নেত্রীর কাছে যা বলার বলেছি, দল ছাড়ার প্রশ্নই নেই: অতীন ঘোষ
দিন দুয়েক আগে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে রীতিমত ক্ষোভ উগড়ে দেন কলকাতা পুরসভার প্রসাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ (Atin Ghosh)। তিনি দাবি করেন দলে তিনি বঞ্চিত। দলের প্রতি ক্ষোভ প্রসঙ্গে আজ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে কথা বললেন তিনি। ব্যাখ্যা দিলেন নিজের বক্তব্যের।
প্রঃ শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে আপনি আপনার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। এতদিন পর হঠাৎ করে এখন কেন এই কথাগুলো বললেন?
অতীন: আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছি মাত্র। এরম প্রশ্ন আগে আসেনি বলে জবাব দিইনি।
প্রঃ আপনি বলেছেন দলের শৃঙ্খলা যারা প্রকাশ্যে ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে বলে মনে হচ্ছে আপনার?
অতীন: দলের অনেকে প্রকাশ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে। এক নেতা প্রকাশ্যে আরেক নেতার বিরুদ্ধে বলছেন। দলের শৃঙ্খলা কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি কার্যকরী ভূমিকা নিলেই এসব ঘটনা ঘটত না।
প্রঃ আপনি কি তাহলে বলছেন শৃঙ্খলা কমিটি তাদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে?
অতীন: মুখ্যমন্ত্রী সারা রাজ্যের দায়িত্বে আছেন। তাঁর পক্ষে সব দিকে নজর রাখা সম্ভব না। তিনি দলের বিশ্বস্ত লোকদের ওপর ভরসা করেছিলেন। তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারেননি।
প্রঃ আপনি বলেছেন রাজনৈতিকভাবে আপনি কোণঠাসা হয়েছেন।
অতীন: আমি দলের প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলাম। দীর্ঘ ২২ বছর পরে আমার মনে হয়েছে যে দায়িত্বগুলি আমি ২০০৯-১০ অবধি পালন করেছি, সেই দায়িত্ব থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন লোকেদের আনা হয়েছে। স্বভাবতই আমার নিজেকে বঞ্চিত মনে হয়েছে।
আমি দুবার বরানগর বিধানসভা কেন্দ্রে লড়েছি। সেখানে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী আমাকে জোচ্চুরি করে ১৯০০ ভোটে হারিয়ে দেয়। সেই সময় তার সাথে আমাদের দলের লোকও হাত মিলিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধেও কোন শাস্তির ব্যবস্থা হয়নি। ২০১১- তে দল বলল তোমাকে দাঁড়াতে হবে না। আমি দলের বাধ্য সৈনিকের মতো মেনে নিয়েছি। আমি যে জায়গায় ছিলাম আজ আর সে জায়াগায় নেই। তাই আজ যখন প্রশ্ন উঠেছে তাই আমি উত্তর দিয়েছি।
প্রঃ শুভেন্দু মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন। আপনি তো ওঁকে জননেতা হিসেবেই দেখেন। কি বলবেন?
অতীন: দলে যেকজন জননেতা আছে শুভেন্দু তাঁদের অন্যতম। শুভেন্দুর মতো নেতা দল ছাড়লে দলের ক্ষতিই হবে।
প্রঃ আপনি যেহেতু বঞ্চনার শিকার, তাহলে কি দল ছাড়ার কথা ভাবছেন?
অতীন: আমার বিবৃতির কোনও জায়গায় কি এরকম ইঙ্গিত আছে? আমি তো দলের নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি আমার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে। দলটার আমি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই প্রশ্নই আসতে পারে না।
দলের নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করাটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। আমার ক্ষোভ যন্ত্রনা থেকে এটা বেরিয়েছে। আমাকে আগে কেউ খোঁচায়নি প্রশ্ন করেনি, তাই বলিনি। আমাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছে, তখন আমার যন্ত্রনা থেকে আমি বলেছি।
প্রঃ আপনি শুক্রবারে এই কথা বলেছেন, আজ রোববার হয়ে গেল। এখন অবধি দলের পক্ষ থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে কি?
অতীন: আমার সাথে নেত্রীর কথা হয়েছে। আমার কাছে উনি ব্যখ্যা চেয়েছিলেন কেন বলেছি? সেই ব্যখ্যা দিয়েছি। তাতে উনি সন্তুষ্ট এটা বলতে পারি।
প্রঃ এই মুহূর্তে আপনি দল ছাড়ছেন না?
অতীন: দল ছাড়ার প্রশ্ন আসছে কেন? আমি কি কোন জায়গায় বলেছি যে দল ছাড়ব?
শুনুন, শুভেন্দু দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নয়। রাজীব ব্যানার্জী দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নয়। আমি দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমি তখন কংগ্রেসের কাউন্সিলর। আমি কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিতে দিতে এসে তৃণমূল কংগ্রেস করেছি।
মমতা ব্যানার্জীকে যারা নতুন দল গঠনে সাহায্য করেছেন সেই চার পাঁচজনের মধ্যে আমি একজন। ইলেকশন কমিশনে যখন দল কংগ্রেসে থাকা কালীন রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল তার মধ্যে আমি অন্যতম ছিলাম। তখন আমি কংগ্রেস দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলাম। যেই দলটা আমরা রক্ত, ঘাম দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছি সেই দলটা ছাড়ার প্রশ্ন আসছে কেন?
প্রঃ এই মুহূর্তে আপনি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও বললেন। তিনি কি মন্ত্রীত্ব বা দল ছাড়তে পারেন এরকম কোন ইঙ্গিত আছে?
অতীন: আমি শুধু উদাহরণ দিলাম রাজীব ব্যানার্জী, শুভেন্দু অধিকারীরা পরবর্তীকালে দলে এসেছে। কিন্তু দলটা যখন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম তখন তো এরা ছিল না। তাই ওদের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলবেন না।