কৃষি আন্দোলনে চাপে কেন্দ্র, নতুন আইনের ভাবনা
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস, কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আবেদন—কিছুই কাজে আসেনি। কেন্দ্রের কৃষি ও কৃষক সংক্রান্ত তিন আইনের বিরোধিতায় অবস্থানে অনড় কৃষকরা। আন্দোলনরত কৃষক এবং বিরোধীদের চাপে শেষ পর্যন্ত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) সংক্রান্ত আইন আনার ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র। ২০১৮-’১৯ খরিফ মরশুমের রিপোর্টে ‘দ্য রাইট টু সেল অ্যাট এমএসপি’ নামে আইন আনতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিল কৃষিমন্ত্রকের অধীন কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইসেস (সিএসিপি)। কিন্তু সেদিন মোদি সরকার তা মানেনি। এখন চাপে পড়ে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করার পথেই সরকার এগতে পারে বলে খবর।
বিষয়টি নিয়ে কৃষিমন্ত্রকে আলোচনাও শুরু হয়েছে। আইন আনলে সরকারের কী কী সুবিধা-অসুবিধা হবে, সেটাই এখন চর্চার প্রধান বিষয়। এরপর কৃষক সংগঠনগুলির থেকেও পরামর্শ চাওয়া হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট অফিসারদের একটি নোট তৈরি করতে বলেছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার ( Narendra Singh Tomar)। এমএসপি সংক্রান্ত আইন কার্যকর হলে সরকার হোক বা ব্যবসায়ী—কেউই কৃষকদের থেকে সহায়ক মূল্যের কমে ধান, গমের মতো খাদ্যশস্য কিনতে পারবে না। ফলে বিভিন্ন সময় কৃষকদের যেভাবে ক্ষতি স্বীকার করে ‘ডিসট্রেস সেল’-এ বাধ্য হতে হয়, তা বন্ধ হবে। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন কৃষকরা।
ছয়ের দশকের মাঝামাঝি (১৯৬৬-৬৭ সালে) ‘সবুজ বিপ্লবে’র সময় থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণের প্রথা চালু হয়। তবে কোনও আইন হয়নি। প্রশাসনিক নির্দেশেই সেই থেকে বিষয়টি চলে আসছে। প্রতি বছর সিএসিপির প্রস্তাব অনুযায়ী মোট ২৩টি খাদ্যশস্যের এমএসপি নির্ধারণ করে সরকার। তালিকায় রয়েছে ধান, গম, ভুট্টার মতো সাতটি শস্য, পাঁচ ধরনের ডাল, সাত প্রকার তৈলবীজ, তুলো, আখ এবং পাটের মতো চারটি ফসল। সরাসরি কৃষক এবং উৎপাদনের প্রসঙ্গ জড়িয়ে থাকায় কোনও রাজনৈতিক দলই সরকারে এসে বিষয়টি বন্ধ করতে পারেনি। কিন্তু আলাদা করে আইন প্রণয়নের সদিচ্ছাও ছিল না কোনও আমলে। সহায়ক মূল্য বেড়েছিল প্রথাগতভাবেই।
২০১৩ সালে ‘জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন’ কার্যকর করে কংগ্রেস শাসিত ইউপিএ সরকার (UPA Government) । এতে গণবণ্টন ব্যবস্থায় সস্তায় চাল, গম দিতে কৃষকদের থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে খাদ্যশস্য কেনা অনেকটাই নিশ্চিত হয়। কিন্তু আইনি নিরাপত্তা ছিল না। মোদি সরকারের (Modi Government) আনা নতুন সংস্কারমুখী সংশোধনী আইনে সেই নিরাপত্তার গ্যারান্টি তো দূরঅস্ত, ফসল বিক্রির নিশ্চয়তাও প্রশ্নের মুখে। তাই সংসদ থেকে সড়ক—আন্দোলনে সরব বিরোধীরা। রাজধানীকে রীতিমতো ঘিরে ফেলেছে কৃষকদের মিছিল।
চাপের মুখে সরকার এমএসপি (MSP) নিয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও, তাতে ভুলছেন না আন্দোলনকারীরা। নরেন্দ্র সিং তোমার অবশ্য বলছেন, ২০১৩-’১৪ সালে ইউপিএ সরকার যে সহায়ক মূল্য দিয়েছে, আমরা তার থেকে অনেক বেশি দিচ্ছি। ফসল অনুযায়ী ৩২ থেকে শুরু করে ১২০ শতাংশ বেশি এমএসপি পাচ্ছেন কৃষকরা (Farmers)। চলতি খরিফ মরশুমে এখনও পর্যন্ত সহায়ক মূল্যে ৫৯ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকার স্রেফ ধান সংগ্রহ করেছে সরকার। উপকৃত প্রায় ২৯ লক্ষ কৃষক। কোনওভাবেই এমএসপি বন্ধ হচ্ছে না। বিষয়টি বিরোধীদের উস্কানি মাত্র। তারা অহেতুক কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে বলেই দাবি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর। কিন্তু তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না কৃষকরা। ইতিমধ্যেই দু’বার কৃষক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের ডেকে বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র সিং তোমার এবং খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। যা ফলপ্রসূ হয়নি। আগামী ৩ ডিসেম্বর ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে ব্যাপক চাপে রয়েছে মোদি সরকার। এমএসপি আইন সেই চাপ কমাবে কি না, তা অবশ্য সময় বলবে।