‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির রুটিন বেঁধে দিল নবান্ন
‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির রুটিন বেঁধে দিল নবান্ন (Nabanna)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ঘোষণার তিনদিনের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নে এই তৎপরতা নজিরবিহীন। গত সোমবার বাঁকুড়া সফরে গিয়ে একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) প্রতিটি দপ্তরকে মাঠে নেমে পড়ার নির্দেশিকা জারি করে দেয় নবান্ন। সেই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ‘গাইড লাইন’ও। বাছাই করা হয়েছে জনকল্যাণমূলক সেরা ১০টি সরকারি প্রকল্পকে। যেগুলির সুযোগ-সুবিধা দিতে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবেন প্রশাসনের কর্তারা। চারটি পর্যায়ে কর্মসূচি রূপায়ণের কথা বলা হয়েছে ওই রুটিনে। শুরু ১ ডিসেম্বর। চলবে আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। নবান্নের নির্দেশিকা মেনে কর্মসূচি পালনে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভাও। প্রতিটি ওয়ার্ডে বসবে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’-এর শিবির। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘বাড়ির দরজায় পুরসভা’ কর্মসূচিও। ফলে সব মিলিয়ে পুরবাসী কিংবা গ্রামবাসীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান মিলবে একই ছাতার তলায়। আর সেই ‘ছাতা’ হবে বাড়ি সংলগ্ন স্কুল, কলেজ, কমিউনিটি হল কিংবা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস।
মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই মমতার পাখির চোখ ছিল রাজ্যের সার্বিক বিকাশ। একদিকে, গ্রামোন্নয়ন ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পরিবহণ পরিকাঠামোর ঢালাও উন্নয়ন। অন্যদিকে, সরকারি আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে দারিদ্র দূরিকরণ, খাদ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান ও ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করে তোলা। বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মাধ্যমে এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে চূড়ান্ত সফলও তিনি। এরকম ১০টি প্রকল্পকে বাছাই করে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ (Duyare Duyare Sarkar) কর্মসূচি পালনে রুটিন ঠিক করে দিয়েছে নবান্ন। সেগুলি হল— খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, জাতিগত শংসাপত্র প্রদান, শিক্ষাশ্রী, জয় জোহর, তপসিলি বন্ধু, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী এবং একশো দিনের কাজ (এমডিএনআরজিএস)। এই সব প্রকল্পগুলির সম্পর্কে অভাব-অভিযোগ শুনতে গ্রামীণ ও পুর এলাকায় শিবির করবেন প্রশাসনের কর্তারা। নবান্নের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রকল্পগুলির নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তরের কর্তারা জেলায় জেলায় শিবির করবেন। মোট চারটি পর্যায়ে ভাগ করে পালিত হবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত কর্মসূচি। প্রথম পর্যায়ের কাজ চলবে ১-১১ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় পর্যায় ১৫-২৪ ডিসেম্বর। তৃতীয় পর্যায় ২-১২ জানুয়ারি (২০২১) এবং চতুর্থ ও শেষ পর্যায়ের কাজ হবে ১৮-২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথায়, কখন শিবির বসবে তা আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই মতো বিভিন্ন প্রকল্পে সাহায্যের জন্য আবেদন করা এবং অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তারা। আসলে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, সরকারি পরিষেবা থেকে প্রত্যন্ত কোনও গ্রামের মানুষ যাতে বঞ্চিত না হোন। মূলত সেই লক্ষ্যেই তাঁর এই নয়া কর্মসূচি।
কলকাতা পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডেও এই চারটি ভাগে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ বসবে। মিউটেশন, সম্পত্তিকরের মূল্যায়ণ সংক্রান্ত সমস্যা, বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন, পানীয় জলের সমস্যা, আবর্জনা সংক্রান্ত সমস্যা মেটানো হবে প্রতিটি শিবিরে। মুখ্য পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘প্রকৃত গণতন্ত্র কাকে বলে তা দেখিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘দুয়ারে সরকার’ তাঁর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এই ‘ওয়ান টু ওয়ান’ সংযোগে মানুষের অনেক কিছু সুবিধা হবে।’