রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

একুশের নির্বাচন ও জোড়া কালিদাস: ব্রাত্য বসু

December 5, 2020 | 6 min read

ব্রাত্য বসু

এই লেখাটি গত ৩রা ডিসেম্বর বর্তমান পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।

এই বঙ্গে ২০২১-এর আসন্ন নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ তত চড়ছে। রাজ্য বিজেপির ধরন-ধারণ দেখে মনে হচ্ছে, কোভিড বা অর্থনীতির সঙ্কট নিয়ে তাদের কিছু যায় আসে না। মানুষ বাঁচল না মরল, তা নিয়েও তাদের লবডঙ্কা। তাদের পাখির চোখ একটাই, তা হল যেনতেন প্রকারে রাজ্যে ২১-এর নির্বাচন। দরকারে রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করা, সিবিআই, ইডি ইত্যাদি এজেন্সিকে দিয়ে তৃণমূলের মনোবল ভেঙে দেওয়া, মৌখিক ‘ভায়োলেন্স’ এমনকী দরকারে চরম উচ্ছৃঙ্খল নৈরাজ্য তৈরি করে সরকারকে বিপাকে ফেলা। বিজেপির বহুখ্যাত আইটি সেল দিয়ে ‘ভার্চুয়াল’ দুনিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সম্পর্কে মিথ্যা ও কুৎসার বেসাতি করা, সাম্প্রদায়িক ‘পোলারাইজেশন’ তৈরি করে গোটা রাজ্যজুড়ে দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করা। আরএসএস ও বিজেপির বহিরাগত নেতাদের এনে দরকারে রাজ্য-বিজেপির ভূমিপুত্রদের মাথায় বসিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা ও তৃণমূলের থেকে নেতা-কর্মী ভাঙিয়ে আপাতভাবে সম্মান দিয়ে, ব্যবহার করে, পরে ছিবড়ে করে ছুঁড়ে ফেলা। এই ‘মিশন’ নিয়েই কেন্দ্রীয় বিজেপি বা আরএসএস পশ্চিমবঙ্গে আপাতত জোর কদমে এগচ্ছে। প্রধানত অন্য রাজ্য থেকে আগত এই পরিযায়ী দলটি এইভাবেই তাদের ঘুঁটি সাজাচ্ছে, গঙ্গার এপারে দেশের সাংস্কৃতিক এবং উন্নয়নমুখী এই রাজ্যটিকে গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে তাকে অশান্ত না করে তোলা পর্যন্ত এই হানাদার ও খাকি-র দলের মাথার ভেতরে জ্বলতে থাকা ধিকিধিকি চুলোর কয়লার আঁচ হয়তো শান্তি পাবে না।
তৃণমূল কংগ্রেস তথা বাংলার নিজস্ব দলটিও অবাঙালি রাজনৈতিক এই জঙ্গি হানাদারি রুখতে মরিয়া। তাদের সবথেকে বড় সুবিধে এই যে, তারা এই জলবায়ুতে বেড়ে ওঠা বাংলার নিজস্ব দল। তাদের রাজনৈতিক কর্মীদের কৈফিয়ত দাখিল করতে হয় এই বাংলায়, তার রাজধানী কলকাতা শহরের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। নাগপুরের ‘হেডগেওয়ার ভবন’, বা দিল্লির ‘আকবর রোড’, বা ‘গোপালন ভবন’ বা ‘দীনদয়াল মার্গ’-এ নয়। বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ রাজনৈতিক দায়-দায়িত্ব তাই তৃণমূল কংগ্রেসকে সুদে-আসলে এই বাংলাতেই চুকোতে হয়। আর যেহেতু তৃণমূল কংগ্রেস দলটির জন্ম গণ-আন্দোলনের জঠর থেকে, যেহেতু তাদের অগ্নিকন্যা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছর নাগাড়ে আন্দোলন করে এরাজ্য থেকে সিপিএমের কায়েমি মৌরসিপাট্টার পাততাড়ি গুটিয়ে দিয়ে এক স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় গণনেত্রী মসিহা হয়ে উঠেছেন, ফলে বিজেপির মতো স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে কোনও গণস্বার্থবাহী আন্দোলন না করা সাম্প্রতিক রাজ্য নেতাদের সঙ্গে তাঁর এক মনোভঙ্গিগত সংঘর্ষ হতে বাধ্য। কেননা তাদের সব পদ-ই প্রায় ‘নমিনেটেড’ তথা ‘মনোনীত’, রাজনৈতিক স্বতঃস্ফূর্ততার বিকাশ ও স্বাভাবিকতা যেহেতু তাদের বাড়বৃদ্ধিতে নেই, ফলে