অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৫০ লক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ বাংলায়
রাজ্যের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য সুখবর বয়ে আনছে নবান্ন (Nabanna)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশে শ্রমদপ্তর অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অন্তত ৫০ লক্ষ শ্রমজীবীর ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কত টাকা বৃদ্ধি হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শ্রমদপ্তরের অধীনস্থ ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত বোর্ডের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই বর্ধিত মজুরির অঙ্ক ঠিক করা হবে। ওই বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা বাজারদরের প্রেক্ষিতে মাসে ন্যূনতম ১৮ হাজার টাকা মজুরির দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগে অসংগঠিত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পেলে নিশ্চিতভাবেই তার প্রভাব পড়বে ভোটবাক্সে, এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ফি বছর অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের প্রাথমিক ভূমিকা থাকে। বাম আমল থেকেই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বাম জমানায় মোট ৬১টি পেশার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করত বোর্ড। এর মধ্যে আনস্কিলড, সেমি স্কিলড, স্কিলড এবং হাইলি স্কিলড— এই চার ক্যাটিগরির শ্রমিক রয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই সিংহভাগ শ্রমিক আনস্কিলড বা অদক্ষ হওয়ায় তাঁদের মজুরিকেই ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এই ফর্মুলা অনুযায়ী বর্তমানে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে আট হাজার টাকার মতো।
মঙ্গলবার শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের (Moloy Ghatak) উপস্থিতিতে বোর্ডের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইএনটিটিইউসি সভানেত্রী দোলা সেন, সিটুর দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, ইউটিইউসি (লেনিন সরণী)-র দিলীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। ছিলেন শ্রম কমিশনার অভিনব চন্দ্রের মতো শীর্ষ আধিকারিকরাও। দপ্তর সূত্রের খবর, বর্তমানে ৮০টি পেশার শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরির আলাদা আলাদা তালিকা সহ সরকারি আদেশনামা রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ওই তালিকায় আরও কয়েকটি পেশাকে যুক্ত করেছে। তবে আইনি জটিলতার কারণে সেই তালিকা প্রকাশ করেনি সরকার। মঙ্গলবারের বৈঠকে মূলত আলোচনা হয়েছে ওই তালিকা সংশোধনের বিষয়ে। বাম শ্রমিক নেতৃত্ব রাজ্যের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য মাসে ন্যূনতম ১৮ হাজার টাকা মজুরির দাবি জানান। যদিও দোলাদেবী এই দাবির সঙ্গে একমত নন। রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রের সার্বিক সমস্যা ও উন্নয়নের কথা ভেবে তিনি তুলনায় কম মজুরির পক্ষে সওয়াল করেন। বৈঠকে এই ইস্যুতে শাসক ও বিরোধী সংগঠনের নেতানেত্রীদের মধ্যে বাদানুবাদও হয়। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী ও বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হাসেম মণ্ডল বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলে সকলে তা মেনে নেন।
বুধবার হাসেম সাহেব বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে চিকিৎসক, ডায়েটেশিয়ান, নিউট্রিশিয়ান সহ নানা পেশার কয়েকজনকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তীকালে ওই কমিটি বৈঠক করে এক মাসের মধ্যে বর্ধিত মজুরির বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।