এগিয়ে বাংলা – মহিলা স্বনির্ভরতায় নজির রাজ্যের
অজীবিকা গ্রামীণ এক্সপ্রেস যোজনা। সংক্ষেপে ‘আগে’ (এজিইওয়াই)। মহিলাদের এই স্বনির্ভরতা প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দেশের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই এগিয়ে বাংলা। সবক’টি রাজ্যের নিরিখে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)—কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক রিভিউ মিটিংয়ে মিলেছে এই স্বীকৃতি। ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশনের আওতায় ‘আগে’ চালু করা হয়েছিল। যে প্রকল্পে গাড়ি কিনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করে আয়ের মুখ দেখেছে রাজ্যের বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self Help Group)। গাড়ির স্টিয়ারিং থেকে ঘরোয়া অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি—এখন বাড়ির মহিলাদের হাতে। প্রতিটি গাড়ি ক্রয়ের জন্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। প্রতিটি রাজ্যের জন্য পৃথক কোটা নির্ধারণ করা হয়। সেই মোতাবেক বাংলার ভাগে বরাদ্দ হয় ৫২টি গাড়ি। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে সাফল্যের মুখ দেখেছে রাজ্য। উল্টোদিকে ব্যর্থতার ছবি যোগী-রাজ্যে। সরকারি তথ্য অনুসারে, উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০০ গাড়ি। তার অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি যোগী আদিত্যনাথের সরকার। পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণ না করার অভিযোগ নিয়ে যখন বিরোধী শিবির সরগরম, তখন এই প্রকল্পের কেন্দ্রীয় স্বীকৃতি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।
‘আগে’-র সাফল্য নিয়ে বিপুল উৎসাহিত পঞ্চায়েত দপ্তর। এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে ছিল আনন্দধারা। পঞ্চায়েত দপ্তরের (Panchayet Department) বিশেষ সচিব তথা আনন্দধারা প্রকল্পের রাজ্য কর্তা সৌম্যজিৎ দাস বলেন, ‘সর্বভারতীয় রিভিউ মিটিং বাংলার সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা শুধু ৫৬টি গাড়ি কিনিনি, সেগুলিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতেও শুরু করেছি। যা থেকে বাংলার অনেক স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিপুল আয়ের সুযোগ পেয়েছে। বারাসাতের রাস্তায় গোষ্ঠীর মেয়েরা টোটো চালিয়ে যাত্রী পরিষেবা দিচ্ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে বেনজির পরিবর্তন আনছে। গোটা দেশের মধ্যে এই প্রকল্পে আমরাই এখন এক নম্বর।’
চলতি বছরের গোড়া থেকে প্রকল্প রূপায়ণে ময়দানে নামেন রাজ্যের আনন্দধারা কর্তারা। ইতিমধ্যেই কেনা, নথিভুক্তিকরণ পর্ব পেরিয়ে ব্যবহার শুরু হয়েছে সবক’টি গাড়ির। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে এই প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। যেখানে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী দু’ধরনের গাড়িই ব্যবহার করা হচ্ছে। বারাসতে কোটরা আদর্শ মহিলা সঙ্ঘের মহিলাদের হাতে টোটোর স্টিয়ারিং উঠেছে ‘আগে’-র সৌজন্যেই। আবার শ্রীকৃষ্ণপুর সবুজ মহিলা সঙ্ঘ পরিচালনা করছে পণ্যবাহী গাড়ি। পিছিয়ে নেই উত্তরবঙ্গও। আলিপুরদুয়ারে আদিবাসীদের মহিলা সঙ্ঘ এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, যাত্রী পরিষেবা দিয়ে মাসে প্রায় ১২ হাজার এবং পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে মাসে ১৫ হাজার টাকা রোজগার করছে গোষ্ঠীর মহিলারা। যা নির্দিষ্ট কিছু এলাকার আর্থ-সামাজিক কাঠামো বদলে দিচ্ছে। আর এতেই সাফল্যের মুকুট চড়েছে রাজ্য প্রশাসনের মাথায়।