আন্দোলন করে মানুষের আবেগকে পুঁজি করে সরকার প্রতিষ্ঠা করা তৃণমূল দল ও তার নেত্রী তাদের দু’চক্ষের বিষ, শ্রেণীস্বার্থ-বিরোধী। সেইসঙ্গে যেহেতু বিজেপি যে-কোনও আঞ্চলিক ‘আইডেনটিটি’কে খতম করে, ‘এক দেশ-এক ধর্ম-এক ভাষা’ নামক অলীক তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাই ‘বাংলা বলা’ বা ‘বাঙালি’ বা ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ বিষয়গুলিই তাদের কাছে প্রায় আস্তাকুঁড়। একইসঙ্গে সেইজন্য তারা আঞ্চলিক দলগুলিরও বিনাশ চায়, চায় মাত্র দু’টি দল ভারতবর্ষে থাকুক, অবিকল মার্কিনি ধাঁচ ‘ডেমোক্র্যাট’ আর ‘রিপাবলিকান’-এর মতো। বহুদলীয় গণতন্ত্র চৌপাট করে যাতে ভবিষ্যতে ‘রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রিক’ শাসন ব্যবস্থা দেশে চালু করা যায়।
আঞ্চলিক দলের এইখানে যেমন সুবিধা, তেমনি অসুবিধাও আছে। যেহেতু তারা প্রধানত একটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ, সেইজন্য রাজ্যের অন্যান্য দলগুলি রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বোঝে না। কেন্দ্রে আসীন একটিমাত্র জাতীয় দল যখন সর্বনেশে ফ্যাসিস্ত হয়ে ওঠে, তখন অঙ্গরাজ্যের অন্যান্য দলগুলির উচিত সেখানে শক্তিশালী আঞ্চলিক দলটিকে অন্তত তলায় তলায় সমর্থন জোগানো। সেখানে তারা ‘ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে’-র প্রাচীন প্রবাদে শামিল হয়ে 
শক্তিশালী আঞ্চলিক দলটির পেছনেই আদা-জল খেয়ে লেগে পড়ে। তাদের আশা থাকে, এই পদ্ধতিতে অন্তত তারা একদিন উক্ত অঙ্গরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে পারবে। ফ্যাসিস্ত শক্তির কাছে যে বিরোধীমাত্রেই বিষবৎ, তারা যে আদতে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, গোবরপরিকীর্ণ আহ্লাদীর দল তা বোঝে না।
পশ্চিমবঙ্গের কথাই ধরা যেতে পারে। বিজেপি যেখানে রাষ্ট্রগতভাবে অপর জাতীয় দল কংগ্রেস এবং আদর্শগতভাবে সিপিএম তথা কমিউনিস্ট বিরোধী, সেটা বুঝেও রাজ্য কংগ্রেস আর সিপিএম এমন হাবভাব দেখাচ্ছে যেন ‘যার শিল যার নোড়া, তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া’। ২০১১ থেকে যেখানে এই দুই দলের ভোট প্রাপ্তি শতাংশের হিসেবে আস্তে আস্তে দশকেরও নীচে নেমে এসেছে, সেখানে কুঁজো এখনও চাইছে চিৎ হয়ে শুতে। কংগ্রেস মুখে যাই বলুক, তাদের ভেতরের কথা হল, রাজ্য কংগ্রেসের তাবড় নেতারা যেখানে বরাবর দিল্লির কাছে হাতজোড় করে থেকেছেন, বা বিদ্রোহ করে দল ভেঙে বেরলেও, কিছুদিন বাদে সুড়সুড় করে আবার কংগ্রেসে ফিরে ‘পুনর্মূষিকো ভব’-তে পরিণত হয়েছেন সেখানে কংগ্রেস দলের আধার থেকে বেরনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করে স্বাধীন, স্বাবলম্বী ও নিজস্ব দল গড়ে সফল হতে পারেন? আর যদি সফল হনই বা, তার সঙ্গে রাজ্য কংগ্রেস হাত মেলালে তো, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের জ্বালা তাতে চড়চড় করে বাড়ে। ফলে অবিকল কালিদাসের মতোই গাছে বসে নিজেরই ডাল কেটে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কংগ্রেস। কালিদাসকে যে বিজেপির ক্রীতদাস বানানোর পথে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা তারা বুঝেও বুঝছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বা শচীন পাইলটের মতো রাজনৈতিক আচরণ অন্তত কস্মিনকালেও কংগ্রেসের সঙ্গে করেননি, তা মুর্শিদাবাদি জগৎশেঠদের মাথায় ঢুকেও ঢুকছে না।
পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের রাজনৈতিক মত ও চিন্তার দৈন্য আরও করুণ। তারাও মুখে তৃণমূলের নামে যা খুশি যাই বলুক, তাদের ভেতরের আদত রাগ হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস তাদের এত বছরের ‘করে খাওয়া’ যাকে বলে বন্ধ করে দিয়েছেন। সিপিএমের তাবৎ বাঘা নেতারা, যাঁরা সংসদীয় গণতন্ত্রে পার্টির মুখ হন বা লড়েন, তাঁদের সবাই, গত ২০০৯ থেকে রাজ্যে এখন পর্যন্ত যে চারটি প্রধান লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, তাদের সবাই কোনও না কোনও নির্বাচনে গো-হারা হেরেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে গৌতম দেব, সুজন চক্রবর্তী থেকে বিকাশ ভট্টাচার্য, এনারা কেউই এই তালিকার বাইরে নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে যে হারজিত থাকতেই পারে, এই স্বাভাবিক তথ্যটি তাঁদের চৌত্রিশ বছরের মৌরসিপাট্টার দাম্ভিক হাড়ে এখনও  জ্বলুনি জারি রেখেছে। ফলে পাশের রাজ্য ত্রিপুরার উদাহরণ হাতে থাকা সত্ত্বেও, তাদের অধিকাংশ কর্মী মনে মনে রাম-বাম জোট চান; নেতারাও রাজ্যে বিজেপির থেকে অনেক বেশি তৃণমূলের প্রতি চোখা বাপান্তকর শব্দরাজি ছুঁড়তে ব্যস্ত। অন্তত তিনটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ত্রিপুরায়, বামপন্থীদের প্রতি বিজেপির ভয়ঙ্কর অত্যাচার বিশদে বেরিয়েছে। সেখানে তাদের অজস্র পার্টি অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পার্টিকর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে মারধর, হত্যা, ধর্ষণ, বিনা বিচারে জেলে ভরে দেওয়া ব্যাপকহারে চলছে। ক্ষমতায় এলে বাংলাতেও যে ওরা একই কাজ করবে তা নিঃসন্দেহ। কারণ বামেদের ওরা মতাদর্শগত শত্রু বলে মনে করে। এ রাজ্যের কমিউনিস্টদের অহঙ্কারী এবং মাৎসর্যপীড়িত মগজে সেটা ঢুকছে না। এর জন্য অন্যতম দায়ী নিঃসন্দেহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, ‘বদলা নয়, বদল চাই’ মার্কা রাবীন্দ্রিক স্লোগান, টেলিভিশনে বসে চিল চিৎকার করা বা নেত্রীকে ইচ্ছেমতো গালমন্দ করা বামপন্থী মাথায় যে এখন ঢুকছে না, তার কারণ ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের শত-সহস্র অত্যাচারের পরেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানত শান্তি ও উন্নয়নের বার্তাই বারবার দিতে চেয়েছেন। বলাই বাহুল্য, ক্ষমতায় এলে বিজেপি রবীন্দ্রসঙ্গীত না শুনিয়ে প্রথমেই এরাজ্যে ‘ত্রিপুরা মডেল’ই প্রয়োগ করবে।
পশ্চিমবঙ্গে এই আত্মঘাতী কংগ্রেস এবং হারাকিরি করা সিপিএমের মাঝখানে সঠিক কথাটি বলেছেন সম্প্রতি বিহার রাজ্য নির্বাচন কংগ্রেস ও সিপিএমের সঙ্গে জোট করে ১৯টি আসনে লড়ে ১২টি আসনে জেতা (যেখানে কংগ্রেস ৭০টি আসনে লড়ে পেয়েছে ২০টি আসন, সিপিএমের আসনসংখ্যা লজ্জাবশত আর উল্লেখ করছি না) তথা ভালো ফল করা সিপিআইএমএল লিবারেশন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সিপিএমের বিরুদ্ধে মূল যে কথাটা বলেছেন, তা হল, ‘একটা গোটা রচনা তৃণমূল বিরোধিতা করে, ফুটনোটে সামান্য কিছু বিজেপি বিরোধিতা পশ্চিমবঙ্গে চলতে পারে না। এরাজ্যে বামেদের মূল নিশানা হওয়া উচিত বিজেপিকে হারানো।’ দীপঙ্করবাবু মোদ্দা যে কথাটা বলেছেন তা হল, সিপিএম যে বলছে, তৃণমূল ও বিজেপি দু’জনেই প্রধান শত্রু, তা তত্ত্বগতভাবেই ভুল একটি মতাদর্শ। এ অনেকটা বুনোহাঁসের পেছনে ধাওয়া করা বা ভাবের ঘরে চুরি করা। একটি নির্ণায়ক ভোটে  কখনও দু’জন সমপরিমাণ শত্রু থাকতে পারে না। তাঁর মতে, এরাজ্যে বামেদের মূল শত্রু হিসেবে বিজেপিকেই চিহ্নিত করা এবং মূল বামভোট নিজের দিকেই ‘কনসোলিডেট’ করা। দীপঙ্করবাবুর কথায় এরাজ্যে সিপিএম যে বলছে, তৃণমূল-বিজেপি ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা’য় মদত দিচ্ছে, এর ভেতরের অর্থ হল, তারা বলতে চাইছে বিজেপি হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, তৃণমূল সেখানে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে। সমস্যা হল, বামেদের এই একই কথা বিজেপিও বলছে। ফলে বামেরাও যদি একই কথা বলে, তাহলে এরাজ্যে বিজেপির জমিই আরও শক্ত হবে। সেক্ষেত্রে বাম আর রামের মূল লাইনের কোনও ফারাক থাকবে না। তার চেয়ে বরং বামপন্থীরা নির্বাচনের মূল ইস্যু করুক দেশের বেহাল অর্থনীতি, উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো বিষয়কে। তাতে সাম্প্রদায়িকতা থেকে মানুষের ফোকাস সরিয়ে আনা যাবে। লিবারেশন মনে করে, বিহার নির্বাচনে তাদের সাফল্যের মূল কারণ হল, ধর্মকে পেছনে রেখে এই ইস্যুগুলিকে সামনে আনা।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য একথাও বলছেন যে, তৃণমূল সরকারে আছে। এটা সত্যি। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, তৃণমূল একচেটিয়া বৃহৎ পুঁজির দল নয়। বরং আঞ্চলিক ছোট পুঁজির দল, যে পুঁজির সঙ্গে বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজির দ্বন্দ্ব রয়েছে। এবং, ঠিক একারণেই তৃণমূল একটি প্রতিষ্ঠান-বিরোধী দল। রাজ্যে সরকারে থেকেও তারা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে এরাজ্যে বামেদের কিছুতেই বিজেপি ও তৃণমূলকে এক দাঁড়িপাল্লায় মাপা উচিত নয়।
লিবারেশন যদিও তৃণমূলের সঙ্গে কোনও নির্বাচনী সমঝোতার কথা বলেননি। শুধু তাঁরা মনে করেছেন, এই নির্ণায়ক গুরুত্বপূর্ণ ভোটে বাম-তৃণমূল নির্বাচনী সমঝোতা হলে, সেটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা হবে না। এরাজ্যে সিপিএমের যুক্তি হল, সরকারে তথা ক্ষমতায় আছে তৃণমূল, ফলে তাদের সঙ্গে কোনও জোট হতে পারে না। কিন্তু তাদের একটু মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে, অতীতে সরকারে তথা ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে, অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি, ওড়িশার বিজেডি এবং বিহারে আরজেডির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে লড়েছে উক্ত রাজ্যের বিরোধী দল সিপিএম। তাহলে তৃণমূলকে অচ্ছুৎ ভাবার কারণ কী? সাধারণ মানুষের নেত্রী মমতার বিরুদ্ধে এলিটের ঘৃণা, নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিকতার বিদ্বেষ নাকি ওই চৌত্রিশ বছরের মৌরসিপাট্টা হারানোর দগদগে জ্বালা? কোনটা?
এখন দেখার, এই জ্বালা বা বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে এ রাজ্যে সিপিএম বা কংগ্রেস আবার কোনও ঐতিহাসিক ভুল করে, নাকি দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মতো সহজ বাস্তবতার স্বাভাবিক সত্যপথটিকে তারা অনুসরণ করে। রাজ্যের সুস্থবুদ্ধি সম্পন্ন অধিকাংশ মানুষও সেই উত্তরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bratya Basu, #West Bengal Election 2021

আরো দেখুন