মন্ত্রী কন্যার বিয়ের জন্য থমকে নেতাজি জন্মজয়ন্তী কমিটি গঠন, ক্ষুব্ধ বসু পরিবার
অনেক ক্ষেত্রে পরে ভেবেও কাজের কাজ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারকে টেক্কা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তেমনই ঘটনা ঘটেছে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের আসন্ন ১২৫তম জন্মদিবস পালন করার ক্ষেত্রেও। সুভাষচন্দ্রকে যথাযোগ্য সম্মান জানানোর জন্য আগামী বছর জুড়ে সরকারি স্তরে নানা ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য দু’জন নোবেল বিজয়ী বাঙালিসহ এক ঝাঁক বিদ্বজ্জনকে নিয়ে ইতিমধ্যেই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে ফেলেছেন মমতা। অথচ গত ২১ অক্টোবর লালকেল্লায় আইএনএ দিবস পালনের দিনেই কেন্দ্রের তরফে এই ধরনের একটি কমিটি গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল। কিন্তু তারপর পাঁচ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেই কমিটি এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি মোদি সরকার। এনিয়ে যার পর নাই হতাশ ও বিরক্ত সুভাষচন্দ্রের বহু অনুগামীসহ নেতাজির পরিবারের অনেক সদস্যও।
জানা গিয়েছে, বসু পরিবারের তরফে এই বিলম্বের বিষয়ে দিল্লিতে খোঁজখবর করা হয়েছিল। আর তা করতে গিয়ে তারা জেনেছে যে সংস্কৃতি মন্ত্রীর কন্যার বিয়ে উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরে মন্ত্রকের স্বাভাবিক কাজকর্ম অনেকটা শিকেয় উঠেছে। সোমবার ছিল মন্ত্রীর মেয়ের বিয়ে। অনুষ্ঠান পর্বের শেষে মন্ত্রী দিল্লি ফিরে নেতাজি জন্মজয়ন্তী কমিটি গঠনের ব্যাপারে সক্রিয় হবেন বলে মন্ত্রকের আধিকারিকরা বসু পরিবারের সদস্যদের ইঙ্গিত দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিকে চেয়ারম্যান করে এক সপ্তাহের মধ্যে একটি জাম্বো কমিটি গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে দিল্লির কর্তাদের। সেই কমিটি গঠন করার পর কবে তার প্রথম বৈঠক হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে কমিটিতে বসু পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে আইএনএ বাহিনীর জীবিত কয়েকজন সদস্যকে রাখার কথা ভেবেছে কেন্দ্র। সেই মতো বসু পরিবারের কাছ থেকে তারা নামও চেয়েছে।
মোদি সরকার কী করতে চলেছে নেতাজির (Netaji) ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালনের লক্ষ্যে তা এখন বসু পরিবারের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে মমতা যেভাবে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁকে তাঁরা তারিফ না করে পারছেন না। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মমতার সঙ্গে অনেক বিষয়ে সহমত না হলেও, বসু পরিবারের এই সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে খোলাখুলি স্বাগত জানাচ্ছেন। বিশেষ করে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উদঘাটনে বিষয়ে মমতা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে দাবি তুলেছেন, তাকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। পরিবারের এই সদস্যদের মুখপাত্র তথা নেতাজির সম্পর্কে নাতি চন্দ্রকুমার বসু (Chandrakumar Bose) বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে পরিবারের সদস্যরা সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি ওঁর কাছেও অনুরোধ করব যে, ২৩ জানুয়ারি দিনটিকে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে উদযাপনের জন্য উনিও উদ্যোগ নিন। বাম আমলের শেষ দিকে এরাজ্যে অন্তত সরকারি স্তরে দিনটি দেশপ্রেম দিবস হিসেবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল জমানায় সেই ঐতিহ্য কেন বন্ধ হল, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।