বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

এইচআইভি সম্পর্কে কয়েকটি ভুল ধারণা

December 1, 2020 | 3 min read

বিশ্বব্যাপী এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি মানুষ মারা গেছে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এর মধ্যে শুধুমাত্র গত বছরই মারা গেছে দশ লাখ। বিশ্বব্যাপী আরও তিন কোটি সত্তর লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। আর প্রতি বছর নতুন করে আরও ১৮ লাখের মতো মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এইডস বিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকটগুলোর একটি। এই ভাইরাসটি সস্পর্কে বিচিত্র সব ধারণা তৈরি হতে থাকে যার অনেকগুলোই একেবারে ভ্রান্ত।

আক্রান্তদের সাথে সাধারণ মেলামেশা

২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করতো যে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার ত্বক ও মুখের লালা দ্বারা আপনিও আক্রান্ত হবেন।

কিন্তু এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, চুমু খেলে, একই পাত্রে খাবার খেলে, পানি খেলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী ব্যবহার করলে, তার ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে আপনিও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না।

এর নিরাময় সম্পর্কে প্রচলিত কিছু মিথ

আফ্রিকার কিছু দেশ, ভারত ও থাইল্যান্ডে অনেকের বিশ্বাস তৈরি হয়েছিলো যে আক্রান্ত হওয়ার পর কুমারী মেয়ে বা যৌন সম্পর্কের কোন অভিজ্ঞতা নেই এমন কারোর সাথে যৌন মিলনে এই ভাইরাস দুর হয়ে যায়।

কিন্তু এটি একেবারেই ভুল ধারনা। এতে বরং কুমারীরা আক্রান্ত হয়। এই অঞ্চলে এই বিশ্বাসের কারণে কুমারীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ১৬শ শতকে ইউরোপে সিফিলিস ও গনোরিয়া আক্রান্ত হলে একই ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। তবে সেক্ষেত্রেও কুমারীদের সাথে যৌন মিলন কার্যকর নয়।

মশা দ্বারা কি এটি ছড়ায়?

মশা একই ঘরে থাকা মানুষজনে কামড়াতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে যদি অন্য কামড়ায় তাহলেও এটি ছড়াতে পারে সেটি ভুল ধারনা। যৌন মিলনের পর স্নান করলে এইচআইভি ভাইরাস পরিষ্কার হয় এই ধারনাও একেবারেই ভুল।

যদিও রক্তদ্বারা এই ভাইরাস ছড়ায় কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে মশা বা রক্ত খায় এমন কিট দ্বারা আপনি আক্রান্ত হবেন না। তার দুটি কারণ। একটি হল একজনের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে সে সেই রক্ত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির শরীরে ইনজেকশন দেয়ার মতো করে রক্ত ঢুকিয়ে দেয় না। আর মশা বা অন্য কিটের শরীরে এই জীবাণু খুব সামান্য সময় বেঁচে থাকে।

ওরাল সেক্সে কি এটি হতে পারে?

আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ওরাল সেক্স অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এইচআইভি পজিটিভ নারী বা পুরুষের সাথে ওরাল সেক্সের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। কিন্তু এর হার খুব বিরল।

কন্ডোমেও রয়েছে ঝুঁকি

  • কন্ডোম ব্যবহার করলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার কোনই সম্ভাবনা এমন ধারনাও ঠিক নয়। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের সময়ে কন্ডোম ফুটো হয়ে গেলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। তাই ইদানীং এর প্রতিরোধ বিষয়ক প্রচারণায় শুধু কন্ডোম ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে তা নয়, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যাপারেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।
  • এর আরেকটি কারণ হল আক্রান্ত প্রতি চারজন ব্যক্তির অন্তত একজন জানেন না যে তার এই শরীরে এটি রয়েছে। যাদের সংখ্যা এক কোটি। সে হয়ত নিজের অজান্তে অন্যকে আক্রান্ত করছে।

কোন লক্ষণ না থাকলে কি ঘটে?

  • কোন লক্ষণ দেখা না দিলে এইচআইভি আক্রান্ত নন এটিও ভুল ধারনা। এই জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘ দিন কোন রকমের লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।
  • এভাবে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি দশ থেকে পনেরো বছরও বেঁচে থাকতে পারেন।
  • এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শুরুর কয়েকটি সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাব দেখা দিতে পারে, হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীরে র‍্যাশ দেখা দিতে পারে।
  • অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দেবে যখন ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করাই এইচআইভির মুল বিপদ।

যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন

  • আক্রান্ত নারী বা পুরুষের সাথে কন্ডোম ব্যবহার না করে যৌন সম্পর্কে স্থাপন করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন।
  • অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিলে, এরকম কারো ব্যবহৃত একই সিরিঞ্জ শরীরে প্রবেশ করলেও আপনি এই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবেন।
  • এগুলোই সবচাইতে বড় কারণ। তবে ইদানীং রক্ত দেয়ার আগে যেভাবে তা পরীক্ষা হয় তাতে রক্ত গ্রহণে এর সম্ভাবনা কমে আসছে। এর বাইরে অল্প কিছু বিরল কারণ রয়েছে।
TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#HIV

আরো দেখুন