সরকারের ১০ বছরের কাজের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ তৃণমূলের
২০১১সালের ২০শে মে দুপুর ১.০১মিনিটে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রায় ১০ বছর অতিক্রম করেছে সেই সময় থেকে। এই সময়ে তাঁর নেতৃত্বে সরকার কী কাজ করেছে, এরই রিপোর্ট কার্ড পেশ করা হয় তৃণমূলের তরফে।
এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশের অনুষ্ঠানে হোস্টের ভূমিকায় ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। তিই বলেন, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ, কিছু প্রামাণ্য খতিয়ান তুলে ধরা হবে আজকের অনুষ্ঠানে। আগামীকাল থেকে বঙ্গধ্বনি যাত্রা শুরু হবে। এই রিপোর্ট কার্ড নিয়ে ২৯৪ কেন্দ্রে প্রতিটি গৃহস্থের পৌঁছে যাবেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
রিপোর্ট কার্ড – Report Card_Bengali (tmcreportcard.com)
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তুলে ধরেন শিক্ষা ক্ষেত্রের সাফল্যঃ-
শিক্ষা, ক্রীড়া, শিল্প এবং সংস্কৃতি খাতে বাংলার বাজেট প্রায় ৩ গুণ বেড়ে ২০১০-১১-র ১৩,৮৭২ কোটি থেকে ২০২০-২১এ বেড়ে ৩৭,০৫৯ কোটি হয়েছে।
কন্যাল্রী প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৭.২৯ লক্ষ যুবতীকে শিক্ষার প্রগতির জন্য ৬,৭২০ কোটি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সবুজ সাথী প্রকল্পের আওতায়, ৮৪ লক্ষ পড়ুয়াকে সাইকেল প্রদান করা হয়েছে।
৯২ লক্ষ পড়ুয়া পেয়েছে স্কুলের পোশাক এবং ১.১৩ কোটি পেয়েছে মিড-ডে মিল।
২০১০ সাল থেকে ৩০টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, ৫০টি নতুন কলেজ, ৭৮টি নতুন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৩৬টি নতুন পলিটেকনিক কলেজ এবং বিদ্যালয়গুলিতে ৯৫,৩৭৮টি নতুন ক্লাসরুম তৈরি হয়েছে।
সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে ধরেন তপশিলি জাতি ও উপজাতির উন্নয়নঃ-
বিগত ১০ বছরে, তপশিলি জাতি/উপজাতির জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির বাজেট ২ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বার্ষিক ২,০২৪ কোটির বেশি হয়েছে।
শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৯১.৮ লক্ষ তপশিলি জাতি/ উপজাতির পড়ুয়াকে শিক্ষার সাহায্যার্থে ৬৮৯ কোটি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
১,১৭৯ কোটি ব্যয় করে তপশিলি বন্ধু ও জয় জহার প্রকল্পের মাধ্যমে তপশিলি জাতি/ উপজাতির ১২ লক্ষের বেশি প্রবীণ নাগরিককে ১০০০টাকা মাসিক পেনশন প্রদান করা হয়েছে।
ভারতবর্ষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতি/উপজাতির উপর অপরাধের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কম (ভারতবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের স্থান তফসিলি জাতি-২৭, তফসিলি উপজাতি-২৪)।
এম.জি.এন.আর.ই.জি.এ (১০০ দিনের কাজ) প্রকল্পের আওতায় বিগত ১০ বছরে ২৪৯.৩ কোটি শ্রম দিবস তৈরি করে ১.৬৩ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য এবং নারী ক্ষমতায়ণ নিয়ে বলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যঃ-
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ক্ষেত্রে বাংলার বাজেট ৩ গুণেরও বেশি বেড়ে ২০১০র ৩,৪৪২ কোটি থেকে ২০২০-তে ১১,২৮৩ কোটি হয়েছে।
বিগত ১০ বছরে, সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫৮,৬৪৭ থেকে বেড়ে ৮৫৬২৭ (৪৬%) হয়েছে। ডাক্তারের সংখ্যা ৪৮০০ থেকে বেড়ে ১৫,৩৩৮ (২১৯%) এবং নার্সের সংখ্যা ৩৭,৩৬৬ থেকে বেড়ে ৫৬,৫৮৯ (৫১.৪%) হয়েছে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে এখনও অবধি ১.৪ কোটি পরিবারকে গ্রুপ স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা হয়েছে, যার পরিমাণ ৫ লক্ষ প্রতি বছর। এর মাধ্যমে প্রায় ১৩.২ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা হয়েছে যাতে ব্যয় হয়েছে ১,২৯১ কোটি।
২০১১ থেকে ২০১৮-র মধ্যে বাংলায় শিশু মৃত্যুর হার ৩২ থেকে কমে ২২(৩১%) এবং মাতৃ মৃত্যুর হার ১১৭ থেকে কমে ৯৮ (১৬%) হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক জন্মের হার গত ১০ বছরে ৬৮% থেকে বেড়ে ৯৮.৫% হয়েছে।
রুপশ্রী প্রকল্পের আওতায় ৬.৫ লক্ষ মহিলাকে ১.৬২৯ কোটি ব্যয় করে বিবাহের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চায়েতে মহিলাদের সংরক্ষণ বাড়িয়ে ৩৩% থেকে ৫০% করা হয়েছে। নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ২০০৮ সালের ২১,৩৫১ থেকে বেড়ে ৩০,১৫৭ হয়েছে।
৯০ লক্ষ গ্রামীণ মহিলাকে স্বনির্ভর করতে ২০১১ সাল থেকে এখনও অবধি ৬.৭ লক্ষেরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করে ৩৮,৯১৪ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে।
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন বিদ্যুৎ, সড়ক ও কৃষি নিয়েঃ-
বাংলায় ১০০% বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে প্রায় ৯৫.৩ লক্ষ নতুন পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মানুষ প্রতি বিদ্যুতের ব্যবহার ২০১০ সালের ৫৫০ কিলোওয়াট ঘন্টা থেকে ২০১৯ সালে ৭০৩ কিলোওয়াট ঘন্টা হয়েছে (৩০%)।
গত এক দশকে ১,১৮,১২৮ কিলোমিটার নতুন এবং উন্নততর গ্রামীণ সড়ক তৈরী করা হয়েছে।
কৃষি ও অনুসারি ক্ষেত্রে বাংলার বাজেট ২০১০-২০১১র ২২৭৪ কোটি থেকে প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২০২১এ ১০,৬৪৮ কোটি হয়েছে।
প্রথম ৫ বছরেই, কৃষক পরিবারের গড় আয় ৪৮:১৯২ থেকে বেড়ে ৭৮,৭০৮ (৬৩%) হয়েছে।
২০১৯ সাল অবধি, ৪৬.৯২ লক্ষ কৃষককে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে ২,৬৪২ কোটি আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের সামগ্রিক চাষযোগ্য জমির ৫৫.৩% সুনিশ্চিত জলসেচের আওতায়, যা গোটা ভারতবর্ষের গড় ২০.৪%-এর তুলনায় ২ গুণেরও বেশি।
বাংলায় আজ প্রায় ৮৯ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যবসায় ১:৩৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১২ সালে এই ব্যবসার সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪.৬ লক্ষ।
বাংলায় কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১০-র ৮১৩২২ থেকে ২০২০-তে ৯,৫৩৪ (১৫%) হয়েছে, যার মাধ্যমে কারখানার শ্রমিকের গড় উপার্জন ১.৩ লক্ষ থেকে বেড়ে ২.৩ লক্ষ (৭৭%) হয়েছে।
ফিরহাদ হাকিম বলেন শ্রমিকদের কথাঃ-
সামাজিক সুরক্ষা যোজনার আওতায় ১,৮৩৪.৬২ কোটি ব্যয় করে ১.২৯ কোটি অসংগঠিত শ্রমিককে প্রতি বছর ৬০,০০০ অবধি চিকিৎসার সুবিধা এবং ২ লক্ষ টাকা দুর্ঘটনা বীমা দেওয়া হয়।
প্রায় ১৭.৩ লক্ষ প্রবীণ নাগরিক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী মানুষকে ১০,৯৩৯ কোটি ব্যয় করে ২০১১-১২ থেকে নভেম্বর ২০২০ অবধি মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, আবাস ও নির্মল বাংলা এবং খাদ্য সাথীর সাফল্যের কথাঃ-
বাংলা আবাস যোজনার মাধ্যমে ৩৯,০০৯ কোটি ব্যয় করে গ্রামীণ পরিবারগুলির জন্য ৩৩.৭ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।
নির্মল বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ৮২.৬ লক্ষ শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে, যার ফলে বাংলার প্রতিটি ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েত আজ প্রকাশ্য শৌচকর্ম মুক্ত।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে ৯.৫ কোটি মানুষের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৮.২ কোটি মানুষ প্রতিমাসে ভর্তুকিযুক্ত ২কিলো ভুমি চাল ও তিন কিলো গম পাচ্ছেন।