দেশ বিভাগে ফিরে যান

বন্‌ধের সাফল্যে বিপাকে কেন্দ্র

December 9, 2020 | 2 min read

‘জবরদস্তি’ হয়নি। ছিল না চোখ রাঙানিও। তারপরও সফল কৃষকদের ডাকা ‘ভারত বন্‌ধ’। কারণ মঙ্গলবার গোটা ভারত এককাট্টা হয়ে এই ইস্যুতে দাঁড়িয়েছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সরকারের (Central Government) ‘কালা কানুন’-এর প্রতিবাদে। যে ইস্যুতে সমর্থন ছিল তাবৎ বিজেপি-বিরোধী দলের। হাইওয়েতে গাড়ি নেই, দোকানপাটের ঝাঁপ ফেলা, বাসও নগণ্য। রাজ্যে রাজ্যে ছিল একই চিত্র। পশ্চিমবঙ্গেও মিশ্র সাড়া পড়েছে এই কর্মসূচির। সকাল থেকে জেলায় জেলায় ছিল রেল ও সড়ক অবরোধের ছবি। সরকারি বাসও তুলনায় এদিন অনেক কম চলেছে। বেসরকারি গণপরিবহণ প্রায় বন্ধ। অর্থাৎ এক কথায় কৃষকদের এই প্রতিবাদ (Farmers Protest) কর্মসূচি সফল। যা সরাসরি চাপে ফেলে দিল কেন্দ্রকে। বুধবারের নির্ধারিত বৈঠকের আগেই তাই নড়েচড়ে বসলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর একইসঙ্গে গুরুত্বের ভার অনেকটা বেড়ে গেল আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের।

কেন্দ্র যে বেসামাল হয়েছে, আন্দোলনকারী কৃষকরাও তা বুঝেছেন। তাই উচ্ছ্বসিত তাঁরা। মঙ্গলবার বিকেলে সিংঘু সীমানায় কৃষক সংগঠনগুলি দাবি করেছে, ‘ভারত বন্‌ধ সফল। কৃষকদের ডাকা ভারত বন্‌ধ কর্মসূচির সামনে মাথা নোয়াতে হয়েছে কেন্দ্রকে। সরকার বুঝেছে, কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। দিল্লি-হরিয়ানার মানুষকে সমস্যায় ফেলতে চান না আন্দোলনকারীরা। কিন্তু কৃষকরা বুরারি গ্রাউন্ডে যাবেন না। তাঁদের রামলীলা ময়দানে প্রতিবাদের অনুমতি দেওয়া হোক।’ এহেন টানাপোড়েনের মধ্যেই এদিন চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আম আদমি পার্টির (আপ) অভিযোগে। তারা দাবি করেছে, ‘সিংঘু সীমানায় গিয়ে কৃষকদের সমর্থনে বার্তা দেওয়ায় মঙ্গলবার পুলিস গৃহবন্দি করে রেখেছে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে।’ দিল্লি পুলিস অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রী বিনা বাধায় যে কোনও জায়গায় যেতে পারছেন।’ পরে কেজরিওয়াল নিজে আবার অভিযোগ করেছেন, ‘আমার মঙ্গলবারও সীমানায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সম্ভবত তা জানতে পেরেই এভাবে আমাকে আটকে দেওয়া হয়েছে।’

টানা ১৩ দিন। কৃষক আন্দোলনের ‘এপিসেন্টার’ হয়ে ওঠা দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমানার সর্বত্র এদিন ছড়িয়ে ছিল চাপা টেনশন। জাতীয় সড়ক জুড়ে পুলিসবাহিনী, সিআরপিএফ জওয়ানদের দফায় দফায় সিকিউরিটি চেকিং, ব্যারিকেড ছিল পুরোমাত্রায়। সিংঘু সীমানা অবরোধ করে রাখা শয়ে শয়ে ট্রাক্টর, ট্রলিতেই সংসার পেতেছেন কৃষকেরা। এদিন সীমানা জুড়ে বন্ধ ছিল সমস্ত দোকানপাট। আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘কারও সঙ্গেই জবরদস্তি করা হয়নি।’ একই ছবি ধরা পড়েছে কৃষক বিক্ষোভের আরেক কেন্দ্রস্থল দিল্লি-রোহতক করিডরের তিক্রি সীমানায়। পুলিস, আধা সেনা, র‌্যাফ, ড্রোনের নজরদারিতে গোটা এলাকা এদিন একপ্রকার যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয়। দিল্লি জুড়েই অবশ্য এদিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয় উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর ও নয়ডার চিল্লা সীমানা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ২৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত ছিল চাক্কা জ্যাম। অবরোধ হয়েছে টোল প্লাজাগুলিতেও। 
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে পুলিস দেখা করতে দিচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই প্রতিবাদে বসে যান দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিশোদিয়া। একই অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, কৃষকদের সমর্থন করায় সিপিএম নেত্রী সুভাষিণী আলিকে ‘গৃহবন্দি’ করা হয়েছে। গুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সময় গ্রেপ্তার করা হয় সিপিএম এমপি কে কে রাগেশ সহ দলের অন্য নেতাদের। লখনউয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন সপার কর্মীরা। আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি, এদিন ২৫টি রাজ্যের ১০ হাজার জায়গায় সফল বন্‌ধ হয়েছে। রাজস্থানের জয়পুরে বিজেপির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় কংগ্রেস। বিহারে রাস্তা এবং ট্রেন অবরোধ হয়েছে। ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্রেও। নিজের গ্রামে দিনভর অনশন করেন আন্না হাজারে। অসমেও বন্‌ধ পালনের চেষ্টা করেছেন আন্দোলনকারীরা। অগ্নিগর্ভ ইস্যু হয়ে উঠছে এই আন্দোলন। কৃষি আইন বাতিল হবে কি? উত্তর চাই… হ্যাঁ অথবা না-তেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bharat Bandh, #Farmers' protest

আরো দেখুন