, তার মধ্যে একমাত্র আমেরিকার ফাইজার এবং জামার্নির বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন রাখতে হবে মাইনাস ৭০ থেকে ৮০ থেকে সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’র জন্য তৈরি রাখতে হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের স্টোরেজ। এছাড়া মডার্না, নোভাভ্যাকস, ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাকসিন’ থেকে শুরু করে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো যেসব ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলেই চলবে। ভারতে যে সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচি রয়েছে, সেখানে নানাবিধ ভ্যাকসিন এই তাপমাত্রাতেই থাকে। সেই কারণেই ফাইজারের ভ্যাকসিন নিয়ে একেবারেই আগ্রহী নয় ভারত। ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৯৫ শতাংশ নিরাপদ এবং কার্যকরী হওয়া সত্ত্বেও।
অন্যদিকে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সফল হলে বাজারে সাধারণের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় মিলবে বলেই জানিয়েছেন সিরামের কর্ণধার আদার পুনেওয়ালা। যদিও সাধারণের এই ভ্যাকসিন পেতে আগামী বছরের মাঝামাঝি হয়ে যাবে। তবে তার আগেই প্রবীণ নাগরিক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ওই টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই মতো বিদেশে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ফেজ থ্রি ট্রায়ালের অন্তবর্তীকালীন বিশ্লেষণের যে ইতিবাচক রেজাল্ট আসতে শুরু করেছে, তার সঙ্গে ভারতে ব্রিজিং ট্রায়ালের ফলাফল মিলিয়ে ‘ইমার্জেন্সি ইউজে’র জন্য ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) কাছে আবেদন করবে বলে ঠিক করেছে সিরাম। ভারতে ১ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপর এই ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল হচ্ছে।
অন্যদিকে, আইসিএমআরের আবিষ্কারে ভারত বায়োটেকের তৈরি দেশীয় ‘কোভ্যাকসিনে’র ফেজ থ্রির ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে টিকা নিলেন হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ। প্রস্তুতি চলছে। অপেক্ষাও চলছে ভ্যাকসিনের।