আসানসোলে কফি হাউসের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’। প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মান্না দের কণ্ঠে এই কালজয়ী গান শুনে অনেকেরই পুরনো স্মৃতি ফিরে আসে। তবে এই গানে উল্লেখ থাকা কফিহাউস আজও রয়েছে কলকাতায়। গানের সুবাদে এর নাম সারা রাজ্যের মানুষের কাছেই পরিচিত। তাই ইচ্ছা থাকলেও দূরত্বের কারণে কলকাতার কফি হাউসে ক্ষণিকের আড্ডা দেওয়ার সাধ পূরণ হয়নি আসানসোলের বহু বাসিন্দার। এবার সেই ইচ্ছাপূরণের সুযোগ মিলবে এই খনি শহরেই। এবার কফি হাউসের আমেজ পাওয়া যাবে আসানসোলে বসেই। শহরের রবীন্দ্রভবনের পাশেই গড়ে উঠেছে আসানসোল কফি হাউস। মঙ্গলবার যার দ্বারোদাঘাটন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এতদিন নিখাদ আড্ডা দেওয়ার জায়গার বড়ই অভাব ছিল আসানসোলে। তাই একটু অন্যরকম আড্ডার জায়গা পেয়ে উচ্ছ্বসিত সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালি।
পুরনো দিনের গ্রামাফোনের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচিত তেমন একটা ঘটেনি। তাই সেই পুরনো গ্রামাফোনে বাজবে কফি হাউসের গান, কফি বা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তা উপভোগ করতে পারবেন আসানসোলের বাসিন্দারা। হ্যাঁ, স্বপ্ন মনে হলেও এটাই বাস্তব হলো।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে সেভাবে ভালো আড্ডা দেওয়া, আলোচনা করার সরকারি স্থান ছিল না। এই অভাব বহু মানুষ অনুভব করেছেন। তাই পুরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকেই এই ধরনের একটি জায়গা গড়ে তোলার দাবি করতে থাকেন। এরপরেই এই কফি হাউস গড়ে তোলার ভাবনা। কফি হাউসটি গড়ে উঠেছে রবীন্দ্রভবন চত্বরেই শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে। তার কারুকার্যও হয়েছে আসাধারণ। বাইরে এক বিশাল কেটলি ও চায়ের মডেল বানানো হয়েছে। ভিতরে ঢুকলে কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসের থেকে একে আলাদা করা কঠিন। অবিকল একই আদলে নীচে রয়েছে টেবিল, উপর তলায় ব্যালকনি। ৩০টি টেবিল ও শতাধিক চেয়ার রয়েছে। চা, কফি থেকে সব স্ন্যাক্সই পাবেন আড্ডাপ্রিয় ও ভোজনরসিক বাঙালিরা। সঙ্গে মৃদু সুরে বাজবে গ্রামোফোনের আওয়াজ। এছাড়া থাকবে ম্যাগাজিন থেকে বই। রবীন্দ্রনাথকে বিশেষ সম্মান জানাতে থাকবে বিশেষ টেবিল। এছাড়াও কফি হাউসের দেওয়ালজুড়ে নানা মনীষীদের ছবি। তিনি বছরের চেষ্টায় এটি গড়ে তুলেছেন আর্কিটেক্ট তাপস ঘোষ।
এই সৃষ্টি পেয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচতে চলেছেন দূষণে হাঁসফাঁস করা শহরের বাসিন্দারা। আসানসোল রাজ্যের অর্থনীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ। শিল্প বাণিজ্যে এর গুরুত্ব কলকাতার পরেই। বড় বড় শপিং মল, উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি সবই আছে। কিন্তু রুচিশীল আড্ডার ও আলোচনা করার জায়গা সেভাবে ছিল না। যার অভাব বারবার অনুভূত হয়েছে শহরের বাসিন্দাদের। অনেকের দাবি, আড্ডা দিয়ে শুধু সময় কাটানো নয়, প্রকৃত পরিবেশ পেলে অনেক সৃষ্টিশীল ভাবনারও জন্ম হয়। কফি হাউস দেখে একথা বলাই যায় সেই পরিবেশের ঠিকানা পেয়ে গেলেন এই শহরের মানুষ। পুরসভার এই উদ্যোগে খুশি শহরের মানুষ।