ভারতে কোভিড লকডাউন আবার ফিরছে! বাড়ছে জল্পনা
সংক্রমণের সিঁদুরে মেঘ দেখে ইউরোপ আগেই ফিরেছে। ঝুঁকি নেওয়ার রাস্তায় হাঁটেনি। ব্রিটেন, ইতালি, জার্মানি, স্পেন-সহ ইউরোপের একাধিক দেশে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরু হয়েছে। আনলক পর্বের কয়েক ধাপে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে, ভারতকেও ফের কয়েক কদম পিছোতে হচ্ছে।
গোটা দেশে যে পূর্ণ চেহারায় লকডাউন ফের ফিরছে, এমনটা নয়। তবে, দিল্লি, মুম্বই, জয়পুর, অহমদাবাদ, ইন্দৌরের মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর লকডাউনের পথই অনুসরণ করতে চলেছে। দোকানপাট, ব্যবসাপত্তর, রুটি-রুজি, যানবাহন বন্ধ করে, পুরোপুরি বন্ধের চেহারায় লকডাউন নয়। তবে, কোভিড বিধি মেনে যা হতে চলেছে, তা লকডাউনেরই নামান্তর। এক-একটি শহর এক-এক রকম ভাবে লকডাউন করবে। সেখানকার পরিস্থিতি পরখ করে।
সংক্রমণে কয়েক দিন ধরে নাজেহাল করে, ভারতে করোনায় অ্যাক্টিভ আক্রান্ত কমছে। দৈনিক আক্রান্তের তুলনায় টানা কিছুদিন ধরে সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড জয়ীর সংখ্যা বেশি হওয়ায়, অ্যাক্টিভ আক্রান্ত দেশের মোট আক্রান্তের ৫ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। সেইসঙ্গে সারা দেশে সুস্থতার হার বেড়েছে। কিন্তু, করোনার বিরুদ্ধে এই সাফল্যে চোনা ফেলেছে কয়েকটি শহর। যার সর্বাগ্রে দিল্লি। গুরগাঁও, মুম্বই, অহমদাবাদ, ইন্দোর ও জয়পুরও কেন্দ্রের মাথাব্যথার কারণ।
গত জুন-জুলাইয়ের পর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় নতুন করে এই শহরগুলিতে করোনার বাড়বৃদ্ধি ঘটেছে। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, রাজধানীবাসী সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামাল দিচ্ছে। দৈনিক সংক্রমণে দিল্লি অনেক আগেই মহারাষ্ট্র, কেরালাকে পিছনে ফেলেছে। অক্টোবরের শেষ থেকেই রেকর্ড সংক্রমণ হচ্ছে। সেইসঙ্গে মৃত্যুহারও বেড়েছে। উল্লিখিত বাকি শহরগুলির অবস্থাও সঙ্গিন।
দিল্লি
১৬ দিনে দিল্লিতে করোনা আক্রান্ত ১ লক্ষ, তবে সুস্থও ৯৪,০০০। ভালো কথায় সবসময় কাজ হয় না। আরও স্পষ্ট করে বললে, নিজের স্বার্থে আঘাত না-পড়া পর্যন্ত মানুষ গা করে না। তাই জরিমানার রাস্তায় হাঁটছে দিল্লি। মুখে মাস্ক না-পরলে ৫০০০ টাকার জরিমানা। অন্য কোভিড রুল ভাঙলেও দিতে হবে সমপরিমাণ টাকা। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে ৫০ অতিথি পর্যন্ত ছাড়। তবে, উপার্জনের রাস্তা বন্ধ করে ব্যবসায়ীদের নতুন করে চাপে ফেলতে চান না কেজরিওয়াল। তাই মার্কেট খোলা থাকবে। তবে, প্রচণ্ড কড়াকড়ি থাকছে। লোকজনকে সেখানে সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের (Delhi CM Arvind Kejriwal) কথায়, ‘সামগ্রিক ভাবে যদিও লকডাউন হচ্ছে না, কিছু বিধিনিষেধ তো থাকছেই।’
গুরগাঁও
সদ্যসদ্য স্কুল খুলেছিল। তার মধ্যেই বিপত্তি। দিন কয়েক ক্লাস করতে না করতেই ১৭৪ পড়ুয়া পজিটিভ। নিস্তার নেই শিক্ষকদেরও। কোভিডে আক্রান্ত ১০৭ জন। তড়িঘড়ি রাজ্যের সমস্ত স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেছে হরিয়ানা সরকার। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সমস্ত স্কুল বন্ধ থাকবে।
মুম্বই
বৃহন্মুম্বই পুরসভার আওতায় মুম্বইয়ে যে সমস্ত স্কুল রয়েছে, তার একটিও এ বছর আর খুলবে না। ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত স্থানীয় প্রশাসনের উপর ছেড়ে দিয়েছে। থানেও ঘোষণা করেছে চলতি বছর স্কুল খোলার আর অনুমতি দেওয়া হবে না।
আহমেদাবাদ
শুক্রবার রাত ৯টা থেকেই সম্পূর্ণ কারফিউ (Night curfew) জারি হয়েছে অহমদাবাদে। চলবে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। দুধ ও মেডিসিনের দোকানে ছাড় রয়েছে। সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে ২৩ নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলছে না। রাজকোট, সুরত, ভডোদরায় শনিবার থেকে রাতে কারফিউ জারি।
ইন্দোর
২১ নভেম্বর, শনিবার ,থেকে চালু নাইট কারফিউ। জরুরি পরিষেবা এর আওতাভুক্ত নয়। কারখানা শ্রমিকদের ছাড় রয়েছে। ইন্দোর ছাড়াও ভোপাল, গ্বালিয়র, বিদিশা, রতলমে রাতে কারফিউ। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জানান, সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে লকডাউন হবে না।
জয়পুর
শনিবার থেকে রাজস্থানের সমস্ত জেলা ১৪৪ ধারার আওতায়।