লকডাউনে সাত লক্ষ বাড়ি বানিয়ে নজির রাজ্যের
সাত মাসে প্রায় সাত লক্ষ বাড়ি। করোনা পর্বে অসাধ্য সাধন করল পঞ্চায়েত দপ্তর। মহামারী, লকডাউন, আর্থিক সঙ্কট—শত বিপত্তি সত্ত্বেও উন্নয়নের কাজ থামেনি। উল্টে পরিযায়ী শ্রমিকদের তাতে শামিল করায় আরও গতি এসেছে। তার সুফল হিসেবে অর্থবর্ষ শেষের আগেই নতুন রেকর্ড গড়ল পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা আবাস যোজনায় (Awas Yojana)।
গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রকল্পে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছে পশ্চিমবঙ্গ। চলতি অর্থবর্ষের টার্গেট ৯ লক্ষ ২৩ হাজার বাড়ি। দপ্তর সূত্রে খবর, প্রান্তিক এলাকায় গরিব মানুষদের জন্য এই প্রকল্পে বরাবর জোর দিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার করোনা পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে জুড়ে যায় কর্মসংস্থানের প্রশ্নও। কারণ, বাড়ি ফিরে এসেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। বিনামূল্যে রেশনের পাশাপাশি তাঁদের কাজ দেওয়ার দায়িত্বও নেয় রাজ্য সরকার। ১০০ দিনের কাজের পাশাপাশি বাংলা আবাস যোজনায় লাগানো হয় এই শ্রমিক এবং কর্মচ্যুতদের। আর তাতেই এসেছে সাফল্য। ১০০ দিনের কাজে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন-চার মাসে নজির গড়ে রাজ্য।
এবার মাত্র সাত মাসে ৭০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ বাংলা আবাস যোজনারও। মূলত তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত, অনগ্রসর সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এই যোজনায় গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা গৃহহীন বা মাটি-দরমার ঘরে বসবাসকারীদের পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। টাকার অঙ্কটা ১ লক্ষ ২০ হাজার। জঙ্গলমহলের চারটি জেলায় অবশ্য মেলে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এ বছর প্রায় ১০ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই পঞ্চায়েত দপ্তর সেই কাজ শুরু করে। দিল্লিতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয় জেলাওয়াড়ি হিসেব। শেষপর্যন্ত ৯ লক্ষ ২৩ হাজার বাড়ি তৈরির অনুমোদন মেলে। দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, এর মধ্যে ৬ লক্ষ ৭০ হাজারটির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।
গত আর্থিক বছরে এই যোজনায় ১০ লক্ষ ৮৩ হাজার বাড়ি বানিয়েছে রাজ্য। করোনা পরিস্থিতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কয়েক মাস দেরি হয়। অতীতে এই সংখ্যাটা তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষের মধ্যে ঘোরাফেরা করত। গত কয়েক বছরের সরকারি সক্রিয়তায় তা তিন থেকে চার গুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। গত দু’বছর এই প্রকল্পে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। মোট ১৯ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়। চলতি বছরে এই যোজনায় মোট বরাদ্দ ১১ হাজার কোটি টাকা। বাকি প্রায় আড়াই লক্ষ বাড়ির কাজ। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে, আশাবাদী পঞ্চায়েত দপ্তর।