করোনা জয়ের পরও দু’মাস থাকতে হবে চেক আপে
করোনা জয়ীদের বাড়ি ফেরার পর আকস্মিক শরীর খারাপ ও মৃত্যু ঠেকাতে অন্তত দু’মাস অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। থাকতে হবে মেডিক্যাল চেক-আপ-এর মধ্যে। শুক্রবার করোনা মোকাবিলার তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক শেষে এমনই সিদ্ধান্ত নিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনা জয়ীদের প্রধানত দু’টি দলে ভাগ করে প্রতিটি দলের জন্য আলাদা নিদান থাকবে। একটি দলে থাকবেন তাঁরা, যাঁদের করোনার সময় রক্ত ও আনুষঙ্গিক রিপোর্টের প্রচুর ওলটপালট হয়েছিল। দ্বিতীয় দলে থাকবেন তাঁরা, যাঁদের করোনা পর্ব কমবেশি ঘটনাবিহীন কেটেছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী বলেন, করোনা জয়ের পরও অন্তত দু’মাস প্রয়োজনীয় চেক আপ ও পরীক্ষার মধ্যে থাকতে হবে। কোনও পরীক্ষা করতে হবে সাতদিন পর, কোনওটাই ১৪ দিন বা এক মাস গেলে। সেজন্য করোনা হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। যে কোনও সরকারি হাসপাতালে গেলেই হবে। এইসব জানিয়ে আগামী সপ্তাহে রাজ্যবাসীর জন্য বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
গত প্রায় এক মাস ধরে একের পর এক করোনা জয়ী বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কয়েকজনের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। কারও ক্ষেত্রে তুমুল শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রম হচ্ছে, কারও সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ হচ্ছে, বহু করোনা জয়ীর আবার হার্টের ছন্দপতন শুরু হয়ে যাচ্ছে, কেউ মারা যাচ্ছেন সাডেন পালমোনারি অ্যাম্বলিজম-এ। মোট কথা করোনা জয় করলেই রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি—এই সোজাসাপটা সমীকরণে আস্থা রাখতে পারছেন না চিকিৎসকমহল থেকে স্বাস্থ্যভবন—কোনও তরফই। প্রয়াত বিশিষ্ট অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনা জয় করার পরও করোনার জন্য মস্তিষ্কের সংক্রমণ বা কোভিড এসকেফেলোপ্যাথিতে মারা যান। এদিনের বৈঠকে কোভিড এনকেফেলোপ্যাথির প্রসঙ্গও ওঠে।
পাশাপাশি করোনা জয়ীদের একাংশের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে ভাইরাসের চারিত্রিক পরিবর্তনের সংযোগ রয়েছে বলেও মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। প্রসঙ্গত, কল্যাণীর নামকরা কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিস্ক-এর দুই বিজ্ঞানী ডঃ পার্থ মজুমদার এবং ডঃ নিধনকুমার বিশ্বাস মাসকয়েক আগে এক গবেষণাপত্রে করোনা ভাইরাসের নানা বিচিত্র রূপ সম্পর্কে পৃথিবীকে অবহিত করেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন উৎস চিনে ‘ও’ টাইপের করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল।
আজকের করোনা ভাইরাসের পিতামাতা বলা যায় সেই ‘ও’ টাইপকেই। যদিও তারপর করোনা নিজেকে দ্রুত পাল্টাতে থাকে। গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে পর্যন্ত ১১ ধরনের করোনা ভাইরাস দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে ভারতসহ বহু দেশেই সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৫১ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘এ২-এ’ ধরনের করোনা মিলেছে। আবার একই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। যেমন, আমেরিকার ওয়াশিংটনে ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘বি-১’ টাইপের করোনা দেখা গেলেও, নিউইয়র্কে ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘এ২-এ’ টাইপের ভাইরাস সংক্রমণ দেখা গিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়বাবু বলেন, মহামারির গোড়ার দিকে বেশ প্রাণঘাতী ও তীব্র ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ হলেও এখনকার ভাইরাসটির চরিত্র কিছুটা আলাদা বলেই মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংক্রমণের পর মৃত্যু কমলে ও সুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আমরা দেখছি, বাড়ির ফেরার পর আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনার ঘটছে। কিছু একটা রহস্য আছেো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল ও ডাঃ সৌমিত্র ঘোষ বলেন, অন্যান্য দেশেও করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সবদিক খতিয়ে গাইডলাইন করা হচ্ছে।