মুখ্যমন্ত্রীকে এড়িয়েই মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন রাজভবনের, সমালোচনা
আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠান হতে চলেছে রাজভবনে (Raj Bhavan)। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির থাকবেন। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের তরফে বুধবারই লিখিতভাবে রাজভবনে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের আবেদন জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সূত্রের দাবি, রাজ্যপাল মৌখিক সন্মতি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর রাজ্যস্তরে এই অনুষ্ঠান আয়োজন ঘিরেই চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। কারণ, এবারই বেনজিরভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে মানবাধিকার কমিশনের (Human Rights Commission) চেয়ারম্যান গিরীশচন্দ্র গুপ্ত ওই বিশেষ দিনে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের চার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই সূত্রে দিলীপ ঘোষ, বিমান বসু, আব্দুল মান্নান এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল। সূত্রের দাবি, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির তালিকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বাদ পড়ায় মারাত্মক অসন্তুষ্ট নবান্ন। এরই মধ্যে আবার অনুষ্ঠানের হল বা প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পূর্ত ভবনের প্রেক্ষাগৃহ, কলকাতা হাইকোর্টের অডিটোরিয়াম এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিকাল সায়েন্সের সেমিনার হল, তিনটি জায়গাই বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চেয়ে এই তিনটি হল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছিল কমিশন। কিন্তু তিনটি আবেদনই বাতিল হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার দিবস পালনের অনুষ্ঠান রাজভবনে উঠে যাওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কারণ, গত কয়েকমাসে বিবিধ ইস্যুতে রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী দ্বন্দ্ব চরম আকার নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) সাংবিধানিক প্রধানকে প্রকাশ্যে বিজেপির এজেন্ট আখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী-নেতারা। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে, লাগাতার মুখ্যমন্ত্রী-মন্ত্রী-আইপিএস-আইএএসদের সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যে থেকে কাজ করার আবেদন করে আসছেন রাজ্যপাল। গত কয়েকমাসে নবান্ন-রাজভবন পত্র যুদ্ধ শিরোনামে উঠে এসেছে। এই প্রেক্ষিতে মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজভবন ও রাজ্যপালের নাম জড়িয়ে যাওয়ায়, ভিন্ন অঙ্ক খুঁজছে ওয়াকিবহাল মহল। এ প্রসঙ্গে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান গিরীশচন্দ্র গুপ্ত বলেন, ১০ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানের রাজ্যপাল প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির থাকবেন। তবে অনুষ্ঠানে রাজভবনে হবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে মন্তব্য করতে চাননি। তবে আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানস্থল পাওয়া নিয়ে এই জটিলতা কাম্য নয়। তবে এক্ষেত্রে তিনি কোনও পক্ষকেই দোষারোপ করতে চাননি।
সূত্রের দাবি, কমিশনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেও ওইদিন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না, বলে জানিয়েছেন সিপিএম নেতা বিমান বসু। বিরোধী দলনেতা আন্দুল মান্নান (Abdul Mannan) করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তিনিও গরহাজির থাকবেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এখনও জানাননি, তিনি বক্তা হিসেবে থাকবেন কি না। তৃণমূলের প্রতিনিধি তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আসছেন না। এমনকী বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে গিরীশবাবু বলেন, চেয়েছিলাম রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সামনে মানবাধিকার সংক্রান্ত জ্বলন্ত ইস্যু তুলে ধরতে। তাঁদের মতামত জানতে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তা দুর্ভাগ্যের।