সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের ঐক্যবদ্ধ করবে তৃণমূল
এবার শিলিগুড়ি শহরে রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পের উপভোক্তাদের সংগঠিত করবে তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় সূত্রের খবর, এই শহরে ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সুফল। তাই নাগরিকদের অভিমত তুলে ধরার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা মা-মাটি-মানুষের সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প নিয়ে ব্যানার, হোডিং টাঙিয়ে এবং অনলাইনে প্রচার অভিযানে নেমেছে। পদ্ম শিবিরকে ঘায়েল করতেই এমন কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি অবশ্য এনিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। তারা পাল্টা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ময়দানে নেমেছে। দু’পক্ষের এমন তৎপরতা ঘিরে এলাকার রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে।
রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পর থেকে এখনও পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক মানুষকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বৃক্ষপাট্টা, জমির পাট্টা, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, ঐক্যশ্রী, কৃষকবন্ধু, সমব্যথী প্রভৃতি সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমান সরকার আমআদমির পাশে দাঁড়িয়েছে। এবার সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রের খবর, এজন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে সরকারি প্রকল্পগুলির উপভোক্তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হবে। ওই তালিকা ধরে উপভোক্তাদের বাড়িতে যাবেন দলের কর্মীরা। তাঁরা উপভোক্তাদের মতামত নথিভুক্ত করবেন। কোনও সমস্যা থাকলে মেটাবেন। কোনও প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও নাগরিকদের সহযোগিতা করবেন। এজন্য যুব ও মহিলা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে।এনিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে ঘাসফুল শিবির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন অধিকাংশ বাসিন্দা। হাতছাড়া হওয়া সেই ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধার করতেই এমন কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। তাছাড়া, বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তাদের ইতিবাচক মতামত ভোটের ময়দানে তৃণমূলকে বাড়তি অক্সিজেনও জোগাবে।
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা মুখপাত্র (সমতল) বেদব্রত দত্ত অবশ্য বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকতে অসংখ্য প্রকল্প উপহার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামাজিক প্রকল্পের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে উপকৃত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু ফেক ভিডিও তৈরি করে অপপ্রচার করছে বিজেপি। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের বেনিফিসিয়ারিরাই আমাদের হাতিয়ার। কোনও অপপ্রচারে তাঁরা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সেজন্য তাঁদের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শহরের ‘লাইফ লাইন’ হিলকার্ট রোডে বিভিন্ন প্রকল্পের হোর্ডিং টাঙানো হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রকল্পগুলির নাম দেওয়া হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্স দিয়ে বাসস্ট্যান্ড, বাজার সহ জনবহুল এলাকায় প্রচার চালানো হবে। এমনকী লিফলেটও বিলি করা হবে। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যমও ব্যবহার করা হবে। এনিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, কয়েকমাস আগে উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি প্রকল্পগুলি নিয়ে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসময় তিনি বলেছিলেন, প্রচারের অভাবে রাজ্য সরকারের প্রকল্পকে নিজেদের বলে চালানোর চেষ্টা করছে অনেকে। তাই এবার প্রকল্পগুলি নিয়ে তৃণমূল প্রচারে জোর দিচ্ছে। তাদের সাফল্যের ফসল যাতে অন্য কেউ ঘরে তুলতে না পারে সেজন্য তারা চেষ্টার কসুর রাখছে না। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দময় বর্মন পাল্টা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প নিজেদের বলে চালাচ্ছে তৃণমূল। তাছাড়া তারা অনিয়মে ডুবে আছে। এসব বিষয়গুলিই আমজনতার সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।