এবার শীতে রঙিন হবে শান্তিনিকেতন
করোনা আবহে বন্ধ স্কুল, কলেজ। ট্রেন সেভাবে চালু হয়নি। ফলে বাইরে বেড়াতে যাওয়ারও উপায় নেই। তাই হাতে অখণ্ড সময়। শীত পড়তেই শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা সেই সময় বাগান পরিচর্যার কাজে লাগাচ্ছেন। বাড়ির সামনে একচিলতে বাগান, উঠোন, বারান্দা বা ছাদ সেজে উঠছে। তাই এবার শীতে রঙিন হয়ে উঠবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় শান্তিনিকেতন (Shantiniketan)।
নভেম্বরের শুরুতে হালকা শীত পড়তেই শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন নার্সারিতে মরশুমি চারাগাছ বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে ফুলগাছ লাগানোর রেওয়াজ রয়েছে বরাবরই। ফুলের বাগান শান্তিনিকেতনের বহু পরিবারের অহঙ্কার। তবে এই ধারা আজকের নয়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমল থেকেই চলে আসছে। বিদেশে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসার পর রথীন্দ্রনাথের আমলে বৈজ্ঞানিক ও নান্দনিক পদ্ধতি অনুসরণে শান্তিনিকেতনের দেশি ও বিদেশি ফুলের পরিচর্যার বিকাশ ঘটে। যার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনের বিভিন্ন বাগান ও ছাতিমতলায়। এছাড়াও বিশ্বভারতীর প্রতিটি ভবনেও দেখা যায় দেশি-বিদেশি ফুল।
বাড়ির একচিলতে বাগান (Garden) হোক বা ছাদ, কমবেশি সকলেই ফুলের গাছ লাগাতে ভালোবাসেন। ঘরেও শোভা পায় নানা রঙিন ফুল। আর শীতকাল এলে তো কথাই নেই। গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, গ্যাজেনিয়া, প্যানজি, ইম্প্রেশন প্রভৃতি ফুলের চাদরে ঢেকে থাকে বাগান ও ছাদ। এছাড়াও এবছর সব্জির দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে বাড়ির ছাদে টবে বা থার্মোকলের পেটি অথবা বাগানে পালং, লঙ্কা, বেগুন, ধনেপাতা প্রভৃতি সব্জি চাষে মন দিয়েছেন অনেকে।
গুরুপল্লির বাসিন্দা পেশায় স্কুলশিক্ষিকা বৈশাখী সাঁতরা বলেন, বাড়ির সৌন্দর্যায়নের জন্য প্রতি বছরই বাগান করি। কিন্তু, এবার একটু বেশিই হচ্ছে। কারণ কোভিড পরিস্থিতির জন্য দীর্ঘদিন গৃহবন্দি। মালিও নেই। বেশি সময় পাওয়ায় বেশি ফুল ও সব্জি লাগিয়েছি বাগানে।
এক নার্সারির কর্মী গোবিন্দ মাঝি বলেন, করোনার কারণে এবছর ফুলের চারা বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। কিন্তু নভেম্বরের শুরু থেকেই প্রতিদিন যেভাবে ভিড় বাড়ছে তাতে এবছর লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা যায়। ফুলের চারা বিক্রির পাশাপাশি সব্জির বীজ, সার প্রভৃতির বিক্রি এবার বেড়েছে।
মন ভালো করতে ফুলের জুড়ি নেই। বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতিতে (Corona Situation) বহু মানুষ দীর্ঘসময় বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। তাই এবছর একটু বেশি করে চারাগাছ লাগানোর দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। নার্সারিতে চারাগাছ আসতেই ভিড় করেছেন বাগানপ্রেমী বাসিন্দারা। বেছে নিচ্ছেন নিজেদের পছন্দমতো গাছের চারা। আদর-যত্নে, লালন পালন করলে ঠিক সময় ফুটবে ফুল। এক বাসিন্দা বলেন, এক কাপ চা ও গল্পের বই হাতে বাগানের এক কোণে আরাম কেদারায় বসার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। তাছাড়া এবার শীতে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা হচ্ছে না। তাই অনেকের মন খারাপ। সেই মন খারাপের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পারে একমাত্র রঙিন ফুলই (Colorful Flowers)। তাই অনেকেই বলছেন, পৌষ মেলা হোক বা না হোক, এবার শান্তিনিকেতন হবে রঙিন।