দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষের জন্য নিখরচায় অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা প্রদানে উদ্যোগী রাজ্য
রাজ্যে যেখানেই পথ দুর্ঘটনা ঘটুক না কেন, ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে নিখরচার অ্যাম্বুলেন্স। প্রাণ বাঁচাতে জখম ব্যক্তিকে নিয়ে ছুটে যাবে নিকটবর্তী ট্রমা কেয়ার সেন্টার, হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে। আনুমানিক ১৫০টি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে শীঘ্রই এই প্রকল্প চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এজন্য স্বাস্থ্য ও পরিবহণ দপ্তরের মধ্যে চিঠি লেখালিখি চলছে জোরকদমে। পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ থাকছে পুলিস ও পূর্ত দপ্তরের। দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা কোনগুলি, তা চিহ্নিত করবে পূর্ত দপ্তর।
দু’ধরনের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হবে এই প্রকল্পে। বেসিক লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স বা বিএলএস এবং অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স বা এএলএস। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এইসব অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। বিশিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিদেশে রাজ্য বা জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনাগ্রস্তের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। এদেশে সেই ব্যবস্থা না থাকায় এক ঘণ্টার মধ্যে জখম ব্যক্তিকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। এই সময়টাই ‘গোল্ডেন আওয়ার’। না হলে মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।
সূত্রের খবর, ‘১০২’ নম্বরে ফোন পেয়ে মাতৃযান বা কোভিড রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা সফলভাবে চালিয়ে এ বিষয়ে এখন আত্মবিশ্বাসী রাজ্য। নির্দিষ্ট টোল ফ্রি নম্বর চালু করে তারা এই নয়া পরিষেবা দেবে। যে কেউ সেখানে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর জানাতে পারবেন। পাশাপাশি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় থানা অ্যাম্বুলেন্স স্টেশনে খবর দেবে। পরবর্তীকালে জিপিএস ম্যাপিং যুক্ত হবে পরিষেবায়। অর্থাৎ যিনি দুর্ঘটনার খবর জানিয়ে ফোন করছেন, তাঁর অবস্থান বা ‘লোকেশন’ ট্র্যাক করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে অ্যাম্বুলেন্স (Ambulance)। এ বিষয়ে দুটি মডেল নিয়ে কথাবার্তা চলছে। একটি হল, বিএলএস এবং এএলএস অ্যাম্বুলেন্স কিনে পরিষেবা চালানো। দ্বিতীয়টি হল, এই দুই ধরনের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে পরিষেবা দেওয়া।
স্বাস্থ্যদপ্তরের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ বলে পরিচিত এসপিএসআরসি শাখা ইতিমধ্যেই ‘ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্স ম্যাপিং’-এর মাধ্যমে বিষয়টি পরিবহণ দপ্তরকে জানিয়েছে। তাতে অ্যাম্বুলেন্স স্টেশন থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের সুবিধাযুক্ত নিকটবর্তী মহকুমা, জেলা হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ (Medical Collage) কত দূরে, যেতে কত সময় লাগতে পারে, মধ্যবর্তীস্তরে অন্য কোনও হাসপাতাল থাকলে সেখানে যেতে কতক্ষণ লাগবে ইত্যাদি সব বিষয় চার্ট আকারে জানানো হয়েছে। ৬ নভেম্বর জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের প্রকল্প অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন স্বাস্থ্যদপ্তরের মতামত পরিবহণ সচিবকে জানিয়েছেন।
সূত্রের খবর, ২৪ ঘণ্টা সাতদিন অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স চালাতে তিনজন করে চালক, হেল্পার এবং স্ট্রেচার টানার লোক এবং ছ’জন করে প্যারামেডিক্স লাগতে পারে। সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স ছ’জন প্যারামেডিক্স ছাড়া সবই লাগবে। ৫৬টি সাধারণ মানের ও অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স কিনে চালাতে হলে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৮ কোটি টাকা এবং কর্মীদের বেতনখাতে আরও ১৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা— সবমিলিয়ে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৫০টি চালালে খরচ আরও বাড়বে। তবে ভাড়ায় চললে খরচ কমবে। এই বিষয়গুলি নিয়েই এখন কথাবার্তা চলছে। পরিবহণ দপ্তরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালে দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্যগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে। বাংলায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। করোনার জন্য মাঝে প্রকল্পের গতি কমলেও ফের পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, পরিবহণ দপ্তর এই প্রকল্পে হাত দিয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর (Health Department) সাহায্য করছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন।