দেশ বিভাগে ফিরে যান

বিরোধী ঐক্যে চিড়? রাষ্ট্রপতির কাছে গেল না তৃণমূল

December 10, 2020 | 3 min read

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন ইলানগোভান, সীতারাম ইয়েচুরি, শরদ পওয়ার, রাহুল গাঁধী এবং ডি রাজা ছবি কংগ্রেসের সৌজন্যে।

কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে তৈরি হওয়া বিরোধী ঐক্যে চিড় দেখা গেল আজ।

রাষ্ট্রপতির কাছে কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী-সহ (Rahul Gandhi) পাঁচ বিরোধী নেতা দেখা করে স্মারকলিপি জমা দিলেন। বাইরে এসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বললেন। কিন্তু ঘোষিত ভাবেই বিরোধীদের এই কর্মসূচি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের শীর্ষ সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, কংগ্রেস নেতৃত্ব, বাম দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরাই রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার ব্যাপারে প্রতিনিধি বেছে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে তৃণমূলকে কিছু জানানো হয়নি। 

তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েনের (Derek O’Brien) বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কৃষক নীতি কারও শংসাপত্রের ধার ধারে না। আমরা রাষ্ট্রপতি ভবনের গেটের বাইরে হাজিরা দিতে কৃষকদের জন্য জান কবুল করিনি।” দলীয়  সূত্রের খবর, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তিন দিন আগে রাষ্ট্রপতি ভবনের কর্মসূচি তৃণমূলের নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বা নির্দিষ্ট ভাবে প্রতিনিধিদলে তৃণমূলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কংগ্রেসের মতে, এটা তৃণমূলের ‘বাহানা’। আর সিপিএম নেতার মত, এই আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া ছেলেমানুষি। কারণ, এটি কোনও রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি নয়, কৃষকদের আন্দোলন।   

রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল দিল্লিতে কংগ্রেস এবং সিপিএমের পাশে দাঁড়িয়ে আর কোনও যৌথ কর্মসূচিতে যেতে চায় না। উল্টো দিকে রাহুল গাঁধীর কংগ্রেস আজ পাঁচ জনের প্রতিনিধি দলে তৃতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল তৃণমূলকে আমন্ত্রণ না-জানালেও সিপিএম এবং সিপিআই-কে সঙ্গে রেখেছেন। মিলিত ভাবে ধরলেও এই দু’টি বাম দলে সাংসদ সংখ্যা নগন্য।  তৃণমূল নেতৃত্ব, রাহুলের এই পদক্ষেপের মধ্যে রাজ্যে আসন্ন কংগ্রেস-বামে জোটের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন।        

কৃষকদের ডাকা ভারত বন্‌ধকে (Bharat Bandh) ২৪টি রাজনৈতিক দলকে প্রাথমিক ভাবে সমর্থন করেছিল। নীতিগত ভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন মমতাও। স্থির হয়, এই ২৪টি দলের তরফেই রাষ্ট্রপতির কাছে কৃষি আইন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। কোভিড নিষেধাজ্ঞার কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মাত্র পাঁচ জন দেখা করতে যাবেন, এটাও স্থির ছিল। গত কালই স্পষ্ট হয়ে যায়, সেই প্রতিনিধি দলে তৃণমূল নেই। থাকছে কংগ্রেস, এনসিপি, ডিএমকে, সিপিএম এবং সিপিআই। গত কাল বিষয়টি নিয়ে কোনও উষ্মা প্রকাশ না-করলেও আজ তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে তৃণমূল (Trinamool)। দলের এক নেতার কথায়, “যখন আমরা সংসদে এই কৃষি বিল পাশ করার সময় তীব্র বিরোধিতা করি, গোটা রাত ধর্না দিই, তখন শরদ পওয়ার কোথায় ছিলেন?”  বাম দলগুলির সংসদে সম্মিলিত সংখ্যা কত, এই প্রশ্নও তোলা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে।  

রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠছে, কৃষক আইন (Farm Laws) প্রত্যাহার নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গত্যাগ করে তাহলে কি এবার একলাই চলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?  নাকি টিআরএস, অকালির মতো অকংগ্রেসি দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে একটি সমান্তরাল জাতীয় জোট গঠনকে পাখির চোখ হিসেবে দেখছেন তিনি?  

আজ যে স্মারকলিপিটি রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে সেখানে অবশ্য সব দলের নাম দেওয়া হয়নি। সই করেছেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করা পাঁচ নেতাই। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘কুড়িটিরও বেশি রাজনৈতিক দল’ এই বিরোধিতায় সামিল। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, তৃণমূলের সঙ্গে না থাকার বিষয়টিকে উহ্য রাখা হয়েছে স্মারকলিপিতে।

লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর (Adhir Chowdhury) গোটা বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য, “তৃণমূল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে নির্ভেজাল পরোক্ষ আঁতাতের পথে চলে। বিভিন্ন বাহানা খাড়া করে সরাসরি বিরোধিতা থেকে সরে থাকে। এটা আজকের ঘটনা নয়। আসলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার ভয় রয়েছে তাদের। তাই কেন্দ্রকে নরমে-গরমে রাখতে চায়।“ সিপিএমের (CPM) পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসুর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। ২০১৪ সালে তিনি নিজেই কৃষি ক্ষেত্রে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ঢোকানো সংক্রান্ত বিল পাশ করিয়েছিলেন। গত চার-পাঁচ বছর ধরে কৃষিতে ধীরে ধীরে কর্পোরেটদের প্রবেশ করানো নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন আন্দোলন হয়েছে, মমতা তখন কোথায় ছিলেন? তা ছাড়া এই আন্দোলন কংগ্রেস (Congress) বা সিপিএমের নয়। কৃষকদের। ছেলেমানুষের মতো এখানে কংগ্রেস-সিপিএম নেতৃত্বের কথা তোলা হচ্ছে।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Farm Laws, #Trinamool Congress, #Congress, #CPM

আরো দেখুন