জাতীয় স্তরের সরকার ‘ফেক নিউজ’এর সরকার: তৃণমূল
বেশ কয়েকদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বিভিন্ন নেতানেত্রী ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল ভবনে এসে কেন্দ্রের ব্যর্থতা এবং রাজ্যের সেই একই ক্ষেত্রের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরছেন বাংলার জনসাধারণের জ্ঞ্যাতার্থে। আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার (Kakali Ghosh Dastidar)। স্বাধীনতা সংগ্রামে সবথেকে বেশী অবদান যে বাঙালির, সেই বাঙালিকে যে দল পদে পদে অপমান করে, তাদের নেতাই (Savarkar) ব্রিটিশদের কাছে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দিয়েছিল। নাম না করে এমনই কড়া ভাষায় আজ বিজেপিকে আক্রমণ করেন কাকলি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সারা দেশে একটা ভয়ানক পরিস্থিতি চলছে। জাতীয় স্তর এই মুহূর্তে যে সরকার দেশকে শাসন করছে, সেটি সম্পূর্ণ ফেক নিউজের (Fake News) সরকার। কারখানায় অ্যাসেম্বলি লাইনে যেভাবে গাড়ি তৈরি হয়, এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশে মিথ্যে খবরের অ্যাসেম্বলি লাইন চলছে। এই মিথ্যে সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে তাদের প্রভাবিত করতে খোলা হয়েছে অগুনতি হোয়াটস অ্যাপ (Whats App) গ্রুপ। এই মিথ্যে একাধারে মানুষের, সংবিধানের, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার, সংস্কৃতির ক্ষতি করছে।
তিনি ২০১৪ থেকে পরপর ঘটতে থাকা একের পর এক উদাহরণ তুলে বলেন, এই মুহূর্তে সারা দেশে গণপিটুনি (Mob Lynching), ধর্মীয় ভেদাভেদ (Communal Hatred), নারী নির্যাতন, দলিত (Dalit) নির্যাতন রোজের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ তুলে বলেন, গতকাল গুজরাটের (Gujarat) ভাগনগরে (Bhagnagar) ২২বছরের এক যুবক, যিনি পেশায় অটোচালক, তিনি অটো চালিয়ে কোনও গন্তব্যে পৌঁছে দিতে অস্বীকার করলে উচ্চবর্ণের সেই সওয়ারী তাকে, পিটিয়ে ও ছুরি (Stab) মেরে খুন করে। রোহিত ভেমুলা, হাথরাস, উন্নাওএর মত মনুবাদী আঘাত অব্যহত।
নির্বাচনী প্রচারে যে দলিতদের বাড়িতে প্রচারের উদ্দেশ্যে ভোজন করা হয়, ভোটে জিতলে সেই দলিতদের ওপর নির্যাতন করাই কেন্দ্রের শাসক দলের সংস্কৃতি। সাংসদ আরও বলেন, এতে অবশ্য আশ্চর্যের কিছু নেই। তারা যেসকল রাজ্যে শাসনে আছে, সেই সকল রাজ্যে নারী সুরক্ষা, সংখ্যালঘু (Minority) সুরক্ষা, দলিত সুরক্ষা বরাবর তলানিতে।
তিনি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার (Riot) এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান তুলে বলেন, ২০০২ সালে ২৫০০ সংখ্যালঘুকে খুন করা হয়েছিল। কিন্তু, সরকারি হিসেবে সেই সংখ্যা ১০০। যদিও আজও সত্য বেরোল না এবং কেউ শাস্তি পেয়েছে বলেও জানা যায়নি।
তিনি বলেন, শুধু যে ১৫ লাখ টাকা সকলকে দেওয়ার মিথ্যে বলে সরকারে এসেছে তাই নয়, এই সরকার সেই ধারা এখনও বজায় রেখেছে।
সাম্প্রতিক সারা বিশ্বের ত্রাস করোনা (Corona)। জানুয়ারি মাসে তৃণমূলের সাংসদরা সংসদে প্রথম বলেছিল যে এই ভয়ঙ্কর সংক্রমণ থেকে দেশকে বাঁচাতে অবিলম্বে বিদেশের সঙ্গে বিমান যোগ বিচ্ছিন্ন করার। তখন তাদের সংসদে স্কুলের বাচ্চাদের মত বায়না না করে চুপ থাকতে বলে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই কথাও স্মরণ করান তিনি
আজ পর্যন্ত ৯ লক্ষ ভারতবাসী মারা গেছে এই রোগে। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন পরিকল্পনাহীনভাবে ৪ ঘণ্টার নোটিশে লকডাউন (Lockdown) ঘোষণা করা হয়। এতে চরম বিপদে পড়ে পরিযায়ী শ্রমিক। মারা যায় ১০০০এর বেশী শ্রমিক। এরপর সরকারের তরফে জানা যায়, পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Workers) বিষয়ে কোনও তথ্য তাদের হাতে নেই। পড়ে আরটিআই (RTI) করে আরও জানা যায় শ্রমিক ট্রেনে (Indian Railways) মারা গেছে আরও ৮০জন পরিযায়ী শ্রমিক।
তিনি বলেন, যেখানে কেন্দ্র এই পরিযায়ীদের জন্য স্পেশ্যাল ট্রেনের ভাড়া নিয়ে তাদের শেষ পুঁজিও কেড়ে নিয়েছে সেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র রাজ্যের তহবিল থেকে এই ট্রেনের ভাড়া মিটিয়েছেন এবং স্নেহের পরশের মত প্রকল্পে তাদের আর্থিক সাহায্য করেছেন। যে সরকার শ্রমিকের খবর রাখে না, তারা মিথ্যাচার করবে ক্ষমতায় থাকতে, এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও তথ্য দিয়ে বলেন, কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি যেখানে ছিল ২০২২এর মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার, সেখানে, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বহু আগেই কৃষকদের আয় তিনগুন হয়েছে। কেন্দ্রের এমনই উন্নয়ন যে দেশের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার -২৩.৯ শতাংশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় সব জনমুখী প্রকল্পই সেই কেন্দ্রের থেকেই সেরার শিরোপা পেয়েছে বারবার।
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওদের আসল কথা হল, বেটি পোড়াও ঠিক যেমনভাবে হাথরসের ধর্ষিতার মৃতদেহ রাতের অন্ধকারে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বাংলায় পরিবারকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দেওয়া হয় পরিবারের সবথেকে বয়স্ক মহিলার নামে। যেখানে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও বিজ্ঞাপনে কেন্দ্র ব্যয় করেছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা সেখানে বাংলার সরকার ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে স্বনিরভর করেছে ৬৭ লক্ষ কন্যাকে।