বাড়ির মেঝেকে করে তুলুন আয়নার মতো ঝকঝকে
টাইলসের জোড়ায় জোড়ায় দাগ—রোজ ঘর মোছার পরেও দাগ বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। মেঝে চকচকে রাখা বিশাল ঝক্কির কাজ। ঝামেলা আছে, তবে নিয়মিত ভাবে পরিস্কার করলে দাগ বসে যাওয়ার আশঙ্কা কম।
সাধারণ কিছু নিয়ম
- প্রতিদিন তো ঘর মুছবেনই। সপ্তাহে তিন দিন কুসুম গরম জলে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে পরিষ্কার করুন (এরপর পুনরায় পরিষ্কার জল দিয়ে মুছুন, নইলে পিচ্ছিল ভাব থেকে যাবে)।
- ডিটারজেন্টের পরিবর্তে জীবাণুনাশক নিতে পারেন, তবে এতে দাগ তেমন যায় না। দুটি একই সঙ্গেও জলে মেশাতে পারেন। আঠালো দাগ থাকলে দাগের ওপর ডিটারজেন্ট ছড়িয়ে এরপর জল দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। বাড়িতে শিশু থাকলে প্রতিদিনই জীবাণুনাশক দিয়ে মেঝে মুছুন।
- মেঝের ওপর আলোর প্রতিফলন, রঙের খেলা, পর্দাবৈচিত্র্য ও দেয়ালসজ্জা মিলিয়েই অন্দরমহল আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আজকের দিনে দেয়ালসজ্জা, ছাদ, পর্দা, রং ও আলোর সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মেঝে।
- ঘর উজ্জ্বল দেখাতে সাধারণত সাদা, চাঁপা সাদা বা হালকা রঙের টাইলস কিংবা পাথর ব্যবহার করা হয় মেঝেতে। এসব রঙে দাগও বোঝা যায় সহজে।
পাথর ও টাইলসের মেঝের কিভাবে যত্ন নেবেন জেনে নিনঃ
● আসবাবের (বিশেষত স্টিলের) পাশে, কোণে, বেসিনের নিচে ও জোড়ায়, কলের গোড়ায় দাগ পড়ে। এসব জায়গা প্রতিদিন ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
● চা, তরকারির ঝোল প্রভৃতি পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ভেজা টিস্যু (না পেলে পরিষ্কার ভেজা কাপড়) দিয়ে মুছুন, নইলে দাগ বসে যেতে পারে।
● টাইলসের জোড়া বরাবর লাইন টানার মতো করে হারপিক দিন। ৩০ মিনিট পর কাপড় ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। চেষ্টা করুন কাজটি কিছুদিন পরপরই করার।
মোছামুছির টিপস
● মপ ব্যবহারে পরিষ্কারকারীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম। প্রতিটি ঘর মোছার পর বালতির জল বদলে ফেলা ভালো। রান্নাঘরের জন্য আলাদা মপ ও বালতি রাখুন।
● রান্নাঘরের মেঝে ও গ্যাসের আশপাশ (দেয়ালের টাইলসসহ) প্রতিদিন মূল রান্নার পর পরিষ্কার জল দিয়ে মুছুন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কুসুম গরম জল ও ডিটারজেন্ট বা জীবাণুনাশকের সাহায্যে পরিষ্কার করুন। রান্নাঘরে চিমনি থাকলেও একসময় চিটচিটে ভাব আসতে পারে। তাই নিয়মিত পরিষ্কার রাখা আবশ্যক।
বসে যাওয়া দাগ
● দাগ তুলতে কয়েক দিন একটানা কষ্ট করতে হতে পারে। কয়েক দিনে না হলে পরবর্তী ধাপে (আরেকটু শক্তিশালী) যান। হালকা দাগ থাকলে জল ও সামান্য ভিনেগারের মিশ্রণ (বা লেবুর রস) দিয়ে মুছে ফেলুন। কিংবা ভিনেগারের (বা লেবুর রস) সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করুন। লবণের দানা গলে গেলে ভালো কাজ হয়। এ মিশ্রণ দিয়ে ঘষে ফেলার পর ১০-২০ মিনিট অপেক্ষা করে মুছে ফেলুন। টাইলসের জোড়ার হালকা দাগও লবণের এই মিশ্রণে পরিষ্কার হয়।
● এসব পদ্ধতিতে দাগ না গেলে টুথপেস্ট প্রয়োগ করুন। টুথপেস্ট দেওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ভালোভাবে ঘষতে হবে (দাগের বয়স ও ধরন বুঝে শক্ত কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে)। তবে ধাতব ও অতিরিক্ত শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করলে বা অতিরিক্ত ঘষলে স্ক্র্যাচ পড়তে পারে।
● এতেও দাগ না গেলে বেকিং সোডা ও হাইড্রোজেন–পার অক্সাইড ২: ১ অনুপাতে মিশিয়ে (অর্থাৎ হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড ও এর দ্বিগুণ বেকিং সোডা, পেস্টের মতো হবে) দাগের শক্তি বুঝে মোটা কাপড় বা শক্ত ব্রাশ দিয়ে বেশ কিছুটা সময় ঘষে দাগ তুলুন। চাইলে মিশ্রণটি প্রয়োগ করে ২০ মিনিট রেখে দিয়ে এরপরও ঘষতে পারেন। এভাবে রেখে দিলে ঘষাঘষির পরিশ্রম কমে আসে। এর কার্যকারিতাও বেশি। হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডের পরিবর্তে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যায়। (তবে অনুপাত হবে ৩: ১, অর্থাৎ ব্লিচিং পাউডার ও এর তিন গুণ বেকিং সোডা। হারপিকও কঠিন দাগ তোলে (৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঘষে তুলুন)।
● চিটচিটে ভাব দূর করতে কুসুম গরম জল কাজে দেবে।
আরও কিছু
● টাইলসে বা বেসিনে ক্রমাগত জল পড়তে দেবেন না। ঘর ও বাথরুমের মেঝে শুকনো রাখুন। জলেও দাগও হতে পারে, মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে (বিশেষত বয়স্ক ব্যক্তিদের)।
● ১-২ দিন পরপর বেসিন ও সিঙ্কের পাইপে কুসুম গরম জল এবং রান্নাঘরের কলপাড়ে, বাথরুমের মেঝেতে জল যাওয়ার জায়গায় ও কমোডে ফুটন্ত জল দিন। জীবাণুমুক্তও থাকবে, জল যাওয়ার পথটাও সচল থাকবে, জল জমে দাগ হবে না।