যাদের সাহস আছে আমাদের সঙ্গে থাকুন , না হলে লুটেরাদের সঙ্গে চলে যান: মমতা
নানা ‘অছিলায়’ দলকে কাঠগড়ায় তুলে কার্যত গেরুয়া শিবিরের দালালি করতে শুরু করেছেন তৃণমূল শিবিরের একাংশ। সেই ‘দোদুল্যমান’ অংশকে দল থেকে চলে যাওয়ার কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দলের জেলা সভাপতি এবং পদাধিকারীদের সঙ্গে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতার স্পষ্ট বার্তা—দলে থেকে যাঁরা লুটেরাদের দালালি করছেন, তাঁদের এখানে কোনও প্রয়োজন নেই। সেন্ট্রাল এজেন্সির ভয় দেখাচ্ছে বলে অন্য দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে! এরকম ভীতুদের দরকার নেই। যাঁরা চলে যেতে চান, এখনই যান। গোপন শত্রুতা অনেক বেশি বিপজ্জনক। এরপরই তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় প্রত্যয়ী সুর—যাঁদের হিম্মত আছে, বিজেপির বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়তে পারবেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়েই লড়াইয়ের ময়দানে বুঝে নেব। এই পর্বে মনোবেদনাও প্রকাশ করে ফেলেন মমতা। তাঁর কথায়, চেয়ারের জন্য কেউ কেউ আমার মৃত্যু কামনা করছে। কিন্তু আমার মৃত্যু তো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, সে উপরওয়ালাই ঠিক করবেন। তবে যতদিনই বাঁচি না কেন, বাংলার মানুষের সেবা করে যাব। সুপ্রিমোর এই আবেগভরা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া মেলে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির ভাষণে। কেঁদে ফেলেন তিনি। ধরা গলায় বলেন, বাংলার মানুষের স্বার্থে আপনাকে আরও দীর্ঘদিন বাঁচতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিল এবং সব বেচে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ‘সর্বনাশা’ আখ্যা দিয়ে আগেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রের ‘অগণতান্ত্রিক’ এই দুই পরিসরকে সর্বাত্মক আন্দোলনে নিয়ে যাওয়ার রণকৌশলও এদিন ঠিক করে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। লাগাতার কুৎসা আর অপপ্রচারের জবাবে গত ন’বছরের উন্নয়নই যে তাঁর ভোট যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার, তাও জানিয়ে দেন তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রীর নির্দেশে দলের কিষাণ শাখা আগামী ৮, ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর অবস্থান করবে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। হাল, লাঙল সহ অন্যান্য কৃষি সরজ্ঞাম এবং ফসল নিয়ে অবস্থানে বসবেন সবাই। ১০ ডিসেম্বর সেই অবস্থানে উপস্থিত থাকবেন মমতা নিজেই। ওই সময়েই ব্র্যাবোর্ন রোডে দলের শ্রমিক শাখা কেন্দ্রের ‘সব বেচে দেওয়া’ আগ্রাসন নীতির প্রতিবাদে অবস্থান-বিক্ষোভ করবে।
আন্দোলনের এই কর্মসূচির পর্বে আগামী ১১ থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘বঙ্গধ্বনি’ কর্মসূচি নিয়ে ২৯৪টি বিধানসভায় প্রচার-অভিযান চালাবে তৃণমূল। মমতা সরকারের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নির্যাস গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র পৌঁছে দেবেন জনপ্রতিনিধিরা। তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেও আগামী সোমবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে প্রথমে দক্ষিণবঙ্গ এবং পরে ১৫ ও ১৬ তারিখ উত্তরবঙ্গ চষতে ময়দানে নামছেন। জরুরি এই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গ আসেনি একবারের জন্যেও। তবে ‘অহঙ্কারই পতনের কারণ, অহঙ্কার করে ট্রাম্পেরও পতন হয়েছে’—মমতার এহেন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, হলদিয়া সহ আরও কয়েকটি ব্লকের সভাপতি সহ সাংগঠনিক রদবদলের জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের দলীয় সভাপতি শিশির অধিকারীকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।