বাংলার ‘কলঙ্কহীন’ বাগদা যাবে জাপানে
গায়ে সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ। খোসার নীচে সুস্বাদু তুলতুলে মাংস। ঘিলুভরা ছোট্ট মাথা। যাঁরা একবার এই বাগদা চিংড়ি (Bagda Shrimp) চেখে দেখেছেন, তাঁদের আর মাথা সর্বস্ব গলদাতে স্বাদ মেটে না! সে দেশেই হোক কিংবা বিদেশে। বাংলার বাগদার কদর সর্বত্রই। আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপ—সবারই এখন মন মজেছে বঙ্গের ‘কলঙ্কহীন’ বাগদায়।
তবে, খাবারদাবারের ব্যাপারে আমেরিকা ও ইউরোপের ছুৎমার্গ কম নয়। চিংড়ির গায়ে অ্যান্টিবায়োটিক থাকার জুজুতে ভয় পাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছে জাপান। তারা জানিয়েছে, ভারতীয় বাগদা চিংড়িকে তারা চোখ বুজে বিশ্বাস করবে। অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক যাচাই না করেই তারা বাগদা আমদানি করবে। তাদের এই সিদ্ধান্তে খুশি বাংলার মৎস্যজীবীরা। কারণ, আমেরিকার পর ভারতীয় চিংড়ির সবচেয়ে বড় বাজার জাপান। পাশাপাশি এদেশ থেকে যত বাগদা সে দেশে যায়, তার সিংহভাগই চাষ হয় এ রাজ্যে। জাপানের এই মনোভাবে লক্ষ্মীলাভের দিশা পাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।
এখন প্রশ্ন হল, কেন ভারতের বাগদাকে অন্ধবিশ্বাস করছে জাপান? এদেশ যাওয়া চিংড়ির প্রতিটি কন্টেনারই পরীক্ষা করে দেখে সে দেশ। খুঁটিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের সুলুকসন্ধান করে তারা। কিন্তু ২০১২ সালের পর থেকে একটি কন্টেনারেও তারা বাগদার গায়ে অ্যান্টিবায়োটিকের হদিশ পায়নি। এতে বেশ সন্তুষ্ট তারা। চলতি বছরের মার্চ মাসে জাপানের একটি প্রতিনিধিদল এ রাজ্যে আসে। তার সদস্যরা উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি ভেড়িতে বাগদা চিংড়ির চাষ ঘুরে দেখেন। মৎস্যজীবী এবং রপ্তানিকারক সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। তাতেও তাঁরা সন্তোষপ্রকাশ করেন। এর পরই জাপান জানিয়ে দেয়, ১০০ শতাংশ নয়, ৩০ শতাংশ কন্টেনার পরীক্ষা করেই তারা বাগদা কিনবে। এক্ষেত্রেও অনেকটাই আশার আলো দেখেন মৎস্যজীবীরা। কারণ, বাগদাভর্তি একটি কন্টেনার বাতিল হলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।
সম্প্রতি জাপান আরও জানিয়েছে, তারা ওই ৩০ শতাংশ কন্টেনারও আর পরীক্ষা করবে না। অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা তারা আর চালাবে না ভারতীয় বাগদা চিংড়ির উপর। এদেশ থেকে যা পাঠানো হবে, তাই-ই তারা গ্রহণ করবে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের আওতায় থাকা মেরিন প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির আঞ্চলিক কর্তা অর্চিমান লাহিড়ির কথায়, ‘এদেশ থেকে যত বাগদা চিংড়ি জাপানে রপ্তানি করা হয়, তার জোগান আসে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং অন্ধ্রপ্রদেশের একটি অংশ থেকে। তবে সবচেয়ে বেশি বাগদা যায় এ রাজ্য থেকেই। তাই আমাদের আশা, এখানকার মৎস্যজীবী এবং এক্সপোর্ট সংস্থাগুলি আরও উৎসাহিত হবে বাগদা চাষ ও বিক্রিতে। জাপানের এই সিদ্ধান্তে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’
পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) বাগদা চাষ হয় মূলত দুই ২৪ পরগনায়। হিসেব বলছে, প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেই চাষ করেন কয়েক হাজার মৎস্যজীবী। তাঁদের হাত ধরেই গত অর্থবর্ষে জাপান থেকে ৩৯৪ লক্ষ মার্কিন ডলার আয় করেছে ভারত। এখন বেশি লাভের আশায় এ রাজ্যের মৎস্যজীবীরা মেতেছেন ভেনামি চিংড়ি চাষে। কারণ, এর ফলন বাগদার চেয়ে বেশি। দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই গত কয়েক বছর ধরে অন্যান্য জেলাগুলিতে বাগদা চাষে আগ্রহ হারিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। এবার জাপানের (Japan) সদর্থক মনোভাবে ফের আশার আলো দেখছেন তাঁরা।