মাধ্যমিক ১ থেকে ১০ জুন, শিক্ষাদপ্তরকে প্রস্তাব মধ্যশিক্ষা পর্ষদের
ফেব্রুয়ারি নয়, জুন মাসেই হোক মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik Exam)। শিক্ষাদপ্তরের কাছে এমনই প্রস্তাব পাঠিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। করোনা পরিস্থিতির কারণেই পরীক্ষা পিছনোর ভাবনা বলে পর্ষদ সূত্রে খবর। যদিও, প্রস্তাবটি পুরোপুরি রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষ। পর্ষদের দাবি অনুযায়ী, জুনের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত মাধ্যমিক চলার কথা। পরীক্ষার সময় হবে বেলা পৌনে ১২টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত। ততদিনে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার কথা। তা নিয়েই তৈরি হয়েছে জল্পনা।
অন্দরের খবর, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই মাধ্যমিক আয়োজন করতে চাইছিল রাজ্য সরকার। তবে, পরবর্তীকালে করোনা পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় কিছুটা পটপরিবর্তন হয়েছে। স্কুল কবে থেকে খোলা যাবে, তার এখনও ঠিকঠিকানা নেই। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা যদি ফেব্রুয়ারিতে হয়, তাহলে স্কুল না খুলেই তা নিতে হতে পারে। সেটা খুব একটা সহজ হবে না। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পর্ষদও পুরোপুরি তৈরি নয় বলেই খবর। কারণ, পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় নিজে কোভিড সহ একাধিক কারণে অসুস্থ ছিলেন। শুধু তিনি নন, সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কর্মী-অফিস আধিকারিকও করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলেন। তাই কাজ বেশ পিছিয়েছে। তবে, আগামী ১৬ এবং ১৭ ডিসেম্বর ক্যাম্প অফিস করে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম জমা এবং এনরোলমেন্ট ফর্ম দেওয়ার কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে পর্ষদ। আশা করা গিয়েছিল, ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যেই এগচ্ছে তারা। কিন্তু খসড়া রুটিন প্রস্তাবাকারে সরকারের কাছে পাঠানোর খবরটি সামনে আসতেই পুরো ছবি পাল্টে গেল।
কল্যাণময়বাবুর অসুস্থতার সময় কলকাতা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্নাকে অস্থায়ীভাবে পর্ষদ সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি তখন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অ্যাড হক কমিটির সদস্য ছিলেন না। কমিটির সদস্যদের বাইরে থেকে কাউকে কীভাবে সভাপতি করা যায়, তা নিয়ে কোনও কোনও মহলে প্রশ্ন ওঠে। যদিও, কার্তিকবাবু কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কল্যাণময়বাবু পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে কার্তিকবাবুর কাছে ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি জানতে চান শিক্ষাদপ্তরের এক শীর্ষকর্তা। অস্থায়ী পর্ষদ সভাপতি সাফ জানিয়ে দেন, কাজের যা অগ্রগতি, তাতে তিনি ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা নিতে পারবেন না। সেই একই প্রশ্ন যায় কল্যাণময়বাবুর কাছেও। এরপর তড়িঘড়ি আদেশ জারি করে তাঁকে সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনা হয়।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে অতি সম্প্রতি কার্তিক মান্নাকে অ্যাড হক কমিটির সদস্য করেছে শিক্ষাদপ্তর। তাতেই নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে। তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে কার্তিকবাবুর হাতেই যাবে পর্ষদের ভার? বয়স ৬৮ পূর্ণ হওয়ার কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়াদ শেষ হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত পর্ষদ সভাপতির সর্বোচ্চ বয়স ৬৮ বছরেই বেঁধে রেখেছে রাজ্য সরকার। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কার্তিক মান্নার নেতৃত্বে আয়োজিত হতে পারে ২০২১ সালের মাধ্যমিক। তার আগে যদি সরকার আইন পরিবর্তন করে সভাপতির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে কল্যাণময়বাবুকে পর্ষদে রেখে দেয়, সেটা আলাদা বিষয়। কারণ, তাঁর অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করতে পারে না শিক্ষাদপ্তর (Education Department)। সেক্ষেত্রে জুনেই হতে পারে পরীক্ষা। অনেকেই বলছেন, বিগত দু’বছরের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, জুনে মাধ্যমিক হলে তা নিয়ে কোনও বিতর্ক ভোটে প্রভাব ফেলতে পারবে না